উদ্বোধনের আট বছর পার, অথচ দুর্গাপুরের একমাত্র সরকারি আদিবাসী ছাত্রীনিবাসের সবক’টি আসন কখনও ভর্তিই হল না। আবার এ ধরণের ছাত্রীনিবাসের খোঁজ না পেয়ে বেশি খরচে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে হচ্ছে একাধিক আদিবাসী ছাত্রীকে।
বর্ধমান, বাঁকুড়া, বীরভূম ও পুরুলিয়ার বহু আদিবাসী ছাত্রছাত্রী দুর্গাপুরে পড়াশোনা করেন। শহরের তিনটি ডিগ্রি কলেজ ছাড়াও অগুনতি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ম্যানেজমেন্ট কলেজে পড়েন তাঁদের অনেকেই। কিন্তু দুর্গাপুরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকার খরচ তুলনায় বেশি হওয়ায় সমস্যায় পড়তে হয় অনেককেই। সেই সমস্যা মেটাতেই শহরে আদিবাসী ছাত্রীনিবাস গড়ার উদ্যোগী হয় অনগ্রসর সম্প্রদায় কল্যাণ বিভাগ। সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিল দুর্গাপুর পুরসভাও।
২০০৩ সালের ২৩ এপ্রিল ওই ছাত্রীনিবাসের শিলান্যাস করেন অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের প্রতিমন্ত্রী উপেন কিস্কু। প্রায় ৯০ একর জমির উপরে শুরু হয় দ্বিতল ভবন নির্মাণের কাজ। ২০০৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ৩৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ওই ছাত্রীনিবাসের উদ্বোধন করেন উপেনবাবু। একাদশ থেকে স্নাতকোত্তর ছাত্রীদের জন্য ১০টি ঘর রয়েছে। প্রতিটিতে ছ’জন থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে ক্যারাম, টেবিল-টেনিস খেলার ব্যবস্থা। ছাত্রী পিছু খাওয়ার খরচ বাবদ সরকার দেয় সাড়ে সাতশো টাকা। |
অথচ, বর্তমানে মাত্র ২৩ জন রয়েছেন সেখানে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার নয়াগ্রামের অঞ্জনা কিস্কু কয়েক বছর আগে বাবার চাকরিসূত্রে দুর্গাপুরে আসেন। এখন মাইকেল মধুসূদন কলেজের ইংরাজি স্নাতক স্তরের ছাত্রী তিনি। বাবা অন্যত্র চলে গেলেও অঞ্জনার এই শহরে থাকার কোনও সমস্যা হয়নি। কারণ তাঁকে ছাত্রীনিবাসের সন্ধান দিয়েছিলেন তাঁর বাবাই। অঞ্জনা জানান, বাইরে থাকতে গেলে বিশেষ করে মহিলাদের যে সমস্ত সমস্যায় পড়তে হয়, সরকারি ছাত্রীনিবাসে থাকার দরুণ তাঁকে তার সম্মুখীন হতে হয় না। অঞ্জনার মতোই এখানে রয়েছেন তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী চন্দনা টুডু, দ্বিতীয় বর্ষের আদুরি টুডু, প্রথম বর্ষের পড়ুয়া লক্ষ্মী টুডু। এঁদের কেউ পুরুলিয়া থেকে, কেউ বীরভূমের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে, আবার কেউ এসেছেন কাছেই পানাগড় থেকে। কিন্তু এঁদের কেউই এই ছাত্রীনিবাসের কথা সরকারি ভাবে জানতে পারেননি। বেশিরভাগই খোঁজ পেয়েছেন গ্রামের কোনও প্রাক্তনী অথবা পরিচিত কারও থেকে। ওই ছাত্রীদের ক্ষোভ, আদিবাসী ছাত্রীদের অনেকেই আসা-যাওয়ার সমস্যা, আর্থিক দুরবস্থায় পড়াশোনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। অথচ এখানে কত ঘর ফাঁকা পড়ে, কেউ জানেই না। তাঁদের দাবি, প্রচার করা হলে আরও অনেকেই সুফল পেতেন।
ছাত্রীনিবাসের মেট্রন শীতলী সোরেন বলেন, “এখানকার পরিকাঠামো ভাল। কিন্তু খবর না পাওয়ায় অনেকে আসতে পারেন না।” ছাত্রীনিবাস সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের কলেজগুলিতে ভর্তির সময় মাঝেমাঝে নোটিস দেওয়া হয়। কিন্তু তা প্রতি বছর দেওয়া হয় কি না, সে নিশ্চয়তা মেলেনি। ছাত্রীনিবাসের সুপারিন্টেন্ডেন্ট অর্পণা কুণ্ডু অবশ্য এ ব্যাপারে কোনও কথা বলতে চাননি। দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক কস্তুরী সেনগুপ্ত বলেন, “সরকারি প্রকল্পের সুফল যাতে নির্দিষ্ট মানুষজনের কাছে পৌঁছয় ও উপযুক্ত প্রচার পায়, সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে কথা বলে সে ব্যবস্থা করা হবে।” |