সম্প্রতি বাতাসের এই অ্যাসিড বাষ্প বিষয়েই রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের দ্বারস্থ হয়েছেন মধ্যমগ্রাম পুরসভার গঙ্গানগর-কাটাখাল এলাকার বাসিন্দারা। বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে পর্ষদও।
গঙ্গানগর-কাটাখালের বাসিন্দারা জানান, ওই এলাকায় একটি গ্যালভানাইজিং (ধাতু প্রলেপ) কারখানা রয়েছে। সেখান থেকেই ছড়াচ্ছে অ্যাসিড বাষ্প। যার জেরে এলাকার বৃদ্ধ বাসিন্দাদের শরীরে নানা উপসর্গ দেখা যাচ্ছে বলেও অভিযোগ। ফুসফুসের চিকিৎসক (পালমোনোলজিস্ট) ধীমান গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “যে কোনও ধোঁয়াই ফুসফসের পক্ষে ক্ষতিকারক। অ্যাসিডের ধোঁয়াও তার ব্যতিক্রম নয়।”
কী ভাবে শরীরে প্রভাব ফেলে অ্যাসিড বাষ্প? তা শ্বাসনালী ও ফুসফুসে ঢুকে জল শুষে নেয়। ক্ষয়ে যায় ভিতরের কোষ। তার ফলে শ্বাসনালীতে অতিরিক্ত শ্লেষ্মাক্ষরণ হতে থাকে। অনেক সময়েই এর ফলে শ্বাসনালী রুদ্ধ হয়ে পড়ে। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরবিদ্যা বিভাগের প্রধান দেবাশিস সেন বলেন, “অ্যাসিড বাষ্প থেকে শ্বাসকষ্টজনিত রোগ হতে পারে। ফুসফুসের কর্মক্ষমতাও কমে যেতে পারে।”
বাতাসে অ্যাসিড বাষ্প নাগাড়ে জমছে। তা থেকেই অ্যাসিড বৃষ্টিও হয়। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন মুখ্য
আইন অফিসার বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলছেন, “এই বৃষ্টি গাছপালার তো ক্ষতি করেই, মাটির উর্বরতাও নষ্ট করে। ভিক্টোরিয়া-তাজমহলের মার্বেলেও এর প্রভাব পড়েছে।”
পরিবেশ দফতর সূত্রের খবর, ধাতব প্রলেপ কারখানা বিশেষ বিপজ্জনক ক্যাটেগরির (পরিবেশের পক্ষে অত্যন্ত স্পর্শকাতর) অন্তর্ভুক্ত। কলকাতা মেট্রোপলিটন এলাকায় এই ধরনের কারখানা করার অনুমতি দেওয়া হয় না। কিন্তু এই নিয়ম লাগু হওয়ার আগেই মেট্রোপলিটন এলাকায় কারখানা তৈরি হলে সেগুলিকে বিশেষ নিয়ম মেনে চলতে হয়। বিশ্বজিৎবাবু বলছেন, “নিয়ম না মানায় অনেক কারখানা বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।”
ঘটনাচক্রে, গঙ্গানগরের কারখানাটির বিরুদ্ধে এর আগেও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কাছে অভিযোগ জমা পড়েছিল। তখন কারখানাটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পর্ষদ সূত্রের খবর, পরে কারখানাটি দূষণ-রোধী ব্যবস্থা নেওয়ায় ফের তা চালু করার অনুমতি মিলেছে। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, সেই নিয়ম মানা হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান বিনয় দত্ত বলেন, “আমরা পরিদর্শনের সময় নিয়ম ভাঙার প্রমাণ পাইনি। কিন্তু অভিযোগ যখন এসেছে, তখন ফের খতিয়ে দেখা হবে।” নিয়ম মানার কথা জানিয়েছে ধাতব প্রলেপ দেওয়ার সংস্থাটিও। তাদের জেনারেল ম্যানেজার গৌতম চক্রবর্তীর অবশ্য দাবি, “নিয়ম মেনেই কারখানা চালাচ্ছি। পর্ষদের পাশাপাশি আমরাও দূষণ নিয়ন্ত্রণের দিকে নজর রাখি।” |