তেমন বড়সড় কোনও আবদার নয়। খালি একটা জ্যান্ত ড্র্যাগন চেয়েছিল সোফি। বিজ্ঞানী ‘কাকুরা’ প্রথমে সে আবদার রাখতে পারেননি। সোফিকে চিঠি লিখে সেটা জানিয়েওছিলেন। কিন্তু বছর সাতেকের খুদের মন খারাপ হবে ভেবে শেষমেশ নিজেদের গবেষণাগার থেকে একটি ড্র্যাগন তৈরি করে সোফিকে পাঠিয়ে দিয়েছেন তারা। সমস্যা খালি একটাই। এ ড্র্যাগনের মুখ খুললে আগুনের হল্কা বেরোবে না। টাইটানিয়াম ধাতুতে গড়া এ ড্র্যাগন আসলে ‘থ্রি-ডি প্রিন্টিং’ বা ত্রিমাত্রিক ছাপার কারিকুরি।
শুনতে অদ্ভুত লাগলেও ব্রিসবেনের এই খুদে বাসিন্দার জন্য এমনই পথ বেছেছেন অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় বিজ্ঞান সংস্থার(সিএসআইআরও) কর্মীরা। কী-ই বা করা? শিশুর আবদার তো আর ফেলা যায় না। যদিও সোফির এই আর্জি প্রথম বার শুনেই নাকচ করে দিয়েছিলেন তার বাবা-মা। বড়দিন উপলক্ষে জ্যান্ত ড্র্যাগনের আর্জি জানিয়েছিল সে। অনেকটা ঠিক ‘হাউ টু ট্রেইন ইয়োর ড্র্যাগন’ বইয়ের ‘টুথলেস’ চরিত্রটার মতো। যার সঙ্গে অবসর সময়ে সে খেলবে। বাধ্য পোষ্যটির মতো সোফির সঙ্গে সবসময় থাকবে সে। কিন্তু এমন আজব চাহিদার কথা শুনে প্রথমেই পত্রপাঠ ‘না’ করে দিয়েছিলেন সোফির মা-বাবা। তাতে কি আর বোঝানো যায় খুদেকে? বাধ্য হয়ে তাই সোফিকে সিএসআইআরও-র বিজ্ঞানীদের চিঠি লেখার পরামর্শ দেন বাবা স্টুয়ার্ট। সোফির মায়ের বয়ানে, “আমরা চেয়েছিলাম বিজ্ঞানীরা ওকে বুঝিয়ে বলুন, এমনটা সম্ভব না।”
প্রথম দিকে, মা-বাবার ইচ্ছে মতোই সব হচ্ছিল। এ রকম ড্র্যাগন যে তৈরি করা সম্ভব নয়, সেটা চিঠিতে সোফিকে জানিয়েছিলেন সিএসআইআরও-র বিজ্ঞানীরা। একই সঙ্গে ক্ষমাও চেয়েছিলেন খুদের কাছে। চিঠিতে লেখা হয়েছিল, “ফড়িং (ড্র্যাগনফ্লাই) থেকে শুরু করে মল্লি ড্র্যাগনের(এক ধরনের টিকটিকি) উপরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছি। কিন্তু গত সাতাশি বছরে আমরা ড্র্যাগন বা ড্র্যাগনের ডিম তৈরি করে উঠতে পারিনি।” এবং সে ‘গাফিলতি’ স্বীকার করে ক্ষমাও চান তাঁরা। কিন্তু একই সঙ্গে সোফিকে ধন্যবাদও জানান তাঁরা। কারণ, খুদের এই আবদারের পর হয়তো ড্র্যাগন নিয়ে অন্য কোনও গবেষণার কথা ভাবতে পারবেন বিজ্ঞানীরা।
কিন্তু চিঠি পাঠিয়েও খুঁতখুঁতানি থামছিল না বিজ্ঞানীদের। শুক্রবার ব্লগে তাঁরা লিখেছেন, “সোফিকে আশ্বাস দিয়ে আমরা শুধু বসে থাকতে পারি না।” আর তার পরেই তার ইচ্ছেপূরণের জন্য ভাবনা-চিন্তা শুরু হয়। তারই জেরে মেলবোর্নের পরীক্ষাগারে জন্ম নেয় ‘টুথলেস’। তবে থ্রি-ডি প্রিন্টার থেকে। টুথলেস আসলে টাইটানিয়াম ধাতুতে গড়া। আকৃতি-প্রকৃতিতে সে আসল ড্র্যাগনের মতোই। অর্থাৎ দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা সবই রয়েছে তার। কিন্তু আসলে সে এক ধরনের ছাপা। বিজ্ঞানীদের দাবি, টাইটানিয়াম দিয়ে তৈরি হওয়ায় টুথলেসের শরীর বেশ শক্তপোক্ত, কিন্তু একই সঙ্গে হালকা। ফলে এই ড্র্যাগন যে ‘দীর্ঘজীবী’ হবেই, সে ব্যাপারে এক রকম নিশ্চিত তার স্রষ্টারা। আপাতত ‘ইলেকট্রক ব্লু’ এবং ধূসর রঙের ছোট্ট টুথলেসকে সোফির মেলবোর্নের বাড়ির দিকে রওনা করে দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
বড় আদরের সেই পোষ্যকে(হলই বা সে ত্রিমাত্রিক মুদ্রণের অবদান) পেয়ে সোফি কী করে, সেটাই দেখার। |