প্রাচীন স্থাপত্য ঘিরে পর্যটনে জোর পূর্বে
বি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের স্মৃতি বিজড়িত ভগবানপুরের কাজলাগড় রাজবাড়ি থেকে পটাশপুরে কেলেঘাই নদীর ধারে কঙ্কেশ্বর শিবমন্দিরপূর্ব মেদিনীপুরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী মন্দির, রাজবাড়ি, স্থাপত্যগুলিকে রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে তুলে ধরতে উদ্যোগী হল জেলা প্রশাসন।
পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘা, মন্দারমণি, তাজপুরের সমুদ্র সৈকত রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে অত্যন্ত পরিচিত নাম। কিন্তু এই সব জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রগুলি ছাড়াও পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন স্থানে অনেক প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়ি, মন্দির, মসজিদ দর্শনীয় স্থান রয়েছে। অবহেলা প্রচারের অভাবে সেগুলি পর্যটক তো দূর, জেলার অন্য প্রান্তের মানুষের কাছেই অজানা রয়ে গিয়েছে। হেরিটেজ হিসবে স্বীকৃতি প্রদান সংরক্ষণ করার পাশাপাশি এই প্রাচীন স্থাপত্যগুলিকে ঘিরে পর্যটন শিল্পের বিকাশে জোর দিতে চাইছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। সেই লক্ষ্যে জেলার ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলির বর্তমান পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে পরিদর্শন শুরু করেছে ডিস্ট্রিক্ট হেরিটেজ কমিটি।
এগরার প্রাচীন হট্টনগর মন্দির। ছবি: কৌশিক মিশ্র।
কমিটির চেয়ারম্যান তথা পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক (ট্রেজারি ) সুমন হাওলাদারের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধিদল শনিবার জেলার এগরা মহকুমার ভগবানপুর, পটাশপুর এগরা এলাকার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন করে। প্রতিনিধি দলে ছিলেন তমলুক পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান তথা তমলুক রাজবাড়ির সদস্য দীপেন্দ্রনারায়ণ রায়, ময়নাগড় রাজপরিবারের সদস্য তথা তাম্রলিপ্ত মহাবিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক প্রণব বাহুবলীন্দ্র, সাহিত্যিক মন্মথনাথ দাস প্রমুখ। প্রতিনিধিদলের সদস্যরা সারাদিন ধরে ঘুরে -ঘুরে ভগবানপুর - ব্লকের কাজলগড় রাজবাড়ি, ভীমেশ্বরী শিবমন্দির, পটাশপুর - ব্লকের পঁচেটগড় রাজবাড়ি, পাথরঘাটার কঙ্কেশ্বর শিবমন্দির, এগরা শহরের হট্টনগর মন্দির প্রভৃতি ঘুরে দেখেন।
ডিস্ট্রিক্ট হেরিটেজ কমিটির চেয়ারম্যান সুমন হাওলাদার বলেন, “জেলার ঐতিহ্যবাহী দর্শনীয় স্থানগুলির তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এগুলির বর্তমান অবস্থা খতিয়ে দেখার জন্য পরিদর্শন শুরু করা হয়েছে। প্রাচীন এই স্থাপত্যগুলির মধ্যে কয়েকটি সংরক্ষণের জন্য আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার কাছে সুপারিশ করা হবে। ছাড়াও স্থানীয় পঞ্চায়েত রাজ্য হেরিটেজ কমিশনেরও সাহায্য চাওয়া হবে। এরপরে জেলার ঐতিহ্যবাহী দর্শনীয় স্থানগুলিকে রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে যুক্ত করার জন্য রাজ্য পর্যটন দফতরের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে।”
ভগবানপুরের কাজলাগড় রাজবাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের স্মৃতি। কাজলাগড়ে ভূমি রাজস্ব দফতরের জরিপ বিভাগের আধিকারিক পদে নিযুক্ত হয়ে এসেছিলেন কবি। কাজলাগড় রাজবাড়ি এলাকায় একটি বাড়িতে থাকতেন তিনি। সেই কাজলাগড় রাজবাড়ি এখন প্রায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হলেও রয়ে গিয়েছে একটি বিশাল দিঘি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় স্মৃতিমন্দির। দর্শনীয় স্থান হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও বাংলার অন্যতম বিখ্যাত কবি নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের স্মৃতি বিজড়িত প্রাচীন এই রাজবাড়ি চত্বরকে ঘিরে পর্যটনশিল্প গড়ে তোলার কথা ভাবা হয়নি এর আগে। ভগবানপুর - ব্লকের ভীমেশ্বরী শিবমন্দিরটিও শতাধিক বছরের প্রাচীন। জেলার আর এক প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী স্থান পটাশপুর - ব্লকের পঁচেটগড় রাজবাড়ি। দাস মহাপাত্র পরিবারের এই রাজবাড়িটিও শতাধিক বছরের প্রাচীন। দর্শনীয় এই রাজবাড়ির প্রাচীন রাসউত্সবে এখনও দূর -দূরান্ত থেকে লোকজন ভিড় করেন। কেলেঘাই নদীর ধারে অবস্থিত পটাশপুর - ব্লকের ঐতিহ্যবাহী পাথরঘাটার কঙ্কেশ্বর শিবমন্দিরের অন্যতম আকর্ষণ দু’টি কালো পাথরের স্তম্ভ। শ্রীচৈতন্যদেবের স্মৃতি বিজড়িত এই মন্দিরটিও কয়েকশো বছরের পুরনো। এগরা শহরের হট্টনগর শিবমন্দিরটিও প্রায় সাড়ে চারশো বছরের পুরনো। এই দর্শনীয় মন্দিরের নির্মাণকাজে ওড়িশি স্থাপত্যরীতির ছাপ রয়েছে। ছাড়াও জেলার বিভিন্ন স্থানে থাকা প্রাচীন মন্দির, মসজিদ রাজবাড়ি মিলিয়ে প্রায় ৫০টি স্থাপত্যকে চিহ্নিত করে সেগুলির সংরক্ষণ করা পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনের তরফে। যার মধ্যে ময়নাগড় রাজবাড়ি, খেজুরির পোস্ট অফিস, মসনদ - -আলা, কাঁথির দারিয়াপুরের কপালকুণ্ডলা মন্দির, তমলুক শহরের মানিকপীরের দরগা, হ্যামিল্টন হাইস্কুল প্রভৃতিও রয়েছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.