সেবার ব্রত নিয়ে আশ্রমের নতুন চক্ষু হাসপাতাল দক্ষিণে
রিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ব্রতের কথা বলেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। আর সেই ব্রতকে পাথেয় করেই এগিয়ে চলেছে হলদিয়ার চৈতন্যপুরের বিবেকানন্দ মিশন আশ্রম। গ্রামের মানুষের কাছে চিকিত্‌সা পরিষেবা পৌঁছে দিতে এ বার দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুর-১ ব্লকের চণ্ডী গ্রামে ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে ২৮ বিঘা জমিতে তাদের উদ্যোগে গড়ে উঠছে অত্যাধুনিক চক্ষু হাসপাতাল। চলছে একটি স্কুল তৈরির কাজও।
বিবেকানন্দ মিশন আশ্রমের সমীক্ষা অনুযায়ী, এই জেলার ১.১৯ শতাংশ মানুষ অন্ধত্ব জনিত সমস্যায় ভোগেন। অর্থাত্‌ জেলার মোট জনসংখ্যার (৮১ লক্ষ ৫৩ হাজার ১৭৬) মধ্যে প্রায় ১ লক্ষ মানুষের চোখের বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। আশ্রমের নেত্র নিরাময় নিকেতনের বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বামী বিবেকাত্মানন্দ বলেন, “দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বিস্তীর্ণ অংশের মানুষ এখনও স্বাস্থ্য সচেতন নন। তাঁদের চিকিত্‌সার পাশাপাশি স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানোও আমাদের অন্যতম লক্ষ্য।” তিনি জানান, চৈতন্যপুর নেত্র নিরাময় নিকেতনে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ শতাংশ রোগী সুন্দরবন এলাকা থেকে আসেন। চিকিত্‌সার জন্য তাঁদের আসতে ছ’ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে। চিকিত্‌সা করিয়ে ফের সেই দিনই বাড়ি ফিরে যাওয়া রোগীদের পক্ষে কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। ওই সমস্ত মানুষদের কাছে সরাসরি পৌঁছতেই এই উদ্যোগ। নতুন হাসপাতালটি চালু হলে মেডিক্যাল টিম গ্রামের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাবে। অস্ত্রপচারের জন্য তাঁদের মিশনের অ্যাম্বুলান্সে করে হাসপাতালে নিয়ে আসার ব্যবস্থাও থাকবে। তাছাড়াও গোসাবা, বাসন্তী, ক্যানিং-১ ও জয়নগর-১ এ চারটি স্থায়ী প্রাথমিক চিকিত্‌সা কেন্দ্রও (ভিশান সেন্টার) খোলা হচ্ছে।
নতুন ভবনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।—নিজস্ব চিত্র।
১৯৯৫ সালে আশ্রমের উদ্যোগে চালু হয় চৈতন্যপুর নেত্র নিরাময় নিকেতন। তার পর থেকে এখনও পর্যন্ত নিকেতনের বহির্বিভাগে সাড়ে ১৩ লক্ষ রোগী, ভ্রাম্যমান চিকিত্‌সা পরিষেবার মাধ্যমে ৪ লক্ষ ৯২ হাজার জনের চক্ষু প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। আই ব্যাঙ্কের মাধ্যমে চক্ষু প্রতিস্থাপন হয়েছে ২২২ জনের। অস্ত্রোপচার হয়েছে ১ লক্ষ ৮৮ হাজার ৯৬৭ জনের। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও পড়শি রাজ্য ওড়িশা, বিহার ও ঝাড়খণ্ডের মানুষও এখানে এসে চিকিত্‌সা করান। সর্বশিক্ষা মিশনের মাধ্যমে রাজ্যের দশটি জেলার ছাত্রছাত্রীদের চক্ষু চিকিত্‌সাও করা হয় এখানে। চোখের যত্ন নিতে মানুষকে আরও সচেতন করতে বিভিন্ন আবাসিক শিবিরের আয়োজনও করা হচ্ছে।
মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী বিশ্বনাথানন্দ বলেন, “আমাদের লক্ষ্য আরও বেশি মানুষের কাছে চিকিত্‌সা পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া। আমাদের কাছে বিভিন্ন জেলার মানুষ আর একটি চক্ষু হাসপাতাল খোলার আবেদন করতেন। সরকারি আর্থিক সাহায্য ছাড়াই দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষের কাছ থেকে আমরা আর্থিক ও অন্য সাহায্য পেয়েছি। তাই আমরা এই লক্ষে পৌঁছতে পেরেছি।” তিনি জানান, তিনতলা এই অত্যাধুনিক চক্ষু হাসপাতালে প্রতিদিন ৬০০ জন রোগী দেখার জন্য তিনটি পৃথক বহির্বিভাগ থাকছে। সেখানে ২০০জনের বিনামূল্যে চিকিত্‌সা হবে। বাকিদেরও স্বল্পমূল্যে চিকিত্‌সার ব্যবস্থা থাকছে। হাসপাতালের একতলায় বহির্বিভাগ ছাড়াও চক্ষু চিকিত্‌সার বিশেষ পরীক্ষাগার, চক্ষু সংগ্রহ কেন্দ্র, লো-ভিশন ক্লিনিক, প্যাথলজি বিভাগ এবং চশমা ও ওষুধের কাউন্টার থাকছে। হাসপাতালের দোতলায় পাঁচটি অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটারও থাকছে। তিনতলায় প্যারামেডিক্যাল কর্মীদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মেডিক্যাল লাইব্রেরি, সেমিনার হল গড়ে তোলা হবে। দূর থেকে আসা রোগীদের জন্য হাসপাতালের বাইরে যাত্রী নিবাস তৈরি করা হচ্ছে। প্রথামিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত একটি স্কুলও খোলা হচ্ছে। আগামী ২৭ জানুয়ারি থেকে হাসপাতালের বহির্বিভাগ চালু হবে। গত ২৮ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে ভ্রাম্যমান চিকিত্‌সা পরিষেবা। আগামী মার্চ মাসে হাসপাতাল উদ্বোধনের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান আশ্রম কর্তৃপক্ষ।
চৈতন্যপুর নেত্র নিরাময় নিকেতনে ১৮ বছর ধরে যুক্ত রয়েছেন চিকিত্‌সক তথা মেডিক্যাল ডাইরেক্টর অসীমকুমার শীল। তিনি বলেন, “দক্ষিণ ২৪ পরগনার গ্রামীণ এলাকায় চক্ষু চিকিত্‌সার কোনও সুযোগ নেই বললেই চলে। তাছাড়া চক্ষু চিকিত্‌সার পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রেও অনেক ঘাটতি রয়েছে। তাই সাধারণ মানুষ চিকিত্‌সা কেন্দ্রে আসেন না। অন্ধত্ব দূরীকরণে অগ্রগতি আনতে গেলে চক্ষু চিকিত্‌সার বিষয়ে সবাইকে সচেতন করার পাশাপাশি তাঁদের কাছে সঠিক পরিষেবা পৌঁছে দেওয়াটাও জরুরি। সেই লক্ষেই আমাদের এই উদ্যোগ।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.