তিনি নির্বাচন বর্জন করেছেন। ফল প্রকাশের পরে নতুন সরকারকে অবৈধ বলে ঘোষণা করেছে তাঁর দল বিএনপি। তার পরেও রবিবার নতুন মন্ত্রিসভার শপথে খালেদা জিয়াকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে সরকার। খালেদা হয়তো আসবেন না, কিন্তু গৃহবন্দিত্বের অভিযোগ কাটিয়ে ১৪ দিন পরে আজ তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে দলের দফতরে গেলেন। গোলাপি শাড়ি আর একই রঙের চাদর গায়ে দেওয়া নেত্রীকে হুড়োহুড়ি করে স্বাগত জানান বিএনপি নেতা-কর্মীরা। কিন্তু গত পাঁচ বছরের মতো এ দিন খালেদার গাড়িতে জাতীয় পতাকা ছিল না। প্রোটোকল অনুযায়ী নিরাপত্তা বলয়ও ছিল অনুপস্থিত। মানুন আর না-মানুন, এই নির্বাচনের পরে বিরোধী নেত্রীর তকমাটিও খুইয়েছেন খালেদা। তবে তাঁকে এ দিন ‘জামাতেরও নেত্রী’ বলে অভিহিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা।
আর এ দিনই জাতীয় পার্টির নেত্রী বেগম রওশন এরশাদকে বিরোধী নেত্রী ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করেছে সংসদ সচিবালয়। যাবতীয় জল্পনা ঘুচিয়ে এই দলের চেয়ারম্যান প্রাক্তন সেনাশাসক হুসেইন মহম্মদ এরশাদ এ দিন আচমকা পেছনের দরজা দিয়ে সংসদে ঢুকে শপথ নিতে আসেন। স্পিকার শিরিন শারমিন খানিকটা অবাক হয়েই তাঁকে বলেন “তা হলে এলেন?” এরশাদ হাসিমুখে জবাব দেন, “রংপুরের এত মানুষ ভোট দিল, তাই আসতেই হল।” তাঁর দল জাতীয় পার্টির নেতারা জানিয়েছেন, পাকিস্তানের ধাঁচে বিরোধী দলে থেকেও মন্ত্রিত্ব নিতে পারেন তাঁরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ঘন ঘন ভোল বদলানো এরশাদের দলকে মন্ত্রিত্ব দিয়ে বেঁধে রাখার পক্ষে। |
কিন্তু আওয়ামি লিগ ও তার শরিক দলের অনেক নেতা মনে করেন, এর ফলে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে গভীর রাতের খবর, জাতীয় পার্টিকে রেখেই কাল মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম ঘোষণা করছেন হাসিনা।
শপথে আমন্ত্রণ পেলেও এ দিন শেখ হাসিনার আক্রমণ থেকে রেহাই পাননি খালেদা। ঢাকায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার সূচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু বিএনপি নয়, জামাতে ইসলামিরও নেত্রী খালেদা জিয়া। হতাশায় পড়ে জামাতের কর্মীদের দিয়ে মানুষ খুনে নেমেছেন তিনি। খালেদার হরতাল-অবরোধের জেরে জনজীবনের পাশাপাশি দেশের ব্যবসাবাণিজ্যও লাটে উঠেছে। হাসিনা বলেন, “এ সবের জন্য তাঁকে জবাব দিতে হবে।” এ দিকে নির্বাচনের পরে জামাতের তাণ্ডবের প্রতিবাদ করে গণজাগরণ মঞ্চের রোড মার্চ এ দিন যশোরে এসে শেষ হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ এ দিন মালোপাড়ার দুর্গত গ্রামগুলিতে গিয়ে আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ান। রাতে যশোর শহরে এক বিরাট জনসভায় মঞ্চের আহ্বায়ক ইমরান এইচ সরকার বলেন, “বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। তাঁরা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে চান। জামাতের মতো ধর্মীয় মৌলবাদীদের প্রতিরোধ করতে জোট বেঁধেছেন এ দেশের যুবশক্তি।”
এর মধ্যেই হাসিনাকে স্বস্তি দিয়ে নতুন সরকারের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে রাশিয়া। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কমনওয়েলথ এর আগে নতুন সরকারের বিরোধিতা করেছিল। ব্রিটেন ও আমেরিকাও বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। ভারতের পর রাশিয়ার মতো প্রভাবশালী দেশও পাশে দাঁড়ানোয় বাংলাদেশের ওপর শাস্তিমূলক নিষেধাজ্ঞা চাপানো পশ্চিমী শক্তির পক্ষে শক্ত হবে। |