সম্পাদকীয় ...
বিচ্ছেদের মান
লা হয়, কাহার সহিত কাহার বিবাহ হইবে, সেই বন্দোবস্ত স্বর্গের দেবতারা পূর্বেই করিয়া রাখেন। অস্কার ওয়াইল্ড কৌতুক করিয়া বলিয়াছিলেন, ‘ডিভোর্সেস আর মেড ইন হেভ্ন’। বিবাহবিচ্ছেদই স্বর্গীয় ও দেবতাদের আশীর্বাদধন্য, বিবাহ নহে। হয়তো বৈঠকখানার আড্ডায় অনেকেই তাঁহার সহিত একমত হইবেন, কিন্তু ভোট লইলে দেখা যাইবে, বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানটির প্রতি সমীহ ও দুর্বলতা অধিকাংশেরই রহিয়াছে। কোনও ক্ষেত্রে উহা যদি শ্বাসরোধকারী বন্ধনেও পরিণত হয়, কেহ তাহা হইতে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করিলে, বন্ধু বা সমাজ, সকলেই তাহাকে প্রথমে নিরস্ত করিতে উদ্যোগী। কোনও কিছু ভাঙিয়া যাইবার অপেক্ষা অটুট থাকা ভাল, এই সরলীকৃত ধারণা, এবং যে কোনও মূল্যে স্থিতাবস্থা বজায় রাখিবার ভীরু সংকল্প, এইগুলি হইতেই এমন প্রবল বিবাহ-সমর্থন। আদালতও ডিভোর্সকামী দম্পতিকে বারংবার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করিতে বলেন, সাত বৎসর একত্র থাকিয়া যাঁহারা আজ ভিন্ন পথে যাইতে চাইতেছেন, তাঁহাদের সাত দিন পুরীতে কাটাইয়া সম্পর্ক মেরামত করিয়া লইবার পরামর্শ দেন। মুশকিল হইল, পারস্পরিক সম্পর্কের মাধুর্য থাকিলে বিবাহ যেমন এক অসামান্য সুখদ অভিজ্ঞতা, দুই জনের মধ্যে কেবল তিক্ততা ও বিদ্বেষ অবশিষ্ট থাকিলে তাহা যে তেমনই অসহনীয় এক নরককুণ্ড, এই কথাটি সকলেই বিস্মৃত হন। ফ্রান্স সম্প্রতি এই চিন্তাধরনটির বিপরীতে যাইয়া, দম্পতির দুই জনেরই সম্মতিক্রমে যে বিচ্ছেদ, তাহাকে সহজতর করিবার জন্য এমন ব্যবস্থা ভাবিতেছে, যেখানে কোনও বিচারকেরও প্রয়োজন হইবে না, বিচ্ছেদটি আদালতের সাধারণ করণিকও মঞ্জুর করিতে পারিবেন। রক্ষণশীল মহল হইতে আপত্তি উঠিয়াছে: এমন সহজ উপায় দেখিয়া অধিকসংখ্যক যুগল বিচ্ছেদ চাহিবেন। যুক্তিটি হাস্যকর, কারণ আইন দেখিয়া অপ্রেম জন্মায় না; আর মানবাধিকার-বিরোধীও, কারণ যাঁহারা পরস্পরের সান্নিধ্য হইতে মুক্তি চাহেন, তাঁহাদের কেবল আইন-প্রক্রিয়ার জটিলতার ভয়ে একত্র থাকিতে বাধ্য করা কি ভদ্রলোকের কর্ম?
যেহেতু বিবাহ সমাজের পক্ষে অতিশয় উপকারী বলিয়া অধিকাংশের ধারণা, সেই হেতু সম্পর্কটির যূপকাষ্ঠে উভয়কে নিজ স্বতঃস্ফূর্ততাকে বলি দিতে হইবে, এই ভার দম্পতির স্কন্ধে চাপাইতে কাহারও দ্বিধা ঘটে না। কিন্তু দুই জন মানুষ পরস্পরের সহিত শরীর মনোভাব ও দৈনন্দিন অস্তিত্ব ভাগ করিয়া লইবেন, আর তাঁহাদের আনন্দ ও ইচ্ছাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হইবে না, কেবল কর্তব্য ও সমাজকল্যাণের বেদি মুছিয়া দিন কাটাইতে হইবে, ইহা তাঁহাদের শ্বাসসংলগ্নতাকেই অপমান করে। একত্র থাকিতে ইচ্ছা হইয়াছে বলিয়া যাহারা বিবাহ করিয়াছিল, আজ বিবাহ করিয়া ফেলিয়াছে বলিয়াই অনিচ্ছা সত্ত্বেও একত্র থাকিয়া যাইবে, এই মত কার্য-কারণ ক্রমটিকেই ঘুরাইয়া দেয়। ‘বিবাহিত’ মানুষ তো ‘দণ্ডিত’ নহে। আসলে মানুষ স্বাধীন ইচ্ছানুযায়ী সম্পর্ক গড়িলে-ভাঙিলে সমাজের কিছু অসুবিধা রহিয়াছে। কিন্তু সমষ্টির সুবিধার জন্য ব্যক্তিকে তাহার ঘনিষ্ঠতম মানচিত্রেও আত্মতঞ্চকতা করিতে হইলে, সেই তীব্র অসুখী ব্যক্তি দিয়া গঠিত সমাজ কি এক সার্থক ভবিষ্যতের জন্ম দিতে পারিবে? ‘মিলন’ শব্দটি ভাবিলে যতই প্রসন্নতা ক্ষরিত হউক, বাস্তবে বহু সম্পর্কই এমন স্তরে উপনীত হয়, যখন বিচ্ছেদ অধিক শান্তি ও প্রসন্নতার জন্ম দিবে। যেন তেন প্রকারেণ একটি রসহীন রিক্ত শুষ্ক সম্পর্ককে টানিয়া যাইতে হইবে, তাহাতে অন্তরের অনুমোদন থাকিবে না, এই ফতোয়া বিবাহের মূল নির্যাসটিকেই দলিয়া দেয়, তাহা হইল: প্রেম। যে সম্পর্ক হইতে প্রীতি শ্রদ্ধা সহমর্মিতা চলিয়া গিয়াছে, তাহা স্বীকার করিয়া লইয়া সম্পর্কটি ভাঙিয়া দিবার মধ্যেই সম্পর্কটির প্রতি অধিক শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। রাষ্ট্রকেও ইহা বুঝিতে হইবে, বিবাহকে যথাযথ সম্মান করিতে হইলে, বিবাহবিচ্ছেদকেও সমান সম্মান করিতে হইবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.