লগ্নি টানার ক্ষেত্রে কর্মসংস্কৃতির সমস্যা ও পরিকাঠামোয় ঘাটতির অভিযোগই পিছনে ফেলেছে পশ্চিমবঙ্গকে। কিন্তু এ রাজ্যে শিল্প গড়া বা বাণিজ্য করার পরিবেশ অনুকূল বলেই সফর শেষে রায় দিয়েছে বিদেশি ও অনাবাসী ভারতীয় উদ্যোগপতিদের ৩৫ জনের এক প্রতিনিধিদল। সরেজমিনে সাঁকরাইল শিল্প তালুকের পরিকাঠামো ও কাজের পরিবেশ যাচাই করে এবং রাজ্যের শিল্প তথা অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের সঙ্গে কথা বলে এই ধারণা হয়েছে বলে শনিবার ফিরে যাওয়ার আগে মন্তব্য করেছেন ওই সব উদ্যোগী।
সম্প্রতি বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স ও নন রেসিডেন্ট ওভারসিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল (এনআরওএবি) আয়োজিত এক বাণিজ্য সম্মেলনে যোগ দিতে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কলকাতায় এসেছিলেন এই সব বিদেশি ও অনাবাসী ভারতীয় উদ্যোগপতি।
গত বৃহস্পতিবার সম্মেলন শেষ করার পরে তাঁরা শুক্রবার সাঁকরাইল শিল্প তালুকটি ঘুরে দেখেন। রাজ্যে ব্যবসা করার পরিকাঠামো নিজেদের চোখে খতিয়ে দেখাই ছিল পরিদর্শনের উদ্দেশ্য। প্রতিনিধিদলের সঙ্গে শিল্পোন্নয়ন নিগমের উচ্চপদস্থ অফিসারেরা ছাড়াও রাজ্যের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি রাজীব সিংহ এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প দফতরের ডিরেক্টর জে কে আয়কতও ছিলেন। ওই শিল্প তালুকে বন্ধের দিনেও কাজ হয়েছে, এবং কারখানায় ইউনিয়ন নেই, রাজ্যে শিল্প গড়ার ব্যাপারে এই তথ্য বিশেষ ভাবে উৎসাহিত করে কলকাতা সফররত উদ্যোগপতিদের। শনিবার তাঁদের মন্তব্য, “বিশেষ করে কর্মসংস্কৃতি এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ এই রাজ্যে শিল্প গড়া বা বাণিজ্যের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।”
সাঁকরাইল ফুড পার্কে যে-সব সংস্থা শিল্প স্থাপন করেছে, তাদের অভিজ্ঞতার ব্যাপারেও খোঁজ-খবর নেন ওই সব উদ্যোগী। ওই শিল্প তালুকে তাঁরা পেপসি, মনজিনিস এবং রোলিক আইসক্রিমের কারখানা পরিদর্শন করেন। অভিজ্ঞতা জানার জন্য সরাসরি ওই সব শিল্পের কর্তাদের সঙ্গে কথাও বলেন।
কী তথ্য পেলেন শিল্প তালুক থেকে? এই প্রশ্নের উত্তরে কাতারের এমাদ গোষ্ঠীর ম্যানেজিং জিরেক্টর এবং দোহা গ্র্যান্ড গোষ্ঠীর ভাইস চেয়ারম্যান হাসান চোগুল বলেন, “জেনে খুশি হলাম, রাজ্যে শিল্পের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি নেই। কারখানা গড়ার জন্য বাড়ির নকশা-সহ সমস্ত লাইসেন্স বা অন্য সব অনুমোদন ৪-৫ মাসে পাওয়া গিয়েছে বলে শিল্পপতিরা আমাদের জানিয়েছেন।” তিনি প্রসঙ্গত জানান,“রাজ্যের শিল্প ও অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র এবং অন্য কয়েক জন মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পেরেছি, এখানে শিল্প আনার ব্যাপারে রাজ্য বিশেষ আগ্রহী। কিছু করতে চাইলে রাজ্যের পূর্ণ সহযোগিতা পাব, এই বিশ্বাস নিয়েই ফিরছি।”
এ রাজ্যে ব্যবসা করার বাপারে কী ভাবছেন? আন্তর্জাতিক খুচরো বিপণন সংস্থা লুলু হাইপার মার্কেটসের কমার্শিয়াল এগ্জিকিউটিভ সঞ্জু ফিলিপ বলেন, “এখানে ব্যবসা শুরুর ব্যাপারে প্রধান যে-আশঙ্কা ছিল তা হল, কর্মসংস্কৃতির অভাব। কিন্তু সাঁকরাইল শিল্প তালুকের কারখানাগুলির কর্তাদের কাছ থেকে জানতে পারলাম, তাঁদের কারখানায় ইউনিয়ন নেই। এমনকী বন্ধের দিনেও কারখানায় পুরোদমে কাজ হয়েছে। বিষয়টি আমাদের খুবই নিশ্চিন্ত করেছে। এখান থেকে বিভিন্ন পণ্য কিনে নিয়ে গিয়ে আমাদের সুপার মার্কেটগুলিতে বিক্রির পরিকল্পনা করছি। এ জন্য খুব শীঘ্রই কলকাতায় একটি ‘স্টাডি টিম’ পাঠাব। মাসখানেকের মধ্যেই আশা করি পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে ব্যবসা শুরু করতে পারব।”
উৎপাদন শিল্প স্থাপনেও আগ্রহ প্রকাশ করেছে কিছু সংস্থা। এনআরওএবি সভাপতি নীলাংশু দে জানান, “সৌদি আরবের আলুমাসাদ গোষ্ঠী রাজ্যে অ্যালুমিনিয়াম এক্সট্রুশন কারখানা গড়তে চায়। সংস্থার চেয়ারম্যান খালিদ আল ঘামদি রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের এমডি কৃষ্ণ গুপ্তের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলেছেন। এক সপ্তাহেই তাঁরা নিগমের কাছে প্রকল্প রিপোর্ট পাঠাবেন। বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতি তৈরির সংস্থা কানাডার সারট্রেক্স কন্ট্রোল সিস্টেমস-এর প্রেসিডেন্ট ও সিইও জয়দেব সরকারও রাজ্যে কারখানা গড়া নিয়ে নিগমের সঙ্গে কথা বলেছেন।” তাঁদের লগ্নি পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয় কি না, তা বলে দেবে সময়ই। |