মেদিনীপুর শহরে একটি চিড়িয়াখানা রয়েছে। কয়েক বছর আগে পর্যন্ত সেখানে ভিড়ও জমত ভাল। বিশেষ করে শহর ও সংলগ্ন এলাকার কচিকাঁচারা এই চিড়িয়াখানায় ভিড় করত। কিন্তু এখন আর বিশেষ পশু-পাখি নেই। আগে দু’টি ময়ূর ছিল। সেগুলি মারা যাওয়ার পরে নতুন করে আর ময়ূরও আনা হয়নি। খাঁচা খালি পড়ে আছে। এখন আছে বলতে কিছু পাখি, রাজহাঁস, শেয়াল, গিনিপিক, পায়রা, খরগোশ। কিন্তু সে সব দেখতে ক’জন আর চিড়িয়াখানায় আসে! তাছাড়া টিকিটের দামও বেড়ে দ্বিগুণ বেড়েছে। ফলে, শীতের মরসুমেও ভিড় নেই মেদিনীপুর শহরের অরবিন্দ শিশু উদ্যান সংলগ্ন চিড়িয়াখানায়।
এই পার্ক ও চিড়িয়াখানার দেখভাল করে জেলা প্রশাসন। সমস্যা মানছে তারাও। তবে তাদের বক্তব্য, আলাদা করে অর্থ বরাদ্দ না হলে নতুন পশু-পাখি এনে দেখভাল করা সম্ভব নয়। শিশু উদ্যান এবং চিড়িয়াখানার পরিচালন কমিটির সম্পাদক তথা মেদিনীপুরের (সদর) মহকুমাশাসক অমিতাভ দত্তের আশ্বাস, “অর্থ সাহায্য এলে উদ্যানটি নতুন করে সাজানো হবে।” আর মেদিনীপুর-খড়্গপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান মৃগেন মাইতির আশ্বাস, “সাহায্যের আবেদন করা হলে সব রকম চেষ্টা করব।” |
খরগোশ দেখেই সাধ মেটাচ্ছে খুদেরা। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
মেদিনীপুর শহরের মধ্যে মাত্র দু’টি পার্ক রয়েছে। একটি অরবিন্দ শিশু উদ্যান ও সংলগ্ন চিড়িয়াখানা। অন্যটি পুলিশ লাইন পার্ক। শহরের আশপাশে অবশ্য আরও দু’টি পার্ক রয়েছে। তবে চিড়িয়াখানা এই একটিই। এক সময়ে এখানে প্রচুর মানুষ আসতেন। শহরের আশপাশ থেকেও অনেকে আসতেন। বিকেল হলেই ভিড় জমত। বাবা-মায়ের হাত ধরে আসত কচিকাঁচারা। এখনও কিছু লোক আসেন। তবে ভিড়টা আগের থেকে অনেক পাতলা হয়েছে। শহরতলির পার্কগুলোকে সাজাতে নতুন নতুন পরিকল্পনা করছে বন দফতর। কিন্তু জেলার সদর শহরের এই একমাত্র শিশু উদ্যান ও চিড়িয়াখানাকে ঢেলে সাজার কোনও উদ্যোগ নেই। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, এ ক্ষেত্রে অর্থের অভাবই সমস্যা। পার্ক ও চিড়িয়াখানার জন্য আলাদা করে কোনও অর্থ বরাদ্দ হয় না। টিকিট বিক্রির টাকাতেই কর্মচারীদের মাইনে থেকে শুরু করে পশু-পাখির দেখভাল, পার্কের রক্ষণাবেক্ষণ, সব করতে হয়।
পরিস্থিতি দেখে টিকিটের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। আগে ৩ থেকে ৯ বছরের বাচ্চাদের জন্য টিকিটের দাম ছিল ১ টাকা। চলতি জানুয়ারি থেকে তা বেড়ে হয়েছে ২ টাকা। আগে ৯ বছরের উর্ধ্বে টিকিটের মূল্য ছিল ৪ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৮ টাকা। ১ থেকে ৩ বছরের শিশুদের কোনও টিকিট লাগে না। পার্কে যাঁরা আসেন, তাঁরাও মানছেন টিকিটের এই মূল্যবৃদ্ধি জরুরি ছিল। তবে তাঁদের বক্তব্য, পার্কের হাল ফেরাতে নতুন পশু-পাখি এনে সাজানো দরকার। শহরের বাসিন্দা কৃষ্ণা রায়, সবিতা দাসদের কথায়, “ওই পার্কের পরিবেশ খুব ভাল। চারদিক ঘেরা রয়েছে। তাই অনেকেই পার্কে যান। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা চিড়িয়াখানায় গিয়ে পশু-পাখি দেখে মজাও পায়। নতুন পশু-পাখি এনে সাজানো হলে পার্কে আবার আগের মতোই ভিড় হবে।”
অরবিন্দ শিশু উদ্যান এবং চিড়িয়াখানার উদ্বোধন হয়েছিল ১৯৭৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি। উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়। এই পার্কে অ্যাকেয়ারিয়ামও আছে। বিভিন্ন পার্কে এখন বোটিংয়ের ব্যবস্থা হয়েছে। কিন্তু এখানে তেমন কোনও ব্যবস্থা নেই। অনেকের মতে, বোটিং চালু হলে আয় বাড়তে পারে। পার্ক ও চিড়িয়াখানার পরিদর্শক সুব্রত সরকার বলছিলেন, “নতুন পশু-পাখি আনা যায়। তার দেখভাল করবে কে? খরচ কোত্থেকে আসবে? তবে পার্ক কী ভাবে আরও সাজানো যায়, তা দেখা হচ্ছে।” তবে ভিড় যে আগের তুলনায় কমেছে, তা মানছেন সুব্রতবাবু। এ ক্ষেত্রে তাঁর যুক্তি, “টিকিটের মূল্যবৃদ্ধির পর ভিড় কিছুটা কমেছে। তা ছাড়া, এখন বিভিন্ন এলাকায় মেলা চলছে। পাড়ায় পাড়ায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে। তাই হয়তো লোকজন কম আসছেন।” |
কারখানা থেকে দূষণ, স্মারকলিপি |
প্লাস্টিকের কারখানার জন্য এলাকার পরিবেশ বিষিয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ তুললেন বাসিন্দারা। সোমবার মাটিগাড়ার পাথরঘাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের বনিয়াখাড়ি মৌজায় ওই কারখানা বন্ধ করা বা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার দাবিতে মহকুমাশাসকের দফতরে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। বাসিন্দাদের নিয়ে তৃণমূল নেতা বেদব্রত দত্ত, দীপক শীলরা মহকুমাশাসকের দফতরে যান এদিন। তাঁদের অভিযোগ, প্লাস্টিকের কারখানার জন্য দুর্গন্ধে এলাকার পরিবেশ বিষিয়ে উঠেছে। বাসিন্দারা মাঝেমধ্যেই সমস্যার কথা কারখানার মালিককে জানান। কারখানার মালিক গোবিন অগ্রবাল বলেন, “পরিবেশ দফতরের ছাড়পত্র নিয়ে নিয়ম মেনেই কারখানা করা হয়েছে। কিছু বাসিন্দাদের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে উদ্দেশ্যেপ্রণোদিতভাবে অভিযোগ তুলছেন।” |