বাংলার বর্তমান ক্রিকেট মহানায়ক যখন বোর্ডের ‘কয়েদি’
এখন স্বপ্ন দেখি স্ত্রী-পুত্রের
সামনে রঞ্জি জিতছি
টিভিতে ভারতীয় দলের জার্সিতে যদি স্টুয়ার্ট বিনিকে আজকের পর দেখেন, কতটা যন্ত্রণা হবে বুকে?
ক্লাবহাউস গেটের গায়ে কালো এসইউভি-টা ছুঁয়ে আছে শ’য়ে-শ’য়ে আদরের হাত। জানালার কাঁচ নামল, সযত্নে কয়েক জন গালে হাত বুলিয়ে দিলেন। মিডিয়ার বুম, ক্যামেরার দাপাদাপিতে এলআরএসের মুখ তো আর দেখা যাচ্ছে না। অতি কষ্টে উঁকি মেরে উত্তর আসে, “ধুর, কীসের আর যন্ত্রণা? আমি চাইব ও ভাল খেলুক। ইন্ডিয়া জিতুক। আমি এখানেই ঠিক আছি!”
কী বলবেন, বন্দি মহানায়ক?
বোর্ডের ‘কয়েদি’?
উপেক্ষার অন্ধকূপে নিক্ষিপ্ত এক মহাযোদ্ধার নিভৃত হাহাকার?
লক্ষ্মীরতন শুক্ল আজ আর ভারতীয় দল নিয়ে ভাবেন না। বাংলাকে রোজ-রোজ ফর্টি ফর ফোর থেকে টেনে তোলার পর নয়, প্রভূত প্রয়োজনীয় ‘ব্রেক থ্রু’ নিরন্তর দিয়ে যাওয়ার পরেও নয়। মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের ওয়ান ডে টিম ঘোষণা হলে তাৎক্ষণিক উত্তেজনায় মেজাজ গরম হয়, ঘনিষ্ঠ কাউকে কাউকে ফোন করেন। চেঁচামেচি করেন, তার পর আবার সব শান্ত, আবার ফিরে আসে প্রশান্ত মহাসাগরের প্রশান্তি। এলআরএস বর্তমানে খুব চেষ্টা করেন, লোকজনের সঙ্গে থাকতে। মা মারা গিয়েছেন কয়েক বছর হল। জীবনে যন্ত্রণা পেলে আগে তাঁর কাছে যেতেন। এখন বাবা, স্ত্রী, বড়দা প্রকাশ শুক্ল, কিংবা কাছের বন্ধুবান্ধব।
কেন?

“একা থাকলে ভয় লাগে। যদি বাদ পড়ার কষ্টটা ঘিরে ধরে,” অদ্ভুত এক আর্তি পাওয়া যায় বঙ্গ মহানায়কের গলায়। নিউজিল্যান্ড সফরের টিম থেকে বাদ পড়ার পর ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছিলেন, কিন্তু ওই যে পরিবার। বাবা বুঝিয়েছেন, চুপ করো। স্ত্রী স্মিতা বলেছেন, মিডিয়াকে যা বলেছ, তুলে নাও। একটা কথাও নয়। বরং ভাল হয়েছে। তুমি নিউজিল্যান্ড চলে গেলে বাংলার হয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে কে নামত?
ঠিকই। তিনি না থাকলে কে মুরলী কার্তিককে এলবিডব্লিউ করে বাংলাকে রক্তের প্রথম স্বাদ দিত? তিনি না থাকলে কে মহেশ রাওয়াতকে বোল্ড করে রেলওয়েজের অন্তর্জলীযাত্রার বন্দোবস্ত করে ফেলত? বঙ্গ ব্যাটিং দ্বিতীয় ইনিংসে যখন ‘কোমা’-র পথে, তখন লক্ষ্মীর ৭৬ রানের ইনিংসটা না থাকলে বাংলা জিতত, অতি বড় সমর্থকও বলতে পারবে?
তবু ভারত তাঁকে ডাকে না। জাতীয় নির্বাচক কমিটি তাঁকে ভাবে না। বোর্ড প্রবল ঢক্কানিনাদে তাঁকে বর্ষসেরা অলরাউন্ডারের পুরস্কার দেয়, কিন্তু নির্বাচনী টেবলে নামটা পর্যন্ত ওঠে না! যা দেখে উষ্মা তৈরি হয় বঙ্গ ক্রিকেটমহলে, উষ্মা তৈরি হয় পূর্বাঞ্চলের জাতীয় নির্বাচক সাবা করিমকে নিয়ে। বলা হয়, এত দিন বাংলায় ছিলেন, ক্যাপ্টেন হয়েছেন। তবু বাংলার ক্রিকেটারদের জন্য কী করলেন সাবা? বৈঠকে লক্ষ্মী-দিন্দাদের নাম উচ্চারণটাও কি করা যায় না? প্রাক্তন জাতীয় নির্বাচক ও বর্তমান বাংলা কোচ অশোক মলহোত্র বলে-বলে হাঁফিয়ে গিয়েছেন। বাংলা বনাম রেল কোয়ার্টার-যুদ্ধ দেখতে জাতীয় নির্বাচক বিক্রম রাঠৌর ছিলেন রবিবাসরীয় ইডেনে। “আর কত বলব? যখনই কোনও নির্বাচককে দেখি, বলি ছেলেটাকে তো দেখছ। কী খেলছে! এ বার নাও। বয়সের মতো ফালতু ব্যাপার তুলছ কেন?” বলে ফেলেন তিতিবিরক্ত অশোক। বাংলার নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান ও প্রাক্তন টেস্ট ক্রিকেটার দীপ দাশগুপ্ত কড়া প্রশ্ন তোলেন, নির্বাচনের পলিসি নিয়ে। বলে ফেলেন, “যদি ওদের পলিসি থাকে যে তরুণদের নেবে, লক্ষ্মীকে নয়, তা হলে ওকে ঘটা করে বর্ষসেরা অলরাউন্ডার করার মানেটা কী? সেটাও তুমি কোনও জুনিয়রকে দাও।” কেউ কেউ অসহ্য ঘৃণা থেকে সিএবি-কে ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে ফেলে দিচ্ছেন। প্রাক্তন বাংলা অধিনায়ক গোপাল বসু যেমন। বলে দিচ্ছেন, “একটা কথা আছে, ডেসপারেট সিচুয়েশন কলস ফর ডেসপারেট মেজার্স। সিএবি সব দেখেও দেখছে না কেন? কেন সাবা করিমকে কড়া ভাবে বলা হচ্ছে না, তুমি মিটিংয়ে গিয়ে কী করছ? আমাদের উত্তর চাই। কিন্তু সেটা তো সিএবি-র কাউকে বলতে হবে।”
বঙ্গ ক্রিকেটমহলের কারও কারও অভিমত, যত দিন না জন্মসূত্রে বঙ্গদেশীয় কেউ জাতীয় নির্বাচক হচ্ছেন, তত দিন লক্ষ্মীরতন শুক্লদের জন্য বলার কেউ থাকবে না! এলআরএস-রা ব্রাত্য ছিলেন। ব্রাত্য আছেন। ব্রাত্য থাকবেন। ভিনরাজ্যের কোনও পূর্বাঞ্চল নির্বাচক বৈঠকে টুঁ শব্দটাও করবেন না।
যা খুব ভাল জানেন বঙ্গ ক্রিকেটের বর্তমান মহানায়ক।
“আরে, পাঁচ-ছ’বছর আগে রঞ্জিতে সেকেন্ড হায়েস্ট রান করলাম। কেউ ডাকেনি। গত বছর থেকে ভাল খেলছি। চ্যালেঞ্জার ট্রফিতেও জায়গা হয় না। ভারত নিয়ে ভেবে আর কী হবে?” লক্ষ্মীর কথাগুলো শুনলে খারাপ লাগবে। কিন্তু পরবর্তী কথাবার্তা শুনলে বাঙালি হিসেবে গর্বিতও লাগবে। তিনি তো বলে দেবেন, বাংলা বললে তাঁর নিজ-পদবী পাল্টে ফেলে কোনও বাঙালি পদবী নিতে এতটুকু দ্বিধা নেই। বলে দেবেন, তাঁর পিতা-মাতা দু’টো। একটা জন্মসূত্রে পাওয়া। দ্বিতীয়টা ইডেন ও বাংলা! তিনি তো এটাও বলে দেবেন যে, ইন্ডিয়া ড্রেসিংরুমের বাইরে স্ত্রী-পুত্র দাঁড়িয়ে আছে, এমন স্বপ্ন আর দেখেন না। “বরং ভাবি, আমি রঞ্জি ট্রফিটা নিয়ে বেরোচ্ছি, আর ওরা বাইরে দাঁড়িয়ে আছে!’’
বাংলার জন্য, বাঙালির জন্য এমন ভাবেন ক’জন? ক’জন পারেন তাঁর মতো নিঃশব্দে জাতীয় নির্বাচকদের ‘অবিচার’-কে বারবার ‘বাপি বাড়ি যা’ করে ফেলে দিতে?
এলআরএস আর কোনও দিন নির্বাচকদের বলবেন না, ‘আমাকে কেন নিলে না’। বরং আমৃত্যু নিঃশব্দ বার্তা দেবেন, ‘দ্যাখো, আমাকে না নিয়ে কত বড় ভুল করলে!’ আজ থেকে তাঁর ক্রিকেটজীবন যত দিন চলবে, তত দিন। যত বার তাঁর ক্রিকেট-কেরিয়ারকে ‘মৃত’ বলে ধরে নেওয়া হবে, তত বার তিনি বাইশ গজে ‘বেঁচে’ উঠে বুঝিয়ে দেবেন ওটা আজও, বত্রিশেও প্রবল ভাবে ‘জীবিত’ আছে!

এক নজরে...
ইডেনে জিৎ

বাংলা বনাম রেল কোয়ার্টার-যুদ্ধ দেখতে ইডেনে হঠাৎই হাজির হলেন টলিউড অভিনেতা জিৎ। বাংলা অধিনায়ক লক্ষ্মীরতন শুক্ল-র ঘনিষ্ঠ বন্ধু জিৎ এ দিন বেশ কিছুক্ষণ ম্যাচ দেখেন। পরে লক্ষ্মী বলছিলেন, “জিৎ আমার কাছে অনুপ্রেরণা।”
সিএবি-র দশ লাখ
সাত বছর পর রঞ্জি সেমিফাইনালে ওঠার জন্য বাংলা টিমকে দশ লক্ষ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে জানাল সিএবি। প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়া জানিয়েছেন, ফাইনালে উঠতে পারলে টিমের জন্য আরও পুরস্কার অপেক্ষা করে আছে।
লক্ষ্মীর জরিমানা
ওভার রেট কম থাকায় লক্ষ্মীর একশো শতাংশ ম্যাচ ফি জরিমানা করল ভারতীয় বোর্ড। এ দিন নির্ধারিত সময়ে এগারো ওভার কম বল করেছিল বাংলা। যার কারণ পেসারদের দিয়ে বেশি ওভার করানো। দ্বিতীয় বার একই অপরাধ করলে এক ম্যাচের নির্বাসন হতে পারে বাংলা অধিনায়কের।
টিমে বদল
সোমবার সেমিফাইনালের বাংলা দল নির্বাচন। শোনা যাচ্ছে, বাদ পড়তে পারেন ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায়। ঢুকতে পারেন কৌশিক ঘোষ। শুভময় অনিশ্চিত। মনোজ তিওয়ারি নিয়েও সিদ্ধান্ত হবে সোমবারের বৈঠকে।

রঞ্জির ছবি তুলেছেন শঙ্কর নাগ দাস।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.