স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিন ঘিরে রবিবার পথে নামল যুব তৃণমূল ও তৃণমূল ‘যুবা’। আপাতদৃষ্টিতে পুরোদস্তুর অরাজনৈতিক কর্মসূচি। কিন্তু লোকসভা ভোটের আগে দলের দুই যুব সংগঠনকেই একসঙ্গে পথে নামিয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব আসলে সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শনের মহড়া দিলেন বলেই রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের ব্যাখ্যা। দুই যুব সংগঠনকে ঘিরে দলের অন্দরে যাতে বিভ্রান্তি বা ভুল বোঝাবুঝি না-থাকে, সেই বার্তাও এর মাধ্যমে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে বলে তৃণমূলের একাংশের অভিমত।
কাকতালীয় ভাবে, একই বিন্দুতে এ দিন মিলে গিয়েছিল তৃণমূলের এই দুই সংগঠন। উত্তর কলকাতার সিমলায় বিবেকানন্দের বাড়ির সামনে শেষ হয়েছিল দলীয় সাংসদ তথা যুব তৃণমূলের সভাপতি শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে অরাজনৈতিক শোভাযাত্রা। তার কয়েক ঘণ্টা পরে সেখান থেকেই শুরু হয় দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ‘যুবা’র শোভাযাত্রা। পরিক্রমার গতিপথ ভিন্ন ছিল ঠিকই। |
কিন্তু বিবেকানন্দকে বাম সরকার সম্মান জানায়নি বলে দু’ক্ষেত্রেই একই সুরে অভিযোগ শানিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। বিবেকানন্দের পাড়া থেকে জন্মদিনের মিছিলে ছিলেন উত্তর কলকাতার তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ও। শাসক শিবিরের একাংশের ব্যাখ্যায়, বাঙালি মননের উপরে বিবেকানন্দের যে বিপুল প্রভাব, জন্মদিনের আবেগকে উপলক্ষ করে তাকেই সুকৌশলে ব্যবহার করতে চেয়েছেন তৃণমূল নেত্রী।
দলীয় পতাকা ছিল না শুভেন্দুর শোভাযাত্রায়। শ্যামবাজার থেকে কলকাতা যুব সঙ্ঘের আয়োজনে ‘বিবেক চেতনা যাত্রা’ নামে ওই শোভাযাত্রায় মিশে গিয়েছিলেন উত্তর কলকাতার যুব তৃণমূল কর্মীরা। গত তিন বছর ধরে ওই সংগঠনের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক হিসেবে শুভেন্দু এই শোভাযাত্রা করছেন। শোভাযাত্রার ট্যাবলোয় বিবেকানন্দের ছেলেবেলার বিভিন্ন মুহূর্তের পাশাপাশি চোখে পড়েছে তাঁর বাণী সংবলিত প্ল্যাকার্ড। বিবেকানন্দের বাড়ির সামনে শোভাযাত্রা শেষে শুভেন্দুর কোনও রাজনৈতিক বক্তব্যও ছিল না। |
স্বামীজির জীবনাদর্শকে পাথেয় করে তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা দিতে পরে অবশ্য প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “যুব সমাজের কাছে স্বামীজির কাজ ও আদর্শ তুলে ধরেনি আগের সরকার। তৃণমূল নেত্রী মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরই সে কাজে উদ্যোগী হয়েছেন।”
একই ভাবে বিবেকানন্দের সাজে মডেল, তাঁর বাণী লেখা সুসজ্জিত ট্যাবলো নিয়ে সিমলার বাড়ির সামনে থেকে গাঁধীমূর্তির পাদদেশ পর্যন্ত শোভাযাত্রা করে যুবা-ও। তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী, বিধায়ক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, সাংসদ সুদীপবাবু, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় প্রমুখকে নিয়ে শোভাযাত্রার শেষে গাঁধীমূর্তির পাদদেশে আসেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। স্বামীজিকে নিয়ে বাম সরকারের উদাসীনতার অভিযোগ তুলে মুকুলবাবু বলেন, “বিবেকানন্দ সম্পর্কে সে ভাবে মূল্যায়নই হয়নি। আগের সরকার কিছুই করেনি!”
একই সুরে অভিষেকও বলেন, “বিগত বাম সরকার মনীষীদের সম্মান জানায়নি। বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ, নেতাজির দেশে বাইরে থেকে কার্ল মার্ক্স, লেনিন, চে গ্যেভারাকে আমদানি করে এনেছে তারা!”
|