|
|
|
|
বন্যা বিপর্যয় রোধে খাল সংস্কারে বরাদ্দ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
কয়েক মাস আগের কথা। পাঁশকুড়ার রানিহাটির কাছে কাঁসাই নদীর বাঁধ ভেঙে জলমগ্ন হয়েছিল বিস্তীর্ণ এলাকা। ভাঙা বাঁধ সেনাবাহিনী বেঁধে দিয়ে গেলেও খালগুলো মজে থাকায় জমা জল নামতে -নামতে সময় লেগে যায়। সব মিলিয়ে চরম দুর্দশায় দিন কাটাতে হয় পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক ও নন্দকুমার ব্লকের জলবন্দি লাখ দু’য়েক মানুষকে। শোচনীয় এই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, তার জন্য এ বার নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। তমলুকের শঙ্করআড়া, পায়রাটুঙি, প্রতাপখালি, গঙ্গাখালি, দেনান -দেহাটি খাল সম্পূর্ণ সংস্কার ও তিনটি পাকা সেতু তৈরি করার পাশাপাশি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পাঁশকুড়ায় কাঁসাই নদীর অ্যানিকেত বাঁধ পাকা করার পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য সেচ দফতর। খরচ হবে আনুমানিক ৪৬ কোটি টাকা। যার মধ্যে হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ দেবে ২২ কোটি। ২৪ কোটি টাকা দেবে রাজ্য সরকার।
তমলুকের সাংসদ তথা হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান শুভেন্দু অধিকারী জানান, পাঁশকুড়ার যেখানে কাঁসাই নদীর বাঁধ ভেঙে বন্যা হয়েছে সেই রানিহাটি এলাকায় অ্যানিকেত বাঁধকে কংক্রিটের করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে সেচ দফতর ওই কাজের জন্য টেন্ডার করেছে। এ ছাড়াও নিকাশি ব্যবস্থা উন্নতির জন্য তমলুকের শঙ্করআড়া, পায়রাটুঙি, প্রতাপখালি, গঙ্গাখালি ও কোলাঘাটের দেনান -দেহাটি খাল সম্পূর্ণ সংস্কার করা হবে। ইতিমধ্যে ওই সব খাল সংস্কারের কাজেরও টেন্ডার করা হয়েছে। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে। আগামী মে -জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে বলে জানিয়েছেন সাংসদ। এ ছাড়াও মহিষাদলে রূপনারায়ণের উপর দ্বীপগ্রাম মায়াচরের নদী ভাঙন রোধের জন্য কাজ করা হবে।
সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, তমলুক মহকুমার কোলাঘাট ও পাঁশকুড়া ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকার জল নিকাশির অন্যতম ভরসা ১৬ .৫ কিলোমিটার দীর্ঘ দেহাটি খালের পাঁশকুড়া থেকে ধুলিয়াড়া পর্যন্ত মাত্র ৫ কিলোমিটার অংশ সংস্কার করা হয়েছিল ২০১০ সালে। ধূলিয়াড়া থেকে রূপনারায়ণ পর্যন্ত বাকি ১১ .৫ কিলোমিটার অংশ সংস্কার হয়নি ১২ বছরেরও বেশি। ৭ .৩ কিলোমিটার দীর্ঘ দেনান খালের শেষ সংস্কার হয়েছিল ২০১০ সালে। ওই দুই খালের বেশির ভাগ এলাকা মজে গিয়েছে এখন।
এ ছাড়াও তমলুক শহরের মধ্যে দিয়ে যাওয়া ১১ .৬ কিলোমিটার দীর্ঘ শঙ্করআড়া খাল, ১৬ .৮ কিলোমিটার দীর্ঘ গঙ্গাখালি খাল ও ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রতাপখালি খাল সংস্কার হয়নি প্রায় ১২ বছরের বেশি। ফলে পলি জমে মজে গিয়েছে খালগুলি। জলনিকাশির ক্ষমতা কমতে কমতে তলানিতে ঠেকেছে। তমলুক শহরের মধ্য দিয়ে যাওয়া ৮ .৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পায়রাটুঙি খাল প্রায় ১ কোটি টাকা ব্যয়ে বছর তিনেক আগে সংস্কার করা হলেও কাজ ঠিক মতো হয়নি। ফলে ফের ওই খাল মজে গিয়েছে। খালগুলি সব মজে যাওয়ায় গত বছর বাঁধ ভেঙে কাঁসাই নদীর যে জল ঢুকেছিল তমলুক ও নন্দকুমার ব্লকে, তা সহজে বেরোতে পারেনি। দীর্ঘ দিন ধরে জল জমে থাকায় ধান,পান, মাছ, ফুল চাষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
এই সমস্যা মেটাতে পাঁশকুড়া এলাকায় কাঁসাই নদীর ভাঙা বাঁধ স্থায়ী ভাবে তৈরি ও দীর্ঘ দিন ধরে মজে থাকা নিকাশি খালগুলি পূর্ণাঙ্গ ভাবে সংস্কারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে এ বার। সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁশকুড়ায় কাঁসাই নদীর ভেঙে যাওয়া বাঁধ তৈরির জন্য ১ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা, তমলুকের শঙ্করআড়া খাল সংস্কারের জন্য ৩ কোটি ৮৪ লক্ষ টাকা, প্রতাপখালির জন্য ৩ কোটি ৯৫ লক্ষ, গঙ্গাখালির জন্য ৩ কোটি ৯০ লক্ষ, পায়রাটুঙি খালের জন্য ৯০ লক্ষ ও কোলাঘাটের দেনান -দেহাটি খালের জন্য ২ কোটি ৭৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। সেচ দফতরের সুপারিনটেন্ডেন্ট সুবীরকুমার লাহা বলেন, “পাঁশকুড়ায় নদীবাঁধ তৈরি ও তমলুক, কোলাঘাটে খাল সংস্কার -সহ বিভিন্ন কাজের জন্য ইতিমধ্যে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।” |
|
|
|
|
|