ডাকাতির অভিযোগেও জেল হয়েছিল নিত্যানন্দর
কই পরিবারের তিন মহিলা খুনে অভিযুক্ত নিত্যানন্দ দাসকে গত বছরই ডাকাতি ও বেআইনি অস্ত্র রাখার অভিযোগে গ্রেফতার করেছিল বহরমপুর থানার পুলিশ। ২০১৩ সালের ৩১ মার্চের ওই ঘটনায় পুলিশ তার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৯৯/ ৪০২ এবং ২৫/২৭ ধারায় মামলা দায়ের করে। বহরমপুর থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই সময়ে আদালতের নির্দেশে ওই যুবকের জেল হেফাজত হয়। ২৬ দিন জেল হাজতে থাকার পরে আদালত তাকে জামিনে মুক্তি দেয়। পুলিশ জানায়, সেই সময়ে সুতির মাঠ এলাকায় নিত্যানন্দ তার এক দিদির বাড়িতে ভাড়া থাকত। দিদির অনুপস্থিতিতে সেই বাড়িতেই ডাকাতি করে। পরে তার দিদিই বহরমপুর থানায় নিত্যানন্দের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।
যদিও নিত্যানন্দের জন্ম শিক্ষক পরিবারে। বাবা নিমাই দাস ছিলেন পেশায় শিক্ষক। উত্তর ২৪ পরগনার অমৃতলাল ওঝা বিদ্যাভবনের (বালক) শারীরশিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে সম্প্রতি তিনি অবসরগ্রহণ করেন। নিত্যানন্দের দাদু বলরাম বিশ্বাস টেক্সটাইল কলেজের প্রশিক্ষক পদে কর্মরত ছিলেন। নিত্যানন্দের ছেলেবেলা কেটেছে মামার বাড়ি ভাকুড়িতে। তার মা অঞ্জলিদেবী বলেন, “নিত্যানন্দের যখন ছ’মাস বয়স, তখনই স্বামীর সঙ্গে অশান্তি হওয়ায় ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়ি ভাকুড়িতে চলে আসি। আমার বাবা ও এক মাসতুতো দাদা নিত্যানন্দের যাবতীয় পড়াশোনার খরচ বহন করত।”
আত্রেয়ীদের শোকসভায় নীরবতা পালন। বহরমপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।
মাধ্যমিকে ভাল ফল করায় নিত্যানন্দকে সঙ্গে নিয়ে অঞ্জলিদেবী স্বামীর কর্মস্থলে চলে যান। নিত্যানন্দ নতুন করে সোদপুরের চন্দ্রচূড় হাইস্কুলে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। কিন্তু নিমাইবাবু নিখোঁজ হয়ে যান। তখন মাস তিনেক বিনা ভাড়ায় সোদপুর স্টেশন লাগোয়া এলাকায় ছিলেন। ফলে আর্থিক কারণে মাঝপথে পড়া ছেড়ে নিত্যানন্দ তার মায়ের সঙ্গে ভাকুড়িতে ফিরে আসে। অঞ্জলিদেবী বলেন, “ভাকুড়িতে আসার পরে নতুন করে আর কোথাও ভর্তি হয়নি ও।” তবে কয়েক বছরের মধ্যেই সিআরপিএফে চাকরি পেয়ে যায় নিত্যানন্দ। ২০০২ সালে ভাকুড়ির একটি অভিজাত পরিবারের এক তরুণীর সঙ্গে তার সামাজিক ভাবে বিয়ে হয়। তাদের একটি কন্যা সন্তানও রয়েছে। বর্তমানে সে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। ওই মহিলার সঙ্গে আইনত তার বিবাহ বিচ্ছেদ না হলেও ২০০৫ সাল থেকে তার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। ওই মহিলা নিত্যানন্দের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের মামলা দায়ের করলে ৫৬ দিনের জেল হাজতেও কাটাতে হয় তাকে। ওই মামলা এখনও বিচারাধীন রয়েছে।
এদিকে ২০০৫ সালে বেলডাঙা থানার মমতা গোস্বামীর সঙ্গে তার সম্পর্ক তৈরি হয়। অঞ্জলিদেবীর কথায়, “২০০৭ সালে নাতির জন্ম হয়। কিন্তু বিভিন্ন কারণে নিত্যানন্দের সঙ্গে আমি কোনও সম্পর্ক রাখতাম না। পরে ২০০৮ সালে কাশিমবাজার স্টেশনে নাতি ও বৌমা-সহ নিত্যানন্দের দেখা পাই। তখন থেকেই ফের সম্পর্ক তৈরি হয়।” এর পরেই বহরমপুরের বিভিন্ন জায়গায় সপরিবারে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করে নিত্যানন্দ। বহরমপুর লাগোয়া পাকুড়িয়ায় সন্তোষ দাসগুপ্তের বাড়িতে ভাড়া থাকার সময়ে নিত্যানন্দ ‘তন্ত্রসাধনার শিক্ষা’ শুরু করে বলে জানা গিয়েছে। বাড়ির মালিক বলেন, “তন্ত্রসাধনা শিখতে দেড় মাসের জন্য অন্ধপ্রদেশ যাওয়ার কথাও বলেছিল।” যদিও পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “কলকাতার এক মহিলার কাছে তন্ত্রসাধনা শিক্ষা নিয়েছে বলে ওই যুবক জেরায় স্বীকার করেছে। সাড়ে তিন হাজার টাকার বিনিময়ে শংসাপত্রও জোগাড় করেছে। তার তান্ত্রিকের পরিচয়পত্রও রয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন বড় শহরে এবং দিল্লি-চেন্নাইয়েও চেম্বার রয়েছে বলেও তার দাবি। কোষ্ঠীবিচারের নামে তার অন্য কোথাও কুকীর্তি রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
এদিকে শিলিগুড়ি থেকে ধরে নিয়ে আসার পর থেকে নিত্যানন্দের ‘স্ত্রী’ মমতা ওরফে মানতাদেবী বহরমপুর থানার পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। শাশুড়ি অঞ্জলিদেবী সাত বছরের নাতি গৌরাঙ্গ তথা সমীর দাসকে সঙ্গে করে পাকুড়িয়ার বাড়ি আর বহরমপুর থানা যাতায়াত করছেন। এদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নাতিকে নিয়ে থানায় বসেছিলেন ওই প্রৌঢ়া। দুপুরে ঘন্টা খানেকের জন্য বাড়ি গিয়ে নাতিকে সঙ্গে করে থানায় ফিরে আসেন। বাড়ি ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। অঞ্জলিদেবী বলেন, “বৌমাকে সঙ্গে নিয়ে নিত্যানন্দ কলকাতা যাবে বলে জানায়। সেই মতো আমি গত ২ জানুয়ারি থেকে পাকুড়িয়ার বাড়িতেই রয়েছি। কিন্তু মা ছাড়া ছেলেটাকে রাখব কী করে, ভেবে পাচ্ছি না!” বিজয়াদেবীর হার, বালা সারগাছির যে দোকানে বিক্রি করার কথা নিত্যানন্দ স্বীকার করে, সেই দোকানের মালিক ওমর শেখকে পুলিশ এদিন আটক করেছে। সেই সঙ্গে তার দোকানেও তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.