কোথাও রান্নাঘরের সমস্যা, কোথাও জ্বালানির, কোথাও বা রান্নার সরঞ্জামের।
সমস্যা না মেটায় হাওড়া জেলায় ৬২টি হাইস্কুলে এখনও চালুই হল না মিড-ডে মিল। ফলে, দুপুরের খাবার থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে ওই সব স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের। জেলা প্রশাসনের হুঁশিয়ারিতে ৩৭টি স্কুল চলতি মাসেই মিড ডে মিল চালু করবে বলে স্কুল শিক্ষা দফতরে মুচলেকা দিয়েছে। বাকি ২৫টি স্কুল অবশ্য এখনও নির্দিষ্ট ভাবে কবে প্রকল্পটি চালু করবে, তা জানাতে পারেনি।
রাজ্যের প্রাথমিক স্কুল এবং মিড-ডে মিল সংক্রান্ত বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত সদ্য নির্বাচিত পরিষদীয় সচিব তথা উলুবেড়িয়া দক্ষিণ কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক পুলক রায় বলেন, “যে ৩৭টি স্কুল জানুয়ারি মাসেই মিড-ডে মিল চালু করবে বলে লিখিত ভাবে জানিয়েছে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে তা চালু না হলে আমি নিজে সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে সেই সব স্কুলে গিয়ে সমস্যাগুলি খতিয়ে দেখব। কোনও সমস্যা থাকলে দ্রুত তা দূর করে মিড-ডে মিল চালু করা হবে।” বাকি ২৫টি স্কুলের ক্ষেত্রেও একই ভাবে নজরদারি করা হবে বলে পুলকবাবু জানিয়েছেন। একই বক্তব্য জেলা স্কুল পরিদর্শক তাপস বিশ্বাসেরও।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২০০৪ সাল থেকে রাজ্যের অন্যান্য জেলার সঙ্গে হাওড়াতেও প্রথম পর্যায়ে প্রাথমিক স্কুলগুলিতে মিড-ডে মিল চালু হয়। সরকারের তরফ থেকে স্কুলগুলিতে রান্নার সরঞ্জাম দেওয়া হয়। বানিয়ে দেওয়া হয় রান্নাঘর। পরবর্তী সময়ে কেন্দ্রীয় সরকার নির্দেশ দেয়, হাইস্কুলগুলিতেও অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মিড-ডে মিল চালু করতে হবে।
রাজ্য স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে প্রতিটি স্কুলে মিড-ডে মিল চালু করার বিষয় নিয়ে একাধিকবার বৈঠক করেছেন। তার পরেই নড়েচড়ে বসে হাওড়া জেলা প্রশাসন। মিড-ডে মিল চালু না-হলে স্কুলগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জেলা স্কুল পরিদর্শকের অফিস থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
ওই নির্দেশ মতো হাওড়া জেলার নিউ সেট আপ আপার প্রাইমারি (অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত) এবং হাইস্কুলগুলিতে ধীরে ধীরে মিড-ডে মিল চালু হয়। জেলায় ওই দু’ধরনের স্কুলের সংখ্যা ৬১৯টি। এর মধ্যে ৬২টি হাইস্কুল জ্বালানির সমস্যা, বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রীকে কী ভাবে খাওয়ানো হবে সেই সব কারণ দেখিয়ে মিড-ডে মিল চালু করার বিষয়টি এড়িয়ে যায় বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
জেলা প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, “ওই ৬২টি হাইস্কুলের কর্তৃপক্ষকে মিড-ডে মিল চালু করার জন্য বারবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা নানা সমস্যার কথা তুলেছেন। সব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ৩৭টি স্কুল কর্তৃপক্ষ এ মাস থেকেই মিড-ডে মিল চালু করবেন বলে মুচলেকা দিয়েছেন। বাকি ২৫টি স্কুল কর্তৃপক্ষও দ্রুত প্রকল্পটি চালুর আশ্বাস দিয়েছেন।”
কী সমস্যা হচ্ছে ওই সব স্কুলের?
উলুবেড়িয়া হাইস্কুলে এখনও প্রকল্পটি চালু হয়নি। প্রধান শিক্ষক মলয়কুমার খাটুয়া বলেন, “আমাদের রান্নাঘর তৈরি করে দেওয়া হলেও রান্নার সরঞ্জাম এখনও আসেনি। আমরা জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছি। রান্নার সরঞ্জাম এসে গেলেই মিড-ডে মিল চালু করে দেওয়া হবে।” বাগনানের পাইকপাড়ি হাইস্কুলেও এখনও প্রকল্পটি চালু হয়নি। প্রধান শিক্ষক অচিন্ত্য পাঁজা বলেন, “জ্বালানি সমস্যার জন্য এত দিন মিড ডে মিল চালু করতে পারিনি। তবে, এ মাসেই চালু করে দেব।” একই ধরনের সমস্যার কথা জানিয়েছেন আরও কয়েকটি হাইস্কুলের কর্তৃপক্ষ। |