হাওয়া বদলের সঙ্গে শীত যেমন তাল মেলাতে পারছে না, তেমনই পেরে উঠছে না মানুষের শরীরও। কারণ, অস্থির আবহাওয়ায় রোগ জীবাণুদের পোয়াবারো।
সর্দি-কাশিতে যেই মানুষ একটু অসুস্থ হয়ে পড়ছেন, শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা যেই একটু বেসামাল হচ্ছে, জীবাণুরা বাতাসের সঙ্গে ঢুকে পড়ছে শরীরে। যে সব রোগ জীবাণু পতঙ্গবাহিত, তাদেরও সংক্রমণ ছড়াচ্ছে দ্রুত। শীতে সাধারণত কীটপতঙ্গদের উপদ্রব কম থাকে।
কিন্তু অনুকূল মেঘলা আবহাওয়ায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে মশা-মাছির মতো জীবাণু বাহকেরা।
নানা ধরনের জ্বরের প্রকোপ হঠাৎই বেড়ে গিয়েছে। বিভিন্ন ধরনের প্যারাসিটামলের বিক্রি বেড়েছে। বিক্রি বেড়েছে কাফ সিরাপ, ম্যালেরিয়ার ওষুধ ক্লোরোকুইন, প্রাইমাকুইনেরও। গলায় ব্যথা এবং কানব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার ওষুধও বিকোচ্ছে হু-হু করে। |
আবহাওয়ার পরিবর্তনে কেন রোগ জীবাণুরা সহজেই মানুষের শরীরকে আক্রমণ করে? প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরবিদ্যা বিভাগের প্রধান দেবাশিস সেনের ব্যাখ্যা, “আবহাওয়ার ঘন ঘন পরিবর্তন হতে থাকলে মানব শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়। আর সেই সুযোগে যে কোনও জীবাণু বিভিন্ন অঙ্গকে সরাসরি আক্রমণ করছে। শরীর সেই সংক্রমণের বিরুদ্ধে তেমন ভাবে লড়াই করতে পারছে না।
পরজীবী বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দী এবং গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট অভিজিৎ চৌধুরীও আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে রোগ জীবাণুদের সক্রিয়তা কী ভাবে বাড়ে, তা ব্যাখ্যা করেছেন। স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের প্রাক্তন অধিকর্তা অমিতাভবাবু বলেন, “এই পরিস্থিতিতে জলবসন্ত, মাম্প্সের মতো রোগও হতে পারে।” সম্প্রতি কয়েক দিনের মধ্যে দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে জলবসন্তের সংক্রমণ যে ভাবে ছড়িয়েছে, তাতে চিকিৎসকেরা চিন্তিত। এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, “জলবায়ু সামগ্রিক ভাবে মানব শরীরে প্রভাব ফেলছে। আমরাও তার বাইরে নই। এটা নিয়ে সারা বিশ্বের চিকিৎসক মহলেই গবেষণা শুরু হয়েছে।”
চিকিৎসক প্রবীর বিশ্বাসের চেম্বারে জ্বর, সর্দি-কাশির রোগী উপচে পড়ছে। প্রবীরবাবু বলেন, “চলতি মরসুমে জ্বরের রোগী তো বেড়েছেই। অনেকে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি নিয়েও আসছেন।” জ্বর, সর্দি, শ্বাসনালীর রোগ বাড়ছে। এই সময়ে বেশি সমস্যায় পড়ছেন শিশু ও বৃদ্ধরাই। তাই শিশু ও বয়স্কদের সাবধানে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। ঠান্ডা কিছুটা কমলেও, শরীরকে গরম পোশাকে ঢেকে রাখার পরামর্শও দিয়েছেন কেউ কেউ। |