|
|
|
|
রাজীবের পথেই উন্নয়নের স্বপ্ন ফেরি আন্দামানে
শঙ্খদীপ দাস • পোর্ট ব্লেয়ার |
আ-দিগন্ত জল এক দিকে। অন্য দিকে পাহাড়। ঢলে পড়া সূর্যের মায়াবি আলো তার গায়ে। কিন্তু আর পাঁচটা ভ্রমণপিপাসু বাঙালির মতো মুগ্ধতায় মশগুল নন তিনি। বরং পোর্ট ব্লেয়ারে পা রেখেই কাজের কথাটি বলে রাখলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। এক সময় রাজীব গাঁধী যার স্বপ্ন দেখেছিলেন।
শুধু আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ নয়, মূল ভূখণ্ডকেও বার্তা দিয়ে রাষ্ট্রপতি জানালেন, বিপুল সম্ভাবনা নিহিত রয়েছে এই আন্দামানে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য স্প্রিং-বোর্ড হয়ে উঠতে পারে এই দ্বীপগুলি। আর তাতে ভর করেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলি, এমনকী প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উন্নত রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ গড়ে তুলতে পারে নয়াদিল্লি। তাই আরও উন্নয়ন প্রয়োজন এই দ্বীপপুঞ্জের। যাতে বাণিজ্য ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে আন্তর্জাতিক মানচিত্রে একটি নজরকাড়া তালুক হয়ে উঠতে পারে এই দ্বীপপুঞ্জ।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে এই প্রথম আন্দামান নিকোবর সফরে এসেছেন প্রণববাবু। বিভিন্ন রাজ্যে গিয়েই নাগরিক সংবর্ধনা পেয়েছেন তিনি। কিন্তু মূল ভূখণ্ড থেকে বারোশো কিলোমিটার দূরে সাগরের কোল ঘেঁষা নেতাজি স্টেডিয়াম দৃশ্যতই ছাপিয়ে গেল তাদের। মাঠ জুড়ে কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রী নাচে গানে বরণ করে নিল রাষ্ট্রপতিকে। মুখ ফুটে না বললেও কার্যত বেরিয়ে এল নয়াদিল্লির কাছে দ্বীপপুঞ্জের প্রত্যাশার ছবিটা। তাদের হতাশ করলেন না রাষ্ট্রপতিও। উন্নয়নের বার্তা দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েই এসেছিলেন তিনি। গত কাল নেতাজি স্টেডিয়ামের মঞ্চে এবং আজ এখানকার আদিবাসী গবেষণা কেন্দ্র উদ্বোধন করে রাষ্ট্রপতি বলেন, “আন্দামানে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পরিকাঠামো উন্নয়নে স্থানীয় প্রশাসন বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছে। নতুন জাহাজ কেনা থেকে শুরু করে বিমান ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থারও উন্নতি হচ্ছে। এ ব্যাপারে আন্দামান-নিকোবর প্রশাসনকে সব রকম সাহায্য দিতে কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” আদিবাসী গবেষণা কেন্দ্রের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ওঙ্গি, গ্রেট-নিকোবারি-সহ সমাজের বিভিন্ন অংশের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি বললেন, “আদিবাসীদের মূল স্রোতে আনার পন্থায় হয়তো কোথাও ভুল ছিল। ওই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে তাই। আদিবাসীদের কাছে উন্নয়নের সুফল এমন ভাবে পৌঁছে দিতে হবে, যাতে তাঁদের নিজস্ব সত্তা ও সংস্কৃতি অটুট থাকে।
রাষ্ট্রপতির সচিবালয় সূত্রে বলা হচ্ছে, এগুলি নিছকই মন রাখার জন্য গালভরা কথা নয়, রাষ্ট্রপতি এ দিন আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের উন্নয়ন নিয়ে উপরাজ্যপাল প্রাক্তন লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ কে সিংহ এবং প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকও করেছেন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে সেতু বন্ধনের লক্ষ্যে এই দ্বীপপুঞ্জকে কী ভাবে ধাপ ধাপে এগোতে হবে, তা নিয়ে সবিস্তার আলোচনা হয়েছে। রাজীব গাঁধী এক সময় চেয়েছিলেন, আন্দামানকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হোক। দু’দশকেও তার কিছুই হয়নি। রাষ্ট্রপতির এই সফর সে দিক দিয়ে নতুন আশা জাগাল বলে মনে করছেন স্থানীয় প্রশাসনিক কর্তারা। দ্বীপপুঞ্জের প্রত্যাশাগুলি নিয়ে সরকারের কাছে রাষ্ট্রপতি সুপারিশ পাঠাবেন বলে তাঁদের আশা। উন্নয়ন বৈঠকের পাশাপাশি আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও এখানকার কম্যান্ডার-ইন-চিফ পি কে রায়ের সঙ্গে বৈঠক করেন রাষ্ট্রপতি।
এই সব বৈঠক সেরে দিনের শেষে যাত্রা হ্যাভলক দ্বীপে। কাল সকালেই ফিরতে হবে দিল্লি। রাতটুকু অবসর। সেই ফাঁকে রাধানগর সৈকতে বসে চা খেতে খেতে খানিক ক্ষণ নিসর্গের মাঝে ডুবে থাকা। |
|
|
|
|
|