সদর শহরের ৬০ ভাগ রাস্তাই বেদখল
দ্রুত গতিতে মেদিনীপুর শহরের ফুটপাত চলে যাচ্ছে হকারদের দখলে। অস্থায়ীভাবে নয়, ফুটপাতের যত্রতত্র গড়ে উঠছে ইটের স্থায়ী কাঠামো। পাওয়া যাচ্ছে বিদ্যুত্‌ সংযোগও। আর হকারদের রাস্তা দখলের এই প্রতিযোগিতায় কমছে শহরের গতি। রাস্তা সঙ্কীর্ণ হয়ে পড়ায় দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বাড়ছে। এরকম চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে শহরে যান চলাচলের প্রয়োজনীয় রাস্তাটুকুও থাকবে না, তা কারও অজানা নয়। তবু পুলিশ থেকে প্রশাসন সকলেই নীরব। হকার সমস্যা মেটাতে পুরসভারও কোনও পরিকল্পনা নেই। মেদিনীপুর পুরসভার পুরপ্রধান প্রণব বসুর কথায়, “এটা একটা বড় সমস্যা ঠিকই। তবে এখনও এ ব্যাপারে তেমন কোনও পরিকল্পনা তৈরি করা যায়নি। তাছাড়া পুরসভার একার পক্ষে কিছু করাও কঠিন। প্রশাসনকেও এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে।”
বর্তমানে শহরে প্রধান রাস্তা রয়েছে ১৭ কিলোমিটার। তার মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ রাস্তাই হকারদের দখলে। বাকি রাস্তায় হকার নেই কেন? কারণ, শহরের ওই সমস্ত জায়গা ফাঁকা হওয়ায় হকাররা দোকান করলেও খদ্দের মিলবে না। তাই শহরের ব্যস্ততম অংশেই হকার সমস্যা তীব্র। শুধু ব্যবসার জন্য ফুটপাত দখল হচ্ছে এমন নয়, ফুটপাত ঘিরে তৈরি হয়ে যাচ্ছে ক্লাব, দলীয় কার্যালয়ও। যেখানে শাসক ও বিরোধী দল-কেউই কম যায় না। ফলে রাস্তাও ক্রমশ সঙ্কুচিত হচ্ছে। বাড়ছে যানজট। হকারদের দাপটে শহরের নিকাশি ব্যবস্থাও ভেঙে পড়ছে। ফলে অল্প বৃষ্টিতেই জল জমছে সদর শহরের রাস্তায়। ফুটপাতে যত্রতত্র গড়ে ওঠা ফাস্টফুডের দোকান নিয়েও সমস্যা রয়েছে। একে ফাস্টফুডের দোকানে জ্বালানো স্টোভ থেকে যে কোনও সময় আগুন লাগার সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া ওই সমস্ত দোকানে পেতে রাখা টেবিল-চেয়ারের জন্য রাস্তাতেও পথচারীদের হাঁটাচলা করা সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। সারা বাংলা হকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির নেতা শঙ্কর দাসের কথায়, “পুনর্বাসন না দিলে হকারদের তোলা যাবে না। আমরাও বুঝতে পারছি, দ্রুত গতিতে ফুটপাত বেদখল হচ্ছে। এমনকি দোকানের পরেও অনেকটা অংশ কিছু লোক ত্রিপল খাটিয়ে বা ডালা সাজিয়ে দখল করছে। এটা আমরা সমর্থন করছি না। কিন্তু গরিব মানুষই বা যাবে কোথায়। সত্‌ পথে রোজগার করে সংসার চালাতে দ্বিতীয় উপায়ই বা কী রয়েছে।”
মেদিনীপুর শহরের বেশিরভাগ রাস্তাই এখন হকারদের দখলে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
শহরে হকার উচ্ছেদের ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি এমন নয়। ১৯৯৮ সালের, ১৪ নভেম্বর শত বাধার মধ্যেও শহরের প্রাণকেন্দ্রে থাকা রিং রোডের দু’দিকের বেআইনি দখল উচ্ছেদ করা হয়ে হয়েছিল। শুধু দখলমুক্ত করাই নয়, পরবর্তীকালে বহুদিন হকারদের সেখানে বসতেও দেওয়া হয়নি। ট্রলি ভ্যানে করে কিছু হকার রাস্তায় দাঁড়াতেন ঠিকই, তবে হল্লা গাড়ির দাপটে তা দীর্ঘস্থায়ী হত না। প্রশাসনের নজরদারির অভাবে হকারদের দখলমুক্ত রাস্তা ফের চলে গিয়েছে হকারদের দখলে। রিং রোডের সাড়ে ৫ কিলোমিটার রাস্তা (রাজাবাজার পঞ্চুর চক থেকে এলআইসি, কেরানিতলা, বটতলা, গোলকুয়াচক হয়ে) পুরোটাই চলে গিয়েছে হকারদের দখলে। বর্তমানে শহরের কোনও রাস্তাই আর হকারমুক্ত নয়। দ্রুত গতিতে রাস্তার দু’দিকে থাকা ফুটপাত চলে যাচ্ছে বেআইনি দখলদারদের অধীনে। হাসপাতাল রোডের প্রায় ১ কিলোমিটার রাস্তা পুরোটাই চলে গিয়েছে হকারদের দখলে। কেরানিটোলা থেকে স্টেশন রোড প্রায় ২ কিলোমিটার রাস্তার বেশিরভাগ অংশই হকারদের দখলে। কেরানিটোলা থেকে জজকোর্ট হয়ে জুগনুতলা, জগন্নাথমন্দির হয়ে নতুনবাজার পর্যন্ত প্রায় ৫-৬ কিলোমিটার রাস্তাতেও হকারদের দাপট। বাম বিকাশ পরিষদ জোটের কাউন্সিলর নাজিম আহমেদের কথায়, “ভবিষ্যতে এটা সমস্যা তৈরি করবে তা ঠিক। তবে বর্তমান পুরবোর্ডকেই যা করার করতে হবে।”
হকারদের পুনর্বাসনের দাবি দীর্ঘদিনের। এমনকী পুনর্বাসন চেয়ে ১৯৯৯ সালে ৫৮৮ জন হকার পুরসভার কাছে আড়াই হাজার টাকা করে ১৪ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা জমাও দিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরেও পুনর্বাসন মেলেনি। সেই সময় শহরে হকার সংখ্যা ছিল মাত্র ১৮০০। বর্তমানে সেই সংখ্যাটা প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে বলেই শঙ্করবাবুর দাবি। তাঁর কথায়, “পুনর্বাসনের জন্য কোথায় কোথায় জমি রয়েছে তা-ও আমরা জানিয়েছিলাম। কিন্তু পুরসভা কোনও উদ্যোগ নেয়নি। আমরাও চাই শহর সুন্দর থাক। গতি বাড়ুক। রাস্তার ফুটপাত মানুষের চলাচলের জন্যই ফাঁকা থাক। কিন্তু পুনর্বাসন না দিলে গরিব মানুষ খাবে কী? লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করে তো দোকান ঘর কিনতে পারবে না।” হকারদের কথায়, “আমাদের পুনর্বাসন দিলেই চলে যাব। কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু পুরসভা উদ্যোগী না হলে আমরা কী করতে পারি?” এ বিষয়ে মেদিনীপুরের মহকুমা শাসক অমিতাভ দত্ত অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে প্রশাসনিক কর্তাদের ব্যাখ্যা, এই সমস্যার সমাধান করতে হলে সমস্ত রাজনৈতিক দলকেই এগিয়ে আসতে হবে। হকারদের নিয়েও আলোচনায় বসতে হবে। সব পক্ষ মিলে একটি রূপরেখা তৈরি করতে হবে। না হলে কিছু করা কঠিন। ভবিষ্যতে আদৌ এই সমস্যার সমাধান হয় কিনা সেটাই দেখার।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.