মেশিন আছে, টেবিল নেই। তাই চালু হল না অস্ত্রোপচার।
কোমরের হাড়ভাঙা রোগীদের অস্ত্রোপচার হচ্ছে না খোদ বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রোগী স্থানান্তর করার ঘটনা কমানোর নির্দেশ দিলেও, ওই ধরনের রোগীদের চিকিত্সা পরিষেবা মিলছে না এই মেডিক্যাল কলেজে। তাঁদের অন্যত্র স্থানান্তর করা হচ্ছে। ভোগান্তি বাড়ছে রোগীদের।
বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে শুধু এই জেলার বাসিন্দারাই নয়, পড়শি জেলার মানুষও চিকিত্সা করাতে আসেন। অনেক ক্ষেত্রে উন্নতমানের চিকিসা পরিষেবা পাওয়ার আশায় ঝাড়খণ্ড থেকেও এখানে রোগীরা আসেন। কিন্তু এখান থেকেও রোগীদের অন্যত্র স্থানান্তর করা হচ্ছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি মাসে এখান থেকে স্থানান্তর করা রোগীদের মধ্যে প্রায় পাঁচ শতাংশ হলেন কোমরের জয়েন্টের হাড়ভেঙে যাওয়া রোগী।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, কোমরের হাড়ভাঙার অস্ত্রোপচারের জন্য প্রয়োজনীয় সি-আর্ম মেশিন রয়েছে, কিন্তু কোমরের জয়েন্টে অস্ত্রোপচারের জন্য যে সি-আর্ম কমপ্যাটিবল অপারেশন টেবিল থাকার কথা তা নেই। তাই শরীরের অন্য কোনও অংশের হাড় ভেঙে গেলে সি-আর্ম মেশিনে ওই অস্ত্রোপচারগুলি করা গেলেও কোমরের জয়েন্টের হাড়ের অংশে অস্ত্রোপচার করা যাচ্ছে না।
হাসপাতাল সুপার পঞ্চানন কুণ্ডু বলেন, “কোমরের জয়েন্টের হাড়ের অস্ত্রোপচার খুবই সূক্ষ কাজ। ওই বিশেষ টেবিল থাকলে রোগীকে শয্যা থেকে না নড়িয়েই শুধু টেবিলটি এদিক-ওদিক ঘুরিয়ে তাঁর কোমরের হাড়ে বিভিন্ন জায়গায় প্লেট বা বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বসানো যায়।” তিনি জানান, ওই টেবিলের সঙ্গে থাকে এক্স-রে মেশিন। অস্ত্রোপচারের সঙ্গে সঙ্গে হাড়ের অবস্থানও তাতে দেখা যায়। এতে নিখুঁত ভাবে অস্ত্রোপচার করা সম্ভব। তাঁর কথায়, “টেবিলটি না থাকায় এই অস্ত্রোপচার করা খুবই ঝুঁকির কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই আমরা কোমরের হাড় ভাঙা রোগীকে অন্যত্র স্থানান্তর করতে বাধ্য হচ্ছি।” এক দিকে মেডিক্যাল কলেজে এই ধরনের অস্ত্রোপচার হচ্ছে না, অন্য দিকে জেলার খানাখন্দে ভরা রাস্তাঘাটে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। পথ দুর্ঘটনায় কোমর ভাঙলে সাধারণ মানুষের কপালে জুটছে অশেষ হ্যাপা।
তেমনই একজন হলেন বিষ্ণুপুরের মাধবগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা প্রবীর রজক। কয়েক মাস আগে তিনি চলন্ত বাস থেকে পড়ে কোমরে চোট পান। চিকিত্সক পরীক্ষা করে জানান, তাঁর কোমরের জয়েন্টে হাড় ভেঙে গিয়েছে। তিনি বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। কিন্তু সেখানে অস্ত্রোপচার না হওয়ায় তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তর করা হয়। প্রবীরবাবুর ছেলে রাজু রজক বলেন, “সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর অবস্থা। বাঁকুড়া মেডিক্যালে অস্ত্রোপচার না হওয়ায় কয়েক হাজার টাকা গাড়ি ভাড়া করে বাবাকে বর্ধমানে নিয়ে যাই। এতে একদিকে যেমন অতিরিক্ত টাকা খরচ হল, তেমনই ভোগান্তিও পোহাতে হল আমাদের।” পুরুলিয়ার কাশীপুর থানার উপরবাজার এলাকার বাসিন্দা ধীরেনচন্দ্র গরাই মাস খানেক আগে রাতে সাইকেল চড়ে বাড়ি ফিরছিলেন। রাস্তার গর্তে পড়ে গিয়ে তাঁর কোমর ভাঙে। চিকিত্সার জন্য বাঁকুড়া মেডিক্যালে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁকেও অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়। ধীরেনবাবুর ছেলে অনুপ গরাই বলেন, “বাইরের হাসপাতালে যাওয়া মানেই ঝামেলা আরও বেড়ে যায়। এত গুরুত্বপূর্ণ একটা মেডিক্যাল কলেজে এই ধরনের জরুরি পরিষেবাগুলো না থাকাটাই অস্বাভাবিক।”
বাঁকুড়া মেডিক্যালের পরিচালন সমিতি ও রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য জয়মাল্য ঘর বলেন, “ওই বিশেষ টেবিল না থাকায় সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়ছেন। ঘটনার কথা আমরা স্বাস্থ্য ভবনকে জানিয়েছি।” কবে টেবিল বসবে বাঁকুড়া মেডিক্যালে? সদুত্তর অবশ্য মেলেনি। হাসপাতাল সুপার বলেন, “আমরা টেবিলটি কেনার জন্য টেন্ডার ডাকার প্রক্রিয়া শুরু করেছি।” |