মন্ত্রীর ডাকে মিছিলে কোণঠাসা নেতারাই
পলক্ষ ছিল, দলের ব্রিগেড সমাবেশের প্রচার মিছিল। কিন্তু স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূলের সেই মিছিলে যোগ দিলেন দলে কার্যত কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়া নেতারাই। দেখা গেল না পুরসভায় গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা কাউন্সিলরদের। বর্ধমান শহরে শনিবার সেই মিছিলে অবশ্য হাঁটলেন বেশ কয়েক হাজার মানুষ।
বর্ধমানের টাউন হল থেকে শুরু হওয়া এই মিছিল শেষ হয় রাজবাটী চত্বরে। ছিলেন দুই বর্ষীয়ান নেতা সমীর রায় ও পরেশ সরকার। মিছিল শেষে রবিরঞ্জনবাবু বলেন, “দলের ব্রিগেড সভার প্রচারের জন্য এই মিছিল। দলের বর্ধমান শহর কমিটির সভাপতি হিসেবে আমি পুরসভার চেয়ারম্যান-সহ ৩৫ জন কাউন্সিলরকেই চিঠি লিখে মিছিলে যোগ দিতে অনুরোধ করেছিলাম। ১০-১২ জন এসেছেন। অনেকে আসেননি। তবে ওই দুই প্রবীণ নেতা যে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ফের মাঠে নেমেছেন, তাতে আমি খুশি।” মিছিলে ছিলেন পুরসভার দলনেতা শৈল ঘোষ। তবে শহরে না থাকায় দলের আর এক প্রভাবশালী নেতা সুজিত ঘোষ ছিলেন না বলে তৃণমূল সূত্রে খবর।
৩৫-০ ফলে বর্ধমান পুরসভায় জিতে আসার পরে সমীরবাবুকে পুরপ্রধান করার দাবি তুলেছিলেন শহরের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একাংশ। কিন্তু আট বারের কাউন্সিলর সমীরবাবুকে সেই পদে না বসিয়ে পুরপ্রধান করা হয় চিকিৎসক স্বরূপ দত্তকে। পুরপ্রধানের নাম ঘোষণার দিন এ নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভও হয়। তৃণমূল সূত্রের খবর, শহরে দলের সবচেয়ে পুরনো দুই নেতা সমীরবাবু ও পরেশবাবু পুরসভায় তেমন গুরুত্ব পাননি।
মিছিলে রবিরঞ্জনবাবুর সঙ্গে সমীর রায়, পরেশ সরকারেরা। —নিজস্ব চিত্র।
গত ২৯ ডিসেম্বর বর্ধমানের গোডাউন মাঠে তৃণমূলের জনসভায় এসেছিলেন মুকুল রায়। সেখানে পরেশবাবু ও সমীরবাবুকে প্রথমে মঞ্চে ডাকাই হয়নি। পরেশবাবু আগাগোড়া মঞ্চের পাশের একটি চেয়ারে বসেছিলেন। সমীরবাবু দাঁড়িয়েছিলেন মঞ্চের পাশে। পরে দলের জেলা (গ্রামীণ) সভাপতি স্বপন দেবনাথ অনুরোধ করলে ওই দুই নেতা মঞ্চে যেতে চাননি। সমীরবাবু দেড় ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন, আর মঞ্চে উঠবেন না বলে জানিয়ে দেন তাঁর এক অনুগামী। তবে মুকুল রায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে দু’জনেই পরে মঞ্চে যান।
তৃণমূলের একটি সূত্রে খবর, পুরসভার বেশ কিছু কাজকর্ম নিয়ে ইতিমধ্যে দলে অসন্তোষ দানা বাঁধতে শুরু করেছে। গত ২-১০ জানুয়ারি উৎসব ময়দানে ‘বর্ধমান পুর উৎসব’ আয়োজিত হয়। তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, রাজ্যে সরকার পরিচালিত মেলা বা উৎসবে মুখ্যমন্ত্রীর ছবি টাঙানো হয়। কিন্তু বর্ধমান পুর উৎসবে কোথাও তা হয়নি। এই ঘটনায় দলের অনেক নেতাই ক্ষুব্ধ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এমনই এক নেতা বলেন, “পুরপ্রধান তৃণমূলে এসেছেন কয়েক বছর। উদ্বোধনের দিন তিনি এক বারও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম করেননি। মুখ্যমন্ত্রীর ছবি নেই কেন, সে প্রশ্নে পুরপ্রধান স্বরূপবাবু অবশ্য তখন দাবি করেছিলেন, মঞ্চের এক পাশে টিভিতে মুখ্যমন্ত্রীর নানা কর্মসূচির কথা ঘোষণা করা হচ্ছে। কিন্তু সেই টিভিতেও কিছু দেখানো হয়নি বলে তৃণমূলের একাংশের দাবি। ঘটনার কথা শুনে উৎসব কমিটির যুগ্ম সম্পাদক খোকন দাস বলেছিলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর ছবি অবিলম্বে টাঙানো হবে।” তা অবশ্য আর হয়নি।
শহরকে যানজট মুক্ত করতে পুরসভা তিনকোনিয়া থেকে তুলে শহরের দু’প্রান্তে বাসস্ট্যান্ড চালু করেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও যানজট কমেনি বলে অভিযোগ শহরবাসীর। ক্ষোভ তৈরি হয়েছে সে নিয়েও। পরেশবাবু বা সমীরবাবু পুরসভার কাজকর্ম নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে তাঁদের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, দলের একটি পক্ষ কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে বুঝে তাঁরা ঘুরে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। পাশে পাচ্ছেন দলের অন্য বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের। ওই দুই প্রবীণ নেতা অবশ্য বলছেন, “মন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিতেই মিছিলে গিয়েছি।”
মিছিলে যোগ না দেওয়া কাউন্সিলররা না যাওয়ার কারণ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। পুরপ্রধান স্বরূপবাবুর সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.