সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় নির্বাচন-পরবর্তী হিংসার জন্য বিএনপি-জামাত জোটের নেত্রী খালেদা জিয়াকে হুঁশিয়ারি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বললেন “ক্ষান্ত দ্যান, নইলে আরও কঠোর হব! কারওকে দেশ ছেড়ে যেতে দেব না।” এ দিন বিকেলে ঢাকায় বিশাল এক জনসভায় আওয়ামি লিগ নেত্রী ঘোষণা করেন, “কী ভাবে সন্ত্রাস বন্ধ করতে হয় জানি। দেশের মানুষের ওপর জঙ্গি জামাতকে লেলিয়ে দেওয়ার ফল তাঁকে পেতে হবে।”
এর মধ্যেই হামলাকারীদের ধরতে কঠোর হয়েছে সরকার। যশোর, সাতক্ষীরা, দিনাজপুর, জামালপুর ও পঞ্চগড়ে কাল রাত থেকে ব্যাপক তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ ও আধাসেনা। আক্রান্তদের সঙ্গে কথা বলে হামলাকারীদের তালিকা তৈরির পরে এই তল্লাশি শুরু হয়। আজ দুপুর পর্যন্ত একশোরও বেশি দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এদের বিচারের জন্য বিশেষ ফাস্ট ট্র্যাক ট্রাইব্যুনাল তৈরি করা হচ্ছে। আইন মন্ত্রকের এক কর্তা জানিয়েছেন, চলতি সপ্তাহেই এই আদালত তৈরির কাজ শেষ হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এর মধ্যেই বিভিন্ন থানায় চিঠি দিয়ে নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে গরিব মানুষের ওপর হামলার সব মামলা ফাস্ট ট্র্যাক ট্রাইব্যুনালে সরানোর নির্দেশ দিয়েছে। পুলিশের সদর দফতর, সব বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনার, ডিআইজি, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ সুপারকেও এই নির্দেশের কপি পাঠানো হয়েছে।
বারণ করা সত্ত্বেও ভোট দেওয়ার ‘অপরাধে’ সীমান্ত এলাকায় বহু গ্রামে লুঠপাট করে বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে সন্দেহভাজন জামাতে ইসলামির দুষ্কৃতীরা। দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্যও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের সর্বত্রই এই হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। শাসক আওয়ামি লিগ ও তার শরিকদলগুলি আক্রান্তদের পাশে দাঁড়িয়ে পাহারা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পুলিশি পাহারাও জোরদার করা হয়েছে। জামাতের হামলার বিরুদ্ধে জনমত গঠনে ঢাকা থেকে যশোর ‘রোড মার্চ’ শুরু করেছেন গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা। গোটা রাস্তা হাজার হাজার মানুষ তাঁদের সঙ্গে হাঁটেন। সন্ধ্যায় অভিযাত্রীরা ফরিদপুরে পৌঁছলে এক পথসভায় মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেন, বাংলাদেশে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বরদাস্ত করা হবে না। কাল অভিযাত্রীরা যশোরের মালোপাড়ায় গিয়ে আক্রান্ত মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন।
এ দিন ঢাকায় আওয়ামি লিগের জনসভায় শেখ হাসিনার বক্তৃতাতেও নির্বাচন-পরবর্তী হামলাই সব চেয়ে বেশি গুরুত্ব পায়। প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, ভুল সিদ্ধান্তের ফলে নির্বাচনের ট্রেন ফেল করেছেন খালেদা জিয়া। সেই হতাশা থেকেই এখন জামাতকে লেলিয়ে দিয়ে মানুষের ওপরে সন্ত্রাস শুরু করেছেন। তিনি বলেন, “সমস্যা থাকলে সমাধানের জন্য আলোচনায় আসুন। মানুষ খুনের খেলা ছাড়ুন।” তিনি দাবি করেন, নির্বাচন কমিশনের হিসেব মতো ৪০ শতাংশ মানুষ এ বার ভোট দিয়েছেন।
বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু একটি নির্বাচনের জন্য সরকার ও বিরোধী পক্ষের মধ্যে এখনই আলোচনা দাবি করে মঙ্গলবার সর্বসম্মতিতে একটি প্রস্তাব পাশ হয়েছে মার্কিন সিনেটে। এই প্রস্তাবে বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের জন্য সরকারের সমালোচনার পাশাপাশি বিরোধীদের হিংসাত্মক আন্দোলনেরও কড়া নিন্দা করা হয়েছে।
|