তল্লাশিতে মহিলা নেই, তাই পাচারে হাতিয়ার মেয়েরাই
ছর ষোলোর মেয়েটির হাবভাব দেখেই সন্দেহ হয়েছিল সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-র জওয়ানদের। কেমন যেন অস্বাভাবিক মোটা ঠেকছিল তাকে। তাই সীমান্ত পার হয়ে আসা মেয়েটিকে পুরুষ জওয়ানেরাই জেরা শুরু করেন। কিন্তু সন্দেহ সত্যি কি না, জানা যাবে কী করে? জেরার কাজটা পুরুষ জওয়ানেরাও করতে পারেন। কিন্তু মহিলা কর্মী ছাড়া তো পরীক্ষা করা যাবে না সন্দেহভাজন মহিলাকে। অথচ বিএসএফের তো মহিলা জওয়ান নেই বললেই চলে। শেষ পর্যন্ত এলাকারই দুই গৃহবধূকে ডেকে ওই কিশোরীকে তল্লাশ করার ব্যবস্থা হয়। আর তল্লাশির পরেই বিএসএফের কর্মী-অফিসারদের চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। মেয়েটির পোশাকের তলায় ঊরুতে কাপড়ের ‘প্যাডিং’-এর ভিতরে পাওয়া গেল প্রায় দু’কিলোগ্রাম সোনার বিস্কুট!
কয়েক মাস আগে ঘটনাটি ঘটে বনগাঁর আংরাইল সীমান্তে। দু’মাস আগে এমন ঘটনা ঘটেছে পেট্রাপোল সীমান্তেও। সেখানেও এক মহিলার শরীর পরীক্ষা করে মিলেছে লক্ষাধিক টাকার সোনা। শুধু সোনা নয়, পাচারের এই তালিকায় রয়েছে জাল নোট, নানা ধরনের মাদক দ্রব্যও। সীমান্তে মহিলা রক্ষীর অভাবে এ ভাবেই বিএসএফের চোখের সামনে দিয়ে নিষিদ্ধ জিনিস ঢুকছে এ-পারে।
সোনা পাচার করতে গিয়ে প্রায় রোজই কেউ না কেউ গ্রেফতার হচ্ছে কলকাতা বিমানবন্দরে। বোঝা যাচ্ছে, সোনা পাচারকারীরা ইদানীং ভীষণ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বিমানবন্দরে পর্যাপ্ত পরিকাঠামো থাকায় তাদের একাংশকে ধরা সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু স্থল-সীমান্তের পাচারকারীরা জেনে গিয়েছে, মহিলাদের দিয়ে পাচারের কাজটা করানো হলে তাদের ধরার কার্যত কোনও পরিকাঠামোই নেই বিএসএফের। নেই মহিলা রক্ষীও।
পাচার চলছে কী ভাবে?
এক বিএসএফ-কর্তা জানান, কাপড় দিয়ে এক ধরনের প্যাড তৈরি করছে পাচারে জড়িত মহিলারা। সেই প্যাড তারা জড়িয়ে নিচ্ছে শরীরের বিভিন্ন অংশে। মূলত পেটে বা ঊরুতে বিশেষ ভাবে তৈরি এই প্যাড জড়িয়ে নেয় তারা। ওই কর্তা জানান, এগুলো দেখতে ক্রিকেটারদের প্যাডের মতো। ভিতরে থাকে সোনা, মাদক কিংবা জাল নোট। আর উপরে থাকে সাধারণ পোশাকসালোয়ার-কামিজ কিংবা শাড়ি। ফলে বাইরে থেকে বোঝার কোনও উপায় থাকে না যে, পোশাকের নীচে কোনও জিনিস লুকোনো রয়েছে। এ ভাবেই শরীরকে কাজে লাগিয়ে নানান জিনিস পাচার করছে মেয়েরা।
বিএসএফ-কর্তৃপক্ষ জানান, কয়েক বছর ধরে সীমান্তের দালালেরা পাচারের ধরন বদলেছে। দুষ্কৃতীরা পাচারের কাজে মেয়েদের ব্যবহার করায় ফাঁপরে পড়ছে বিএসএফ। মহিলাদের পোশাকের ভিতরে নানান কায়দায় সেনা-মাদক-জাল নোট বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। সন্দেহ হলেও মহিলা কর্মীর অভাবে বিএসএফের পক্ষে ও-পার থেকে আসা মহিলাদের শরীর তল্লাশ করা সম্ভব হচ্ছে না। কয়েকটি ক্ষেত্রে সন্দেহ প্রবল হওয়ায় এলাকার মহিলাদের ডেকে এনে সন্দেহভাজন মহিলাকে পরীক্ষা করা হচ্ছে। এ ভাবে যে পাচারকারীদের বাড়বাড়ন্ত রোখা যাবে না, তা বুঝেই সীমান্তে মহিলা জওয়ান নিতে চাইছে বিএসএফ।
বিএসএফের ইস্টার্ন কম্যান্ডের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, চার হাজার ৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে পারাপারের জন্য প্রতি তিন কিলোমিটার অন্তর গেট রয়েছে। আউটপোস্টের সংখ্যা ৯৯৬। তার মধ্যে বেশ কিছু কোম্পানি আউটপোস্টও রয়েছে। সাধারণত এগুলিতে রক্ষীর সংখ্যা ছোট আউট পোস্টের তুলনায় বেশি হয়। ওই কর্তা জানান, কোম্পানি আউটপোস্টে সাধারণত প্রতি শিফটে এক জন অফিসারের অধীনে জনা পঞ্চাশ রক্ষী থাকেন। আর ছোট পোস্টে থাকেন ২৫-৩০ জন রক্ষী। কয়েকটি জায়গায় মহিলা রক্ষী থাকলেও এই মুহূর্তে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের বেশির ভাগ গেটে পাহারা বা তল্লাশির জন্য মহিলা জওয়ান কার্যত নেই বললেই চলে। আর সেই জায়গাগুলিতেই এ বার মহিলা জওয়ানের সংখ্যা বাড়াতে চলেছেন বিএসএফ-কর্তৃপক্ষ।
বিএসএফের খবর, এই মুহূর্তে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের জন্য মাত্র ১৬১ জন মহিলা কর্মী আছেন। তাঁদের মধ্যে ছ’জন সাব-ইনস্পেক্টর পদের। বাকি ১৫৫ জন কনস্টেবল। এই সীমান্তের জন্যই আরও ৩৩৫ জন মহিলা নিয়োগ করা হচ্ছে। পঞ্জাব থেকে আনা হচ্ছে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আরও ২৩৯ জন মহিলাকে। বিএসএফের ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) বংশীধর শর্মা বলেন, “এই সব মহিলাকে নিয়োগ করা হচ্ছে মূলত সীমান্ত এলাকায় মহিলাদের তল্লাশ করার জন্য। তবে তাঁরা টহল ও সীমান্তে পাহারার কাজও করবেন।”
বিএসএফের ওই কর্তা জানান, রাজস্থান, পঞ্জাব ছাড়া এই মুহূর্তে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে সব থেকে বেশি মহিলা নিয়োগের দরকার। তাই তাঁদের সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.