লুকোনো ক্যামেরা গুনছে বাঘের সংখ্যা
ব্যাঘ্রকুলে কি সংখ্যাবৃদ্ধি হল?
দু’বছর আগে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকায় বাঘসুমারির পরে বন দফতর ও ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ড (ডব্লিউ ডব্লিউ এফ) জানিয়েছিল, বাদাবনে অন্তত ১০২টি বাঘ রয়েছে। সংখ্যার তারতম্য হল কি না জানতে জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ফের নজরদারি (মনিটরিং) শুরু করল তারা। তাদের সঙ্গে বন দফতরের কর্মীরাও।
সুন্দরবনে বাঘের ঠিকানা দু’ভাবে নির্দিষ্ট করেছে বন বিভাগ। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের এলাকায় অধিকাংশ বাঘের বসবাস। অল্প কিছু ‘দক্ষিণরায়’ অবশ্য দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগনার তিনটি রেঞ্জ নিয়ে বন দফতরের যে ডিভিশন, সেখানে ঘর সংসার করে বলে খবর। দু’বছর পরে বাঘের উপরে নজরদারিটা সেই বিভাগের রামগঙ্গা রেঞ্জ থেকেই শুরু হল। ইতিমধ্যেই ক্যামেরা বসানোর কাজ সারা, জানাচ্ছে ডব্লুডব্লুএফ।
গাছে ক্যামেরা বসিয়ে বাঘ-সুমারির চেষ্টা করছে বন দফতর ও ডব্লিউ ডব্লিউ এফ।
বছর কয়েক আগেও সুন্দরবনে বাঘ গুনতে বনকর্মীদের ভরসা ছিল নদীর পাড়ে কাদায় পায়ের ছাপ। গাছের গায়ে নখের আঁচড় বা এলাকা নির্দিষ্ট করতে ছড়িয়ে দেওয়া বাঘের ‘ফেরোমেন’ বা ‘স্ক্যাটস’ পরীক্ষা করে বাঘ-গুনতির চেষ্টা করা হয়েছিল বার কয়েক। তবে কোনও ক্ষেত্রেই হিসেব যে একেবারে নিখুঁত তা নিশ্চিত করে দাবি করতে পারেননি বনকর্তারা।
দু’বছর আগে জঙ্গলের গভীরে গাছে ক্যামেরা বেঁধে সুমারি শুরু করে ডব্লুডব্লুএফ। চামটা থেকে গোসাবা, বিস্তীর্ণ ম্যানগ্রোভের জঙ্গলে দু’শোরও বেশি লুকোনো ক্যামেরায় প্রাথমিক ভাবে তোলা হয়েছে বাঘের ছবি। তাদের গায়ের ডোরা দাগের পার্থক্য খতিয়ে দেখে সুন্দরবনে সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান দিয়েছিল ডব্লুডব্লুএফ এবং ডব্লুআইআই (ওয়াইল্ড লাইফ ইন্সটিটিউট অফ ইন্ডিয়া)। ওই দুই সংস্থার বাঘসুমারি অনুযায়ী সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা অন্তত ১০২। যদিও তার আগে, ২০১০ সালের সুমারির পরে বন দফতর দাবি করেছিল, সুন্দরবনে বাঘ আছে ২৭৪টি। ছবি তুলে নয়, সে বারে গুনতি হয় সাবেক পদ্ধতিতে। বাদাবনে বাঘের পায়ের ছাপ এবং তাদের বিষ্ঠা সংগ্রহের পরে হায়দরাবাদের গবেষণাগারে পরীক্ষা করে ওই দাবি করা হয়েছিল।
ডব্লুডব্লুএফ-এর পক্ষে অনুরাগ দণ্ড জানান, আগের থেকে সংখ্য্যা বাড়ল না কমল তা জানতেই নজরদারি শুরু হয়েছে। প্রথমে রামগঙ্গা রেঞ্জে ৩০টি জায়গায় ‘কাড ব্যাক’ ক্যামেরা বসানো হয়েছে। জানুয়ারির শেষে সেগুলিতে কী ছবি ধরা পড়ল, তা দেখে বোঝা যাবে ওই রেঞ্জে কতগুলি বাঘ রয়েছে। তার পরে রায়দিঘি ও মাতলা রেঞ্জে ক্যামেরা বসানো হবে।
যে পদ্ধতিই নেওয়া হোক, নিখুঁত ভাবে বাঘের মাথা গোনা কি সম্ভব?
ডব্লুডব্লুএফ-এর কর্তারাও তা নিয়ে নিশ্চিত নন। অনুরাগবাবু জানান, গত বার সুন্দরবনের ১৯০টি জায়গায় ক্যামেরা বসিয়ে ৮৫০টি ছবির মধ্যে থেকে নিশ্চিত ভাবে ৮১টি বাঘকে শনাক্ত করা গিয়েছিল। একই ভাবে, ডব্লুআইআই ৪১১টি ছবি থেকে ২২টি বাঘের সন্ধান পেয়েছিল। তবে এটাই যে সঠিক সংখ্যা, তা নাও হতে পারে। বাঘমামা-মামীদের সকলেই ক্যামেরার সামনে এসে পোজ দিয়েছেন, এমনটা না-ও হতে পারে। তা হলে নির্দিষ্ট সংখ্যা দাবি করার ভিত্তি কী?
দেশের পরিচিত পরিবেশবিদ ইন্দ্রজিৎ সাংখালার দাবি, “ক্যামেরায় ছবি তুলে কোনও পশুর সংখ্যা যাচাই করতে গেলে কয়েকটি ব্যাপারে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। দেহের একটা বিশেষ অংশের ছবি পর্যালোচনা করেই একটির সঙ্গে অন্যটির তফাত করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে বাঘের দেহের একটি নির্দিষ্ট অংশের ছবি, যেমন মাথা বা পিঠের ডোরা দাগ পর্যালোচনা করেই কি সংখ্যাটা পাওয়া যাচ্ছে? এর উত্তর জানাটা খুবই জরুরি।”
ডব্লুডব্লুএফ সূত্রে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, প্রতিটি বাঘের আড়াআড়ি ছবি নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। গলা থেকে কোমরের অংশের (ফ্ল্যাঙ্ক) ডোরা বিশ্লেষণ করে প্রাথমিক গুনতি করা হচ্ছে। তবে খুব কাছ থেকে ছবি না পেলে ওই বিশ্লেষণ যে সম্ভব নয়, তা মেনে নিয়েছেন ডব্লুআইআই-এর এক বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, “এই সংখ্যাটা যে একেবারে নির্ভুল, তা দাবি করা যায় না। কারণ বহু ছবিই বেশ অস্পষ্ট। সেগুলিকে বিশ্লেষণ করে কতটা সাফল্য পাওয়া সম্ভব তা নিয়ে একটা প্রশ্ন অবশ্য থেকেই যাচ্ছে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.