হোটেলে বিরিয়ানি খাওয়ার সময়েই ধৃত নিত্যানন্দ
কই পরিবারের তিন মহিলা খুনের ঘটনায় ধৃত নিত্যানন্দ দাসকে ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিল আদালত। শনিবার মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীরের সাংবাদিক সম্মেলনে হাজির নিত্যানন্দ অভিযোগ করেছিল, তার উপরে পুলিশ অত্যাচার করছে, সে নির্দোষ। এ দিন আদালতেও সে বিচারকের সামনে চিৎকার করে ওঠে, ‘‘আমাকে বাঁচান। পুলিশ আমাকে ইলেকট্রিক শক দিয়ে খুনের কথা বলিয়ে নিতে চাইছে। আমাকে মেরে ফেলবে। আমি থানায় যাব না।” মুর্শিদাবাদ সিজেএম আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক সুতীর্থ বন্দ্যোপাধ্যায় তখন ‘ঠিক আছে’ বলে তাকে এজলাসের লক-আপ থেকে থানায় নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। কমব্যাট ফোর্সের কর্মীরা তারপরে তাকে চ্যাংদোলা করে নিয়ে গিয়ে পুলিশ ভ্যানে তুলে দেন। জেলা পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের দেখে নিত্যানন্দ অভিনয় করছে। ওই যুবক ভীষণ ধূর্ত ও ধুরন্ধর। ওর আচরণ কোনও ভাবে বিশ্বাসযোগ্য নয়।”
গত সোমবার, ৬ জানুয়ারি বহরমপুরের একটি ফ্ল্যাট থেকে বৃদ্ধা প্রভা দাস, তাঁর ভাইঝি মধ্য চল্লিশের বিজয়া বসু ও বিজয়াদেবীর তরুণী কন্যা আত্রেয়ী বসুর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, তার আগের শনিবার, ৪ জানুয়ারি ওই তিন জনকে খুন করা হয়েছে। গত শনিবার, ১১ জানুয়ারি পুলিশ দাবি করে, খুনের কিনারা হয়ে গিয়েছে। পুলিশ সুপার দাবি করেছেন, নিত্যানন্দ নামে ওই যুবকই সে দিন ‘তন্ত্রসাধনা’ করবে বলে বিজয়াদেবীদের ফ্ল্যাটে যায়। আসল উদ্দেশ্য ছিল চুরি করা। বাড়ির তিন জনকে তাই সে বেহুঁশও করে দিয়েছিল। কিন্তু তাঁদের হুঁশ ফিরে আসায় তাঁদের তিন জনকে সে খুন করেছে। খুনের পরে সারা রাত ওই ঘরেই সে কাটিয়েছে বলেও দাবি করে পুলিশ।
আদালতে তোলা হচ্ছে নিত্যানন্দকে। গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি।
পুলিশ এ দিন জানিয়েছে, নিত্যানন্দকে খুব কৌশলে গ্রেফতার করতে হয়েছে। নিত্যানন্দ যে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে, সে খোঁজ প্রথম পাওয়া গিয়েছিল বিজয়াদেবীর স্বামী দেবাশিস বসুর কাছ থেকে। এ দিন দেবাশিসবাবু জানান, নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে আত্রেয়ী তাঁকে মোবাইলে শুভেচ্ছা পাঠিয়েছিল। পরে স্ত্রী ও কন্যার সঙ্গে তাঁর ফোনে কথাও হয়। তিনি বলেন, “তখনই জানতে পারি, এক জ্যোতিষী বলেছেন যে, ওদের দু’জনের কালসর্পযোগ রয়েছে। তা খণ্ডনের জন্য ওরা যে অন্য এক জ্যোতিষীর সঙ্গে যোগাযোগ করছে, তা-ও জানতে পারি।” পুলিশকে তিনি সে সব কথাই জানিয়েছিলেন। পুলিসও বহরমপুর শহরের জ্যোতিষীদের কে কোথায় কী করছেন তার উপরে নজর রাখতে শুরু করে। পুলিশ সুপার বলেন, “তদন্তে আমাদের সন্দেহ গিয়ে পড়ে নিত্যানন্দের উপরে।” এর পরে নিত্যানন্দের মোবাইল ফোনে নজরদারি চালিয়ে বোঝা যায় সে শিলিগুড়িতে রয়েছে।
তাকে ধরতে বহরমপুর থানার টাউন সাব-ইন্সপেক্টর সৌম্য দে-র নেতৃত্বে চার জনের একটি পুলিশ দল বৃহস্পতিবার রাতে শিলিগুড়ি রওনা হয়। শহরের কোন এলাকায় সে রয়েছে, তা বুঝতে পেরেছিল পুলিশ। কিন্তু ঠিক কোন হোটেলে সে উঠেছে, তা খুঁজতে বেগ পেতে হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই এলাকার বিভিন্ন হোটেলে গিয়ে ঘর ‘ভাড়া’ নেওয়ার কথা বলার ছলে রেজিস্টার খাতায় নিত্যানন্দের নাম রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখতে শুরু করেন তাঁরা। এ ভাবেই সেবক রোডের উপরে জনবহুল বাজার এলাকার একটি হোটেলের রেজিস্টার খাতায় নিত্যানন্দের নাম দেখতে পান তাঁরা। রাত ১১টা নাগাদ নিজেকে হোটেলের ‘রুম সার্ভিস’-এর কর্মী বলে পরিচয় দিয়ে সৌম্যবাবু ভিতরে উঁকি দিয়ে দেখেন, নিত্যানন্দ বিরিয়ানি খাচ্ছে। ওই ব্যক্তি নিত্যানন্দ বলেই নিশ্চিত হওয়ার পরে সৌম্যবাবু তাকে গ্রেফতার করেন। নিত্যানন্দের সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রীও। দু’জনকে গাড়িতে তুলে সেই রাতেই সোজা বহরমপুর নিয়ে চলে আসা হয়। পুলিশ সুপার বলেন, “গোটা তদন্তই করতে হয়েছে খুবই সতর্ক ভাবে। যে কারণে নিত্যানন্দ ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি যে, আমরা ওকে সন্দেহ করছি। একবার সন্দেহ হলে সে তার মোবাইল ফোন বন্ধ করে দিত। হোটেলেও নিজের নামে ঘর ভাড়া নিত না। তা হলে তাকে ধরা আরও শক্ত হয়ে যেত।” পুলিশ দাবি করেছে, নিত্যানন্দের উপরে কোনও অত্যাচার হচ্ছে না। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নিত্যানন্দকে শনিবার রাতে তার ইচ্ছে মতোই রুটি ও মুরগির ঝোল খেতে দেওয়া হয়েছিল। রবিবার দুপুরে তাকে খেতে দেওয়া হয়েছিল, ডাল, ভাত ও পোনা মাছের ঝোল। পুলিশ জানিয়েছে, তাকে সঙ্গে করে ওই ফ্ল্যাটে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পুলিশ সুপার বলেন, “তখন নিত্যানন্দ সব অভিযোগই স্বীকার করে নিয়েছে। কী ভাবে সে ওই তিন জনকে খুন করেছে, তা-ও সে আমাদের বলেছে।”
পুলিশ সুপার অবশ্য দেবাশিসবাবুকে পুরীতে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে দেবাশিসবাবু এখনও পুলিশের হেফাজতেই রয়েছেন। দেবাশিসবাবু বলেন, “বিজয়া আমার বিরুদ্ধে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা করেনি। পরিবারের লোকজন কেন মিথ্যা কথা বলেছেন, আমার জানা নেই। আমি পুরী চলে গেলেও নিয়মিত ফোনে যোগাযোগ ছিল। আমার বেতন থেকে প্রতি মাসে ৬-৭ হাজার করে টাকা পাঠাতাম।” তবে তিনি জানান, ফ্ল্যাট নিয়ে এখনই কিছু ভাবছেন না। তালা বন্ধ অবস্থায় যেমন আছে, তেমনই থাকবে। ইরাদেবী অবশ্য এ দিন বলেন, “বিবাহ বিচ্ছেদের বিষয়টি বিজয়া আমাদের বলেছিল। তাই ঘটনার পরে জানতে চাওয়া হলে আমিও তা-ই বলেছিলাম। তবে ওর স্বামী এসেছে। যা বলার এ বার ওই বলবে।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.