মাইগ্রেশন দ্রুত ‘পাইয়ে’ দিতে
দালাল-রাজ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে
লকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন ক্যাম্পাস। কলেজ স্ট্রিটের দিকে বিল্ডিংয়ের গায়ের কাউন্টারে মেলে মাইগ্রেশন সার্টিফিকেটের ফর্ম। ফর্ম নিয়ে বেরোনোর মুখেই এক ব্যক্তির মুখোমুখি। বেশ কৌতুহলের সঙ্গেই তিনি জানতে চাইলেন, সার্টিফিকেটটা জরুরি কি না। জরুরি জানাতেই এতটুকু সময় নষ্ট না করে সাফ বললেন, তাঁর সাহায্য ছাড়া কোনও ভাবেই সময়ের মধ্যে তা হাতে পাব না। কিছু টাকা দিতে হবে শুধু। ব্যস! সার্টিফিকেট হাতে পেয়ে যাব ঠিক সময়েই!
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী হিসেবে পরিচয় দিলেও ওই ব্যক্তি আসলে দালাল। কাউন্টারের বাইরে তো বটেই, ভিতরেও ওঁত পেতে থাকে শিকার ধরার জন্য। টার্গেট সার্টিফিকেট নিতে আসা এমনই সব প্রাক্তন পড়ুয়ারা। খাস কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরেই অবাধে চলছে এই দালাল-রাজ। কর্তৃপক্ষের দাবি, এই পরিস্থিতি বদলাতে কাউন্টারের ভিতরে নিরাপত্তারক্ষীর ব্যবস্থা হয়েছে। কিন্তু কাউন্টারের বাইরে যে দালালেরা রয়ে গিয়েছেন বহাল তবিয়তেই, অভিজ্ঞতাই তার প্রমাণ।
কী ভাবে কাজ করেন এই দালালেরা?
ধরা যাক, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও প্রাক্তন পড়ুয়ার মাইগ্রেশন সার্টিফিকেট প্রয়োজন। কলেজ স্ট্রিটের দিকের ওই নির্দিষ্ট কাউন্টার থেকে ফর্ম নিয়ে পূরণ করে তাঁকে জমা দিতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরের একটি কাউন্টারে। এই ফর্ম নিতে কাউন্টারের গেটে গেলেই সোজা পড়তে হবে দালালদের খপ্পরে। ফর্ম পূরণ থেকে হাতে সার্টিফিকেট পাওয়া পর্যন্ত গোটা প্রক্রিয়ার জটিলতা এবং এর জন্য দীর্ঘ সময় লাগার বিষয়টি একেবারে জলের মতো বুঝিয়ে দেবেন তিনি।
এর পরেই টোপ ফেলবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ‘কর্মী’। বলবেন, একমাত্র তাঁদের মারফতই সময় মতো হাতে মিলবে সার্টিফিকেট। এর জন্য তাঁদের দিতে হবে কিছু টাকা। কত দ্রুত সার্টিফিকেট দরকার, তার উপরেই নির্ভর করবে টাকার অঙ্ক। ওই পড়ুয়ার কাছে সময়ের গুরুত্ব কতটা বুঝে নিয়ে দর হাঁকবেন দালাল। সাধারণত যা ঘোরাফেরা করে ৫০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে।
হিমাচলপ্রদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএড করতে চান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র শুভাশিস নস্কর। মাইগ্রেশন সার্টিফিকেট আনতে গিয়েছিলেন তিনিও। বললেন, “কাউন্টার থেকে ফর্ম নেওয়ার পরেই এক জন আসেন আমার কাছে। বলেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়েরই কর্মী। তার পরেই জানতে চান কত তাড়াতাড়ি সার্টিফিকেট লাগবে আমার।” ওই ব্যক্তি তাঁকে দু’তিন দিনের মধ্যেই সার্টিফিকেট হাতে পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেবেন বলে জানিয়েছিলেন। বিনিময়ে নিয়েছিলেন ১০০ টাকা।
কথায় পটু এই দালালদের শিকার হন অন্তত দু’তিন জন। এই দালালদের অনেকেই কলেজ স্ট্রিটে কোনও না কোনও বইয়ের দোকানে কাজ করেন। কাজের ফাঁকে এই টাকাটা তাঁদের উপরি রোজগার। টাকার অঙ্কটা যা-ই হোক, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্টারের ভিতরে এমন দালাল-রাজ চলছে কী ভাবে? তা রুখতেই বা কী ব্যবস্থা নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ?
বিষয়টি মেনে নিয়েছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বাসব চৌধুরী। তিনি বলেন, “কাউন্টারের কর্মীরাই আমাদের এই ব্যাপারটি জানান। এর পরে এক কর্মীকে পাঠিয়ে আমরা বিষয়টির সত্যতা যাচাই করি।” বাসববাবু জানান, ওই কর্মী দিন কয়েক কাউন্টারে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে এমন ঘটনার নজির রুখতে ইতিমধ্যেই কাউন্টারের ভিতরে এক জন নিরাপত্তারক্ষীর ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান রেজিস্ট্রার।
তবে কাউন্টারের বাইরে তো রয়ে গিয়েছে দালাল-রাজ। বাসববাবু বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের খবর রাখা আমাদের পক্ষে কোনও মতেই সম্ভব নয়।” তাঁর মতে, এ বিষয়ে পড়ুয়াদের নিজেদেরই বেশি সতর্ক হতে হবে। অভিযোগ পেলে বিষয়টি অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.