|
|
|
|
দেব বন্ধু, জিতদা ফ্যামিলি |
আর ইন্ডাস্ট্রির বুম্বাদা তাঁর বুম্বামামু। কিন্তু এ সবের মধ্যেও টালিগঞ্জের অন্যতম
অগ্রগণ্য নায়ক তিনিই। সোহম।
তাঁর মুখোমুখি ইন্দ্রনীল রায়। |
পার্ক হোটেলের ‘দ্য ব্রিজ’য়ে তখন দু’টো ফোন নিয়ে বসে আছেন তিনি। আগের দিন রাতে শো করে বাড়ি ফিরেছেন সকাল ৬টায়। একটু ঘুমিয়ে, সেলুনে চুল কেটে সোজা ডিক্টাফোনের সামনে।
|
একটু চা অর্ডার করি?
শিয়োর।
আপনার তো আবার সুগার-ফ্রি?
হ্যাঁ, সুগার ফ্রি। কখনও নো সুগার।
এটা কি সেই ডায়াবেটিস ৫০০-য় পৌঁছনোর পর থেকেই?
ইয়েস, অ্যাবসোলিউটলি। ডায়াবেটিস আমার ঠাকুমার ছিল, আমি টেনশনও করতাম খুব। সেই থেকেই খুব অল্প বয়সেই ডায়াবেটিক আমি।
তখন আপনার বয়স কত?
তখন কত হবে, ২৩ বোধহয়। এটা আমাদের জীবনের একটা অভিশাপ বলতে পারেন। তবে এটাও বলছি, ডায়াবেটিস নিয়ে কিন্তু সব করা যায়। যাঁরা আমার মতো ডায়াবেটিক, তাঁদের বলি, ঠিকঠাক ডায়েট করলে আর রেগুলার মনিটর করলে ডায়াবেটিসকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আর এই ব্যাপারে আমার গুরু একজনই...
ওয়াসিম আক্রম?
হ্যাঁ, আবার কে? ছোটবেলায় বোলিংয়ের ফ্যান ছিলাম। বড় বয়সে ভদ্রলোক যে ভাবে ডায়াবেটিসের মোকাবিলা করেছেন, সেটার জন্য ওঁর ফ্যান।
ডায়াবেটিসের জন্য কি না জানি না, আপনাকে কিন্তু সুইট, চকোলেট বয় হিরো বলেন ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই।
হা হা হা! হ্যাঁ জানি। কিন্তু শুধু
লুকের ওপর যাবেন না। আমি প্রচণ্ড রগচটা।
|
|
সেটা শুনেছি। আপনি নাকি রেগে গেলে রাস্তায় নেমে লোককে মারেন?
হ্যাঁ, হ্যা। প্রচুর মাপরিট করেছি। এখনও করি।
মানে সোহম হিসেবে নাম হয়ে যাওয়ার পরেও করেছেন?
আরে হ্যাঁ, একেবারে রাস্তায় নেমে বাওয়াল যাকে বলে, তাই করেছি। সিটি সেন্টারে সে দিন তো প্রচণ্ড মারামারি করলাম। বেশ কয়েকটা ছেলেকে হেব্বি মারলাম। বৌ ছিল আমার সঙ্গে।
এমন সময় বৌ আঁতকায়?
আঁতকায়, আঁতকায়। ওর জন্যই অ্যাভয়েড করি আজকাল। বাট মাঝে মাঝে আগের মতো রগচটা হয়ে যাই (হাসি)।
অন্য প্রসঙ্গে আসি। ইন্ডাস্ট্রিতে আপনি বোধহয় একমাত্র ফ্রন্টলাইন কমার্শিয়াল হিরো, যিনি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে বুম্বা মামু বলেন?
ইয়েস। সেই ‘ছোট বৌ’-য়ের সময় থেকে আলাপ। তখন আমার তিন বছর বয়স। তখন আমি ‘মাস্টার বিট্টু’। আমি বোধহয় ৬০টার বেশি ছবিতে বুম্বাদার ছোটবেলা করেছি। অথবা বুম্বাদার ছেলের রোলে অভিনয় করেছি। সেই থেকেই আমার কাছে উনি বুম্বামামু। এই স্টুডিয়ো থেকে সেই স্টুডিয়ো ওঁর কাঁধে কাঁধে ঘুরতাম।
শুনেছি আপনাকে নাকি কেরিয়ার অ্যাডভাইসও দেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়?
হ্যাঁ, দেন তো। আমার কোনও প্রব্লেম হলে আমি বুম্বামামুর কাছে যাই। আজ থেকে চার-পাঁচ বছর আগে খুব প্রব্লেমে পড়েছিলাম। তখন বুম্বামামুর কাছে গিয়েছিলাম। সব শুনে বুম্বামামু বলেছিলেন, “তুই যদি এই প্রব্লেমেই ভেঙে পড়িস, আমার প্রব্লেম শুনলে তো মরে যেতিস। যা, মন দিয়ে কাজ কর।” ওই অ্যাডভাইসটা আমার জীবন পাল্টে দিয়েছিল।
কী প্রব্লেম হয়েছিল জীবনে?
তখন আমি কলেজে পড়ি। বাবার ব্যবসা খুব ডাউন। মানে ছ’মাসের মধ্যে আমরা সাঙ্ঘাতিক ভালো অবস্থা থেকে যা-তা অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছিলাম। তখন মা
বাড়িতে খাবার পাঠানোর কাজ নিলেন। অন্য কোনও বাড়ি থেকে চিকেন অর্ডার করলে সেই থেকে
এক পিস আমার জন্য রেখে
দিতেন। আমি বেহালা থেকে
হাঁটতে হাঁটতে সাউথ সিটি-তে কলেজ
করতে যেতাম। আর রোজ লেক কালীবাড়ি ক্রস করার সময়
বলতাম, “ঠাকুর, আজ আমার এই সময়। কিন্তু দেখো, একদিন
আমি নিজের পায়ে দাঁড়াবই।’’ আজও যত বার লেক কালীবাড়ি ক্রস করি, তত বার ওই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে।
সেই সময় তো আপনি ‘বাজিমাত’ করছিলেন?
হ্যাঁ, ‘বাজিমাত’ করছিলাম। প্রোডিউসর ছিল পীযূষ সাহা। বাপরে, বিরাট কষ্ট দিয়েছিলেন আমায়।
কী রকম?
আমার সঙ্গে একটা কনট্র্যাক্ট করেছিলেন। কিন্তু কনট্র্যাক্টের কোনও ক্লজ রাখেননি। আমার গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে আমি ফোনে কথা বললে আমাকে যা-তা গালাগালি দিতেন। সেই সময় ‘নীল আকাশে চাঁদনি’ বলে একটা ছবির প্ল্যান করা হচ্ছিল। আমাকে বলা হয়েছিল আমি করছি। তার পর শ্যুটিংয়ের তিন দিন আগে শুনলাম আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ওই এক দিন আমার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গিয়েছিল।
তার পর?
তার পর কাঁদতে কাঁদতে রাজদা (চক্রবর্তী)কে ফোন করলাম। বললাম, আমি কাজ না পেলে মরে যাব। সেই রাজদা তখন সব ব্যবস্থা করে আমাকে ‘প্রেম আমার’ ছবিতে নিলেন। ব্যস্, তার পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি।
খারাপ লাগে যখন দেখেন একটা
ফিরে নিশ্চয়ই আর তাকাতে হয়নি?
কিন্তু কমার্শিয়াল ছবির হিরোদের মধ্যে প্রসেনজিৎ, দেব, জিত-য়ের
পর আপনার নাম আসে। এই চার নম্বর পজিশন নিয়ে আপনি খুশি?
দেখুন, বুম্বামামুকে ওই লিস্টে রাখবেন না। উনি অন্য লেভেল। তবে হ্যাঁ, চার নম্বর পজিশন নিয়ে আমি মোটেও খুশি নই।
‘চাঁদের পাহাড়’ করে দেব অনেকটা এগিয়ে গেলেন?
হ্যাঁ, হ্যাঁ। খুব খারাপ লাগে। নিশ্চয়ই মনে হয় এই আমি যদি পেতাম ছবিটা। তবে আশাবাদী, চান্স আমি পাবই।
আপনার পরের ছবি ‘বাঙালি বাবু দেশি মেম’ তো ২৪ জানুয়ারি রিলিজ করছে?
হ্যাঁ, ২৪ জানুয়ারি। আমি আর মিমি আছি। পুরোপুরি কমার্শিয়াল ঘরানার ছবি। এ ছাড়া অন্য ধরনের ছবিও করেছি একটা। সেটা বিরসা দাশগুপ্তর ছবি। ওখানেও কমার্শিয়াল এলিমেন্ট রয়েছে। কিন্তু বেশ শহুরে ছবি। দু’টো পর্যায়েই কাজ করতে চাই। দেব কিন্তু দেখিয়ে দিয়েছে, কমার্শিয়াল হিরোরাও অন্য রকম ছবি করতে পারে। এবং এখানে একটা অন্য জিনিসও হচ্ছে।
কী সেটা?
আমরা যারা কমার্শিয়াল হিরো, তাদের কিন্তু দর্শক অন্য ধরনের ছবিতে মেনে নিচ্ছে। কিন্তু ধরুন পরম। তাকে কিন্তু কমার্শিয়াল ছবির হিরো হিসেবে মানুষ মেনে নেবে না।
আপনি বোধহয় খুব একটা ডিপ্লোম্যাসির ধার ধারেন না, তাই না?
হা হা হা। এ বাবা! বেশি কিছু বলে ফেললাম নাকি? কী করব! অত মেপেজুপে কথা বলতে পারব না। যেটা মনে হয়, সেটাই তো বলব নাকি...
শেষ প্রশ্ন। তা হলে বলুন, দেব আর জিতের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কী রকম?
দেব আমার বন্ধু।
আর জিত?
জিতদা ফ্যামিলি। এই উত্তরেও কিন্তু কোনও ডিপ্লোম্যাসি নেই। |
ছবি: কৌশিক সরকার। |
|
|
|
|
|