দেড় মাসের টিকিট আগাম বুক হয়ে গিয়েছে। গঙ্গাসাগরে হেলিকপ্টার পরিষেবা চালু হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত পরিবহণ-কর্তারা। তাঁরা মনে করছেন, এই সাফল্য নজিরবিহীন। তাকে হাতিয়ার করে এ বার দ্রুত গতিতে আরও আটটি জায়গায় হেলিকপ্টার পরিষেবা চালু করার কথা ভাবছে রাজ্য সরকার। নতুন যে সব জায়গার মধ্যে রাজ্য সরকার উড়ান চালু করতে চাইছে, তার মধ্যে যেমন আছে মায়াপুর, তারাপীঠ, কৃষ্ণনগর এবং বহরমপুর, তেমনই আছে দিঘা, হলদিয়া, রায়চক, কোচবিহারও। এর মধ্যে দিঘা, তারাপীঠ, কোচবিহার এবং মায়াপুরে গঙ্গাসাগরের মতোই সাফল্য মিলবে বলে মনে করছেন পরিবহণ দফতরের শীর্ষ কর্তারা।
রবিবার কপ্টার পরিষেবা চালু হয়েছে কলকাতা-শান্তিনিকেতনের মধ্যেও। প্রথম দিনের উড়ানে গিয়েছিলেন অভিনেতা প্রসেনজিৎ এবং পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়। রাজ্যের পরিবহণ-সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “উড়ানে শান্তিনিকেতন পৌঁছনোর পরে প্রসেনজিৎদের সঙ্গে আমার ফোনে কথা হয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন, এই পরিষেবা খুবই কাজে লাগবে। ব্যবসায়িক ভিত্তিতে এই পরিষেবা খুবই লাভজনক হবে বলে মনে করছেন ওঁরা।” |
গত ডিসেম্বরেই বেহালা ফ্লাইং ক্লাব থেকে গঙ্গাসাগর, মালদহ-বালুরঘাট এবং দুর্গাপুরে হেলিকপ্টার পরিষেবা চালু করেছে রাজ্য সরকার। এই পরিষেবায় সরকারকে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারের হেলিকপ্টার সংস্থা পবনহংস এবং বিপণন সহায়তা করছে বেঙ্গল এরট্রোপলিস প্রজেক্ট লিমিটেড। সাত আসনের, দুই ইঞ্জিনের ওই হেলিকপ্টারে একমাত্র দুর্গাপুর ছাড়া বাকি সবক’টি জায়গার জন্য ১৫০০ টাকার মধ্যে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। প্রত্যেকটি জায়গাতেই এই পরিষেবা নিয়ে রাজ্যবাসীর মধ্যে যথেষ্ট উৎসাহ রয়েছে বলে দাবি পরিবহণ কর্তাদের। রাজ্যের এক পরিবহণ-কর্তার কথায়, “বিশেষত গঙ্গাসাগরে আগামী দেড় মাসের টিকিট তো এখনও বুক হয়ে গিয়েছে। আশা করছি, পরের দেড় মাসের টিকিটও খুব শীঘ্রই বুক হয়ে যাবে।”
পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, প্রথম ধাপে সাফল্য আসায় পরের ধাপে আরও আটটি কেন্দ্রে এই পরিষেবা চালু করতে চাইছে রাজ্য। রাজ্যের এক পরিবহণ কর্তা জানান, তার প্রথম ধাপ হিসেবে পবনহংসের কাছে ইতিমধ্যেই আরও একটি হেলিকপ্টার চেয়েছে সরকার। |
তিনি বলেন, “এতগুলি জায়গায় উড়ান চালু করতে গেলে একটি হেলিকপ্টার যথেষ্ট নয়। সে কারণেই আরও একটি কপ্টার চাওয়া হয়েছে। পবনহংস না দিতে পারলে প্রয়োজনে বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকেও হেলিকপ্টার ভাড়া নেওয়া হতে পারে। সে ব্যাপারেও খোঁজ নেওয়া শুরু হয়েছে।” পাশাপাশি, নতুন জায়গাগুলিতে হেলিপ্যাড চিহ্নিতকরণের কাজও শুরু হয়েছে। ওই কর্তা জানান, কোচবিহারে বিমানবন্দর থাকায় কোনও সমস্যা নেই। রায়চকে হেলিপ্যাড তৈরির জন্য ইতিমধ্যেই একটি জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। বাকি জায়গাগুলিতেও জমি চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, “দ্রুত হেলিকপ্টার পাওয়া গেলে দু’এক মাসের মধ্যে আরও দু’তিনটি জায়গায় আমরা পরিষেবা চালু করতে পারব।”
তবে পরিবহণ কর্তারা জানাচ্ছেন, রাজ্যের পর্যটন এবং বাণিজ্য কেন্দ্রের মধ্যে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে যোগাযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি বাণিজ্যিক ভাবে হেলিকপ্টার ভাড়া দেওয়ার ব্যাপারেও ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে সরকার। ওই পরিবহণ-কর্তা বলেন, “বিনোদন শিল্পে এবং স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে হেলিকপ্টার পরিষেবার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। সেই ক্ষেত্রগুলিও কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।” |