অঙ্কিতা দাসের হাত ধরে টেবল টেনিসে জাতীয় খেতাব ফের শিলিগুড়িতে আসায় উচ্ছ্বসিত স্থানীয় ক্রীড়া মহল থেকে বাসিন্দারা সকলেই। যে রবীন্দ্রনগর এলাকায় অঙ্কিতার বাড়ি রবিবার পটনায় ফাইনালে অঙ্কিতার জয়ের খবর সেখানে পৌঁছতে বেশি দেরি হয়নি। তার পর বিকেল থেকেই পড়শিদের মধ্যে শুরু হয় হইচই। এই মুহূর্তে অঙ্কিতার বাবা অসীমবাবু এবং মা সঙ্গীতা দেবীদু’জনেই পাটনায় মেয়ের সঙ্গে রয়েছে। তবুও চেনা পরিচিতরা, পড়শিরা অনেকে অঙ্কিতার বাড়িতে যান। সেখানে রয়েছেন অঙ্কিতার ঠাকুমা, পরিবারের অন্যরা। অসীমবাবু, সঙ্গীতাদেবীকে না-পেয়ে তাঁরা ফোনও করেন। ফোনেই তাঁরা অঙ্কিতাকে অভিনন্দন জানান। আজ, সোমবার শহরে ফিরলে অঙ্কিতাকে পাড়ায় ঘটা করে অভিনন্দন জানানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে। কাউন্সিলর তপন দত্ত বলেন, “ও আমাদের পাড়ার গর্ব। গোটা উত্তরবঙ্গের গর্ব। টেবল টেনিসে ও জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সে খবর এ দিন বিকালেই পেয়েছি। ওর আসার অপেক্ষায় আছি আমরা। ঘটা করে এলাকার বাসিন্দারা সকলে মিলে ওকে সংবর্ধনা জানাব।”
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর, শিলিগুড়ি পুরসভার তরফেও এ দিন অঙ্কিতাকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে। অঙ্কিতা উত্তরবঙ্গের গর্ব বলে জানান উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। পুরসভার মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত, ক্রীড়া বিভাগের মেয়র পারিষদ সুজয় ঘটক সকলেই জানিয়েছেন, অঙ্কিতা শহরে ফিরলে ঘটা করে তাঁকে সংবর্ধনা জানানো হবে। মেয়র পারিষদ সুজয় ঘটক বলেন, “পুরসভার তরফে ওকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে। আমরা আনুষ্ঠানিক ভাবে অঙ্কিতাকে সংবর্ধনা জানাব।” |
শিলিগুড়িতে একটি টিটি প্রতিযোগিতায় সেরা অঙ্কিতা।—ফাইল চিত্র।
|
এ দিন শিলিগুড়ির বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য অভিনন্দন বলেন, “অঙ্কিতা উত্তরবঙ্গের গর্ব। আগামী দিনে সরকারের তরফে অঙ্কিতাকে সমস্ত রকম সাহায্য করা হবে। প্রয়োজনে তিনি তাঁর বিধায়ক তহবিল থেকেও তাঁকে সাহায্য করবেন।” প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য অঙ্কিতার খেলা নিয়ে বরাবরই উৎসাহী ছিলেন। অঙ্কিতা জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার খবরে তিনিও খুশি। তিনি বলেন, “ওর জয় নতুন করে টেবল টেনিসের এই শহরকে গর্বিত করল। আন্তর্জাতিকস্তরে ও আরও বড় সাফল্য পাক এই কমনা করি।”
নর্থবেঙ্গল টেবল টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের কচিকাঁচারা অঙ্কিতার জাতীয় খেতাব জয়ের খবরে উচ্ছ্বসিত। বিশেষ করে ওয়াইএমএ ক্লাব-এর খুদে শিক্ষার্থীরা। তাদের অনেকের সঙ্গেই দীর্ঘ দিন ধরে অঙ্কিতা খেলেছেন। ওই সমস্ত খুদে খেলোয়াড়দের অভিভাবকেরাও অঙ্কিতার মতো সফল হওয়াকে তাঁদের ছেলেমেয়ের সামনে লক্ষ হিসাবে তুলে ধরছেন। গত ৬ মাস অবশ্য অঙ্কিতা ব্যক্তিগত কোচ তন্ময় দত্তের কাছে শিলিগুড়ি মিউনিসিপ্যাল রিক্রিয়েশন ক্লাবে অনুশীলন করছিলেন। রিক্রিয়েশন ক্লাবে অনুশীলন করতে গেলে সেখানেও উঠতি খেলোয়াড়দের অনেকের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। তাঁরাও অঙ্কিতার এ দিনের সাফল্যের খবরে খুশি।
শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের সচিব অরূপ রতন ঘোষ বললেন, “মহিলা হিসাবে মান্তুর পরেই শিলিগুড়ি থেকে অঙ্কিতা টেবল টেনিসে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হল। এটা আমাদের একটা বড় পাওয়া। আমরা মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের তরফে অভিনন্দন জানাই। ও আরও বড় হবে এই আশা করি। ও শহরে ফিরলে ক্রীড়া পরিষদের তরফে ওকে সংবর্ধনা জানাব।” অঙ্কিতার বাবা অসীমবাবু সেচ দফতরে কাজ করেন। দফতরের কর্মীরাও অঙ্কিতার খেলা নিয়ে অনেকেই খোঁঝখবর রাখেন। এ দিন খবর শুনে তাঁদের অনেকে-ও ফোন করেছেন। পাড়ার যে টেবল টেনিস অ্যাকাডেমিতে অঙ্কিতার হাতেখড়ি সেখানকার কর্ণধার অমিত দাম এ দিন টেলিভিশনে অঙ্কিতার খেলা দেখেছেন। অমিতবাবু বলেন, “প্রতিদ্বন্দ্বী অঙ্কিতার সামনে দাঁড়াতেই পারেনি। এই জয় অঙ্কিতার কাছ থেকে প্রত্যাশিত ছিল। গত বছরই অল্পের জন্য জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি।” অমিতবাবুর দাবি, প্রথম থেকেই আগ্রহ দেখে তিনি অসীমবাবুকে বলেছিলেন একদিন অঙ্কিতা বড় হবে। পাড়ার প্রবীণদের অনেকেই অঙ্কিতাকে অসীমবাবুর হাত ধরে দিনের পর দিন অমিতবাবুর অ্যাকাডেমিতে অনুশীলন করতে দেখেছেন। তাদের অনেকেই এ দিন খবর পেয়ে পুরনো স্মৃতি তুলে ধরে অঙ্কিতার প্রশংসা করেছেন।
উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা ক্রীড়া সংস্থার সচিবরাও মান্তু ঘোষের পর মহিলা বিভাগে শিলিগুড়ি থেকে অঙ্কিতার জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়াকে অন্যমাত্রা দিয়েছেন। জলপাইগুড়ি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সচিব অঞ্জন সেনগুপ্ত জানান, অঙ্কিতার জয়ে মেয়েরা টেবল টেনিসে আরও বেশি উৎসাহী হবে। গোটা উত্তরবঙ্গের টেবল টেনিস উজ্জীবিত হবে। কোচবিহারেও টেবল টেনিসের প্রসার ঘটছে। কোচবিহারের বাসিন্দা মেয়েদের বিভাগে জুনিয়র খেলোয়াড় সমৃদ্ধি বণিক ভাল খেলছেন। অঙ্কিতার এই সাফল্য তাদের উৎসাহী করবে বলে মনে করেন কোচবিহার জেলা ক্রীড়া সংস্থার সচিব বিষ্ণুব্রত বর্মন। বিষ্ণুবাবু বলেন, “প্রথমেই অঙ্কিতাকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। এই জয় উত্তরবঙ্গে টেবল টেনিসের আরও প্রসারে সহায়ক হবে। অঙ্কিতার সাফল্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। দেশের টেবল টেনিসে মান্তু ঘোষ, শুভজিৎ সাহা, সৌম্যজিৎ ঘোষরা আগেই এই সাফল্য পেয়েছেন। আগামী প্রজন্মের খেলোয়াড়রা তাঁদের দেখে এগোতে পারবেন।” |