ভোল পাল্টাচ্ছে শহর, বলছে মেমারি
পুর পরিষেবা নিয়ে অসন্তোষ ছিল দীর্ঘদিনের। প্রথম বার পুরবোর্ডের ক্ষমতা হাতবদল হওয়ার পরে তাই পরিস্থিতি পাল্টানোর আশা করেছিলেন মেমারির বাসিন্দারা। গত সাড়ে তিন বছরে সেই আশা খানিকটা হলেও মিটেছে বলে মনে করছেন শহরবাসী। ন্যূনতম পরিষেবার নানা দাবি মেটার পাশাপাশি শহর আগের থেকে সুন্দর হচ্ছে বলেও মনে করছেন তাঁরা। তবে রাস্তা বা নিকাশি নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে কয়েকটি এলাকায়।
১৯৭৭ থেকে ২০১০-এর মে পর্যন্ত মেমারিতে কোনও ভোটেই হারেনি সিপিএম। ১৯৯৫ সালে মেমারি শহরকে ‘নোটিফায়েড এরিয়া’ থেকে পুরসভায় উন্নীত করা হয়। পুরবোর্ড দখল করে বামেরাই। বিধানসভা ভোটের আগে ২০১০ সালে রাজ্যে যে ৮২টি পুরসভায় ভোট হয়, তার মধ্যে ছিল মেমারিও। সিপিএমের এই ‘শক্ত ঘাঁটিতে’ তাদের কার্যত ধুয়েমুছে সাফ করে দেয় তৃণমূল। পুরসভার ১৬টি আসনই দখল করে তারা।
শহরের অনেক বাসিন্দার অভিযোগ, ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকলেও রাস্তা, আলো বা পানীয় জলের সমস্যা মেটানোর ব্যাপারে বিশেষ উদ্যোগী হয়নি বামেদের পুরবোর্ড। তখন ফুটপাথ চলে গিয়েছিল ব্যবসায়ীদের দখলে। সেই ধরনের নানা সমস্যার অনেকটাই এখন সুরাহা হয়েছে বলে মনে করছেন শহরবাসী। শিক্ষিকা সুলেখা সিংহের কথায়, “বছর তিনেক আগের মেমারির সঙ্গে এখনকার মেমারিকে মেলানো কঠিন। শহরটার ভোলবদল হচ্ছে।”
ত্রিফলা আলোয় সেজে উঠেছে মেমারি শহর। —নিজস্ব চিত্র।
কলকাতার ঠাকুরপুর এলাকার বাসিন্দা অনন্ত রায়চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসার কাজে মেমারি আসা-যাওয়া করেন। তিনি বলেন, “স্টেশন এলাকা হকারদের দখলে ছিল। হাঁটা যেত না। সেখানে এখন সুষ্ঠু ভাবে যাতায়াত করা যাচ্ছে।” মেমারির হাসপাতাল মোড় থেকে বামুনপাড়া, স্টেশন এলাকা থেকে চকদিঘি মোড় পর্যন্ত এলাকার রাস্তায় আলোও বেড়েছে বলে বাসিন্দারা জানান। অন্য আলোর সঙ্গে লাগানো হয়েছে ত্রিফলাও। শহরে নানা প্রান্ত ঘুরে দেখা যায়, দু’একটি বাদে ত্রিফলা স্তম্ভের সব আলোই জ্বলছে। বাসস্ট্যান্ড নতুন করে সাজানোর কাজ চলছে। স্থানীয় বাসিন্দা রজতকুমার দে-র দাবি, “আগে তো কিছুই ছিল না। সেখানে সাদা চোখে দেখে বুঝতে পারছি, ন্যূনতম চাহিদা মিটছে।”
শহরের বিভিন্ন রাস্তায় হকার বসা নিষিদ্ধ হয়ে হয়েছে। রাস্তার কাছে থাকা ব্যবসায়ীদের সরিয়ে রাস্তা চওড়া করা হয়েছে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, পাড়ায় পাড়ায় যে সব ছোট নিকাশি নালা রয়েছে, তা এখন উঁচু করা হচ্ছে। এর ফলে অল্পবৃষ্টিতে নর্দমার জল রাস্তায় উঠে আসবে না। পুরসভার কর্তারা জানান, ন্যূনতম চাহিদা মেটানোর সঙ্গে শহরের সৌন্দর্য্যায়নের দিকেও নজর দেওয়া হয়েছে। ফুটপাথগুলি সাজানো, শহরের দু’জায়গায় ফোয়ারা তৈরি, জি টি রোডে চকদিঘি মোড়ে যাত্রীদের বসার জায়গা-সহ নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চকদিঘি মোড় এলাকার ব্যবসায়ীরা জানান, বছর তিনেক আগেও যেখানে দুর্গন্ধময় পরিবেশ ছিল, এখন সেখানে যাত্রীদের বসার জায়গা, উঁচু বাতি ও ফোয়ারার জন্য পরিবেশই পাল্টে গিয়েছে।
স্বপন বিষয়ী
পুরপ্রধান
বিশ্বনাথ বিষয়ী
প্রাক্তন পুরপ্রধান

সদিচ্ছা ছিলই, তা ছাড়া পুরসভা,
প্রশাসন সবার সাহায্য পেয়েছি,
তাই উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে।
সর্বত্র যে সমস্যা মিটেছে, তা অবশ্য নয়। পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভও রয়েছে কিছু এলাকার বাসিন্দাদের। সুলতানপুর-সহ বিভিন্ন বস্তি এলাকায় রাস্তা সংস্কার হচ্ছে না বলে অভিযোগ। পাড়ায় পাড়ায় নিয়মিত নর্দমা সাফ করা হচ্ছে না বলেও এলাকাবাসীর দাবি।
শহরে যে উন্নয়ন হচ্ছে, মেনে নিয়েছেন প্রাক্তন পুরপ্রধান সিপিএমের বিশ্বনাথ বিষয়ী। তিনি বলেন, “আপাতদৃষ্টিতে উন্নয়ন হচ্ছে, ব্যক্তিগত ভাবে তা মানতে আমার অসুবিধা নেই।” তাঁরা কেন এই সব কাজ করতে পারলেন না, সে প্রশ্নে বিশ্বনাথবাবুর দাবি, “পঞ্চায়েত থেকে পুরসভায় উন্নীত হওয়ার পরে আমাদের মূল দায়িত্ব ছিল এলাকা পুনর্গঠন। আমরা সে দিকে লক্ষ রেখে মাটির রাস্তা পাকা করছি, নতুন বাসস্ট্যান্ড তৈরি করেছি। আধুনিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র থেকে পানীয় জল, সব ব্যবস্থা আমাদের আমলে হয়েছে।” সিপিএমের মেমারি ১ মধ্য লোকাল কমিটির সম্পাদক সনৎ সিংহের অবশ্য অভিযোগ, “আমরা ক্ষমতা ছাড়ার সময়ে ৫ কোটি ৯৬ লক্ষ টাকা পুরসভায় রেখে এসেছিলাম। সে টাকা ওড়ানো হচ্ছে। এর সঙ্গে মিউটেশন ফি বাবদ প্রচুর টাকা আদায় করছে পুরসভা।”
বর্তমান পুরপ্রধান স্বপন বিষয়ীর অবশ্য পাল্টা দাবি, “টাকা রাখা তো দূর, সিপিএম যাওয়ার সময়ে তিন কোটি টাকা ঋণ রেখে গিয়েছিল। আমরা তা শোধ করার পাশাপাশি নিজস্ব তহবিল থেকে ১ কোটি ১২ লক্ষ টাকা ব্যাঙ্কে জমা রেখেছি।” তাঁর বক্তব্য, “সদিচ্ছা ছিল। তার সঙ্গে পুরসভা-প্রশাসন থেকে সবার সহযোগিতার জন্য আমরা যে সব প্রকল্প জমা দিয়েছি, তা ফাইল-বন্দি হয়ে থাকেনি। সে জন্যই উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.