দলের নেতাকে মোটরবাইকে করে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার পথে গুলিতে জখম হলেন এক সক্রিয় তৃণমূল কর্মী। রবিবার রাতে তারকেশ্বরের চাঁপাডাঙা পঞ্চায়েত অফিসের সামনে ওই ঘটনায় জখম তৃণমূল কর্মী মানোয়ার আলিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কলকাতার মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়। রাতেই অস্ত্রোপচার করে তাঁর ডান কাঁধ থেকে গুলি বের করা হয় বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। |
চলছে নিরাপত্তা রক্ষীদের টহল। ছবি: দীপঙ্কর দে। |
এই ঘটনায় ওই এলাকায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বই ফের প্রকাশ্যে এসেছে বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ। কেননা, মানোয়ারের পরিবারের তরফে চাঁপাডাঙা কলেজের তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতা মহারাজ নাগ এবং ওই দলের পাঁচ কর্মীর বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের হয় থানায়। পুলিশ জানায়, অভিযুক্তেরা পলাতক। তাঁদের খোঁজ চলছে। তৃণমূলের হুগলি জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত দলীয় কর্মীর গুলিবিদ্ধ হওয়ার প্রসঙ্গে বলেন, “দলের কেউ ওই ঘটনায় জড়িত থাকলেও আইন আইনের পথে চলবে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আমি মঙ্গলবার তারকেশ্বর যাব।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ দলের চাঁপাডাঙা অঞ্চল যুব সভাপতি তথা চাঁপাডাঙ্গা পঞ্চায়েতের সদস্য প্রভাত চট্টোপাধ্যায় ওরফে লাল্টুকে পিছনে বসিয়ে বাইক চালিয়ে আসছিলেন স্থানীয় মুসলিমপাড়ার বাসিন্দা মানোয়ার। প্রভাতের বাড়ি পঞ্চায়েত অফিসের কাছেই। সেখানে পৌঁছতেই ওই ঘটনা। গুলি লাগার পরে মানোয়ার একটু এগিয়েই বাইকের নিয়ন্ত্রণ হারান। মানোয়ারের সঙ্গে রাস্তায় পড়ে যান প্রভাতও। গুলির শব্দে আর প্রভাতদের চেঁচামেচিতে লোকজন চলে এলে দুষ্কৃতীরা পালায়।
প্রভাতের অভিযোগ, “রাস্তার ধারে চাদর জড়িয়ে তিন-চার জনকে নিয়ে দাঁড়িয়েছিল মহারাজ। ওরা এলাকায় নানা দুষ্কর্ম করে। কলেজে হামলা, তোলা আদায় কিছুই বাদ রাখে না। আমি প্রতিবাদ করতাম। সেই কারণে ওরা আমাকেই খুন করতে চেয়েছিল। ওদের দেখে মানোয়ারকে আমি বাইকের গতি বাড়াতে বলি। ওরা গুলি চালাতেই মাথা নামিয়ে দিই। গুলি লাগে মানোয়ারের গায়ে।” পুলিশ জানায়, মহারাজের বিরুদ্ধে কলেজে গোলমালে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর, অভিযুক্ত মহারাজ নাগ পুড়শুড়ার তৃণমূল বিধায়ক পারভেজ রহমানের অনুগামী বলে পরিচিত। অন্য দিকে, জখম মানোয়ার আলি দলেরই তারকেশ্বরের বিধায়ক তথা মন্ত্রী রচপাল সিংহের অনুগামী হিসেবে পরিচিত। সম্প্রতি চাঁপাডাঙা কলেজের পরিচালন সমিতির সরকারি প্রতিনিধি কে হবেন, তা নিয়ে দুই নেতার অনুগামীদের মধ্যে গোলমাল হয়। আগামী ২৮ জানুয়ারি কলেজের ছাত্র সংসদের ভোট। তাকে কেন্দ্র করেই দুই নেতার অনুগামীদের বিবাদের জেরে ওই তৃণমূল কর্মী গুলিবিদ্ধ হন বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।
গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এই ঘটনা কিনা, তা নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি রচপাল। তাঁর দাবি, “মহারাজ দুষ্কৃতী। দলবল নিয়ে অশান্তি করছে। দলের নেতাকর্মীদের উপর গুলি চালাচ্ছে। পুলিশকে কড়া হতে বলেছি।” পারভেজের দাবি, “তারকেশ্বরের সঙ্গে আমার কোনও যোগাযোগ নেই। কে গুলি করেছে, কাকে করেছে কিছুই খবর নেই আমার কাছে।”
|