জঙ্গল থেকে গ্রামে ঢুকে পড়া বুনো হাতির দল তাড়াতে গিয়ে গ্রামবাসীদের হামলায় ছয় জন বনকর্মী জখম হয়েছেন। লাঠির আঘাতে জখম তিন বনকর্মীকে মাদারিহাট হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
রবিবার ভোরে ঘটনাটি ঘটেছে ফালাকাটা থানা এলাকার সাতপুকুরিয়া গ্রামে। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রাম সংলগ্ন খয়েরবাড়ি জঙ্গলে দু’মাস ধরে ৩৫টি হাতি আশ্রয় নিয়েছে। সন্ধ্যার পর খাবারের খোঁজে হাতিগুলি দল বেঁধে বিভিন্ন গ্রামে হানা দিয়ে জমির ফসল ও বাড়িতে মজুত করে রাখা ধান খেয়ে সাবাড় করে বনে ফিরছে। ইতিমধ্যে ওই হাতিগুলি ৭টি গ্রামে হানা দিয়ে ৬০ বাড়ি ভাঙচুর চালায় বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। |
ঘর ভাঙল হাতি। রবিবার সাতপুকুরিয়া গ্রামে। ছবি: রাজকুমার মোদক। |
রবিবার গভীর রাতে প্রথমে ময়রাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের তালুকের টারি গ্রামে ঢুকে বাসিন্দাদের ৪০ বিঘা আলু এবং বেগুন ক্ষেত মাড়িয়ে নষ্ট করে। গ্রামের সুপারি বাগানে ঢুকে গাছ উপড়ে ফেলে। রাত ১টা নাগাদ সাতপুকুরিয়া গ্রামে হানা দিয়ে স্থানীয় কৃষক বলরাম দাসের বাড়ির দুটি ঘর ভাঙচুর চালিয়ে ঘরে মজুত করে রাখা ৪০ মন ধান খেয়ে নেয়। এলাকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে এ খবর পাওয়ার পরে মাদারিহাট এলিফ্যান্ট স্কোয়াডের ৬ জন কর্মী রাত ২ টা নাগাদ গ্রামে পৌঁছে সার্চলাইটের আলো ফেলে এক ঘণ্টার চেষ্টা হাতি গুলিকে বনে ফেরাতে সক্ষম হন। বন কর্মীরা কাজ শেষ করে তিনটা নাগাদ গাড়িতে চেপে মাদারিহাটে রওনা হবার সময় আচমকা বাসিন্দাদের একাংশ লাঠি নিয়ে গাড়ি ঘিরে ফেলে। বন কর্মীদের টেনে গাড়ি থেকে নামিয়ে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। বনকর্মীরা পালাতে পারলেও তাঁদের গাড়ি হামলাকারীরা আটকে রাখে।
আলিপুরদুয়ারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আকাশ মেঘারিয়া রবিবর বলেন, “হামলাকারী গ্রামবাসীদের দ্রুত চিহ্নিত করে, তাদের ধরা হবে।” ঘটনায় উদ্বিগ্ন রাজ্যের বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন বলেন, “খাবারের সন্ধানে হাতি দল বেঁধে গ্রামে ঢুকছে। হাতি তাড়াতে যাওয়া বনকর্মীদের মারধর করার ঘটনা ঠিক নয়। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে তা নিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।”
এ দিন সকাল সড়ে ছ’টা থেকে টানা দুই ঘণ্টা গ্রামবাসী ফালাকাটা-মাদারিহাট রাস্তা অবরোধ করে রাখেন বাসিন্দারা। ওই আক্রমণের ঘটনায় বন দফতরের পক্ষে ফালাকাটা থানায় রবিবার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। কোচবিহারের ডিএফও রাজেন্দ্র জাখর বলেছেন, “বিষয়টি নিয়ে ফালাকাটা থানায় অভিযোগ জানানো হয়েছে। হাতি ঢোকার খবর পেয়ে সেখানে বন কর্মীরা পৌঁছলে যে ভাবে তাদের মারা হয়েছে তা মেনে নেওয়া যায় না।”
এলিফ্যান্ট স্কোয়াডের জখম কর্মী স্বপন ভট্টাচার্যের কথায়, “রবিবার রাতে মাদারিহাটের এক গ্রাম থেকে হাতি তাড়ানোর পর খবর পেয়ে আমরা গ্রামে ঢুকি। হাতি তাড়ানোর পর আমাদের উপর লাঠি নিয়ে তেড়ে আসে বাসিন্দারা। সেখান থেকে না পালালে আমাদের প্রাণে মরত হতে।” গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, খবর পাওয়ার আড়াই ঘণ্টা বাদে বনকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর কারণেই ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। অন্য দিকে, বুনো হাতির হানায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে শামুকতলা থানার ধওলা ১ গ্রামে। শনিবার রাতে রায়ডাকের জঙ্গল থেকে একটি দাঁতাল বের হয়ে গ্রামে তাণ্ডব চালায় বলে অভিযোগ। সে সময়ে দাঁতালের হামলায় সঞ্চারিয়া ওরাও (৪০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয় বলে বন দফতর জানায়। দাঁতালটি শুঁড়ে পেঁচিয়ে ওই ব্যক্তিকে ফেলে পিষে দেয়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাতে বন দফতরে খবর দেওয়া হলেও গ্রামে কেউ আসেননি। |