আর্সেনিক নির্ণয় পরীক্ষা বন্ধ জেলায়
লে বিপজ্জনক মাত্রা আর্সেনিক আছে কী না তা জানতে জলের নমুনা নিয়ে মানুষ যাচ্ছেন জল পরীক্ষা কেন্দ্রে। নির্দিষ্ট সময়ে জল পরীক্ষার রিপোর্টও চলে আসছে। কিন্তু রিপোর্ট দেখে আসা মানুষেরা থ। কারণ, যে বস্তুটি জলে রয়েছে কী না তা দেখার জন্য এই পরীক্ষা, সেই আর্সেনিকের পরিমাণই দেওয়া নেই নির্দিষ্ট খোপে। সেই খোপটি সাদা রেখেই রিপোর্ট ধরিয়ে দেওয়া হাতে।
ভূগর্ভস্থ জলে আর্সেনিকের পরিমাণ নির্ধারণ করার জন্য বর্ধমান জেলায় যে ৬টি পরীক্ষা কেন্দ্র রয়েছে তার প্রত্যেকটি থেকেই জল পরীক্ষার রিপোর্ট আসছে আর্সেনিকের পরিমাণ ছাড়াই। মানুষ খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারছেন, আর্সেনিকের উপস্থিতি নিশ্চিত করে যে রাসায়নিক, সেটিই বর্ধমান জেলায় বাড়ন্ত। জেলায় ছটি জল পরীক্ষা কেন্দ্র রয়েছে। সেগুলি রয়েছে বর্ধমান সদর, নাদনঘাট, গুসকরা, কুসুমগ্রাম, কলা নবগ্রাম এবং কেতুগ্রামে। বর্ধমান সদরের জল পরীক্ষাকেন্দ্রটি রাজ্য সরকার পরিচালনা করে। বাকিগুলির পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
জল পরীক্ষাকেন্দ্রগুলির সূত্রে জানা গিয়েছে, পানীয় জলে আর্সেনিকের পরিমাণ নির্ধারণ করার জন্য সিলভার ডাই ইথাইল ডাইথিও কার্বোনেট (এসডিডিসি) নামে যে রাসায়নিকটি প্রয়োজন সেটি জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর থেকে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু কয়েক মাস ধরে এই রাসায়নিকটির সরবরাহ বন্ধ। কিন্তু এই রাসায়নিকটি বাজার থেকে কিনে পরীক্ষা করার নিয়ম নেই। ফলে জেলার প্রায় সব জায়গাতেই জলে আর্সেনিকের মাত্রা নির্ধারণ বন্ধ রয়েছে।
নাদনঘাটের জল পরীক্ষাকেন্দ্রের মুখ্য পরীক্ষক মানস মণ্ডল জানান, তাদের পরীক্ষাকেন্দ্রে আর্সেনিক পরীক্ষার শেষ কাজ হয়েছিল ২০১৩ সালের ১২ জুলাই। তিনি বলেন, “জেলার অন্য পরীক্ষাকেন্দ্রগুলিরও একই রকম অবস্থা। ফলে জল পরীক্ষা করার পরে আর্সেনিকের পরিমাণ লেখার জায়গা ফাঁকা রেখেই জলের রিপোর্ট জমা দিতে হচ্ছে।” জল পরীক্ষা করে এ রকম একটি বেসরকারি সংস্থার জল পরীক্ষক কৌশিক গড়াই জানান, কোনও এলাকায় জলে বেশি আর্সেনিক পাওয়া গেলে সেখানে নিয়মিত জল পরীক্ষার প্রয়োজন। কিন্তু পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক অমিল হওয়ায় সেটা বর্তমানে সম্ভব হচ্ছে না। সম্প্রতি জল পরীক্ষাকারী সংস্থার কর্মীরা আর্সেনিক পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক দেওয়ার দাবি জানিয়ে জেলা পরিষদে স্মারকলিপিও জমা দেন।
দু’দশক আগে জেলায় প্রথম আর্সেনিক দূষণাক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলেছিল পূর্বস্থলী ১ ব্লকের মাদ্রা গ্রামে। তখন এই রোগে কয়েক জনের মৃত্যু হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে ছিলেন একই পরিবারের ৬ জন। আস্তে আস্তে পূর্বস্থলী ১ ও ২ ব্লকেও ছড়িয়ে পড়ে এই রোগ। বর্তমানে পূর্বস্থলীর দুই ব্লকে বহু মানুষ এখনও এই রোগে ভুগছেন।
২০০২ সালের জুলাই মাস থেকে পূর্বস্থলী ১ ও ২ ব্লক এবং কাটোয়া মহকুমার একাংশে সরকারি টিউবওয়েলগুলির জল পরীক্ষার কাজ করে আসছে স্থানীয় একটি সংস্থা। ওই সংস্থার কর্তা জনার্দন ঘোষ জানান, এখনও পর্যন্ত তারা ৫৫৯টি বেসরকারি নলকূপ-সহ ১৪৪৫৯টি নলকূপের জল পরীক্ষা করেছেন। ওই সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, পরীক্ষিত নলকূপগুলির মধ্যে প্রায় ৪০০টি নলকূপে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক পাওয়া গিয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে পূর্বস্থলীর দুই ব্লকের ১৫টি পঞ্চায়েত এলাকার নলকূপের জলে মিশে রয়েছে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক। তবে পূর্বস্থলী ১ ব্লকের নাদনঘাট পঞ্চায়েতে এখনও পর্যন্ত জলে মাত্রারিরক্ত আর্সেনিকের প্রমাণ মেলেনি। সমস্যা স্বীকার করে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের বর্ধমান জেলার মুখ্য বাস্তুকার সুশান্ত বসু বলেন, “ওই রাসায়নিক সরবরাহ করার জন্য টেন্ডার হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সমস্যা মিটবে।” পূর্বস্থলী দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক তথা রাজ্যের ক্ষুদ্র, কুটির, ভূমি এবং বস্ত্র দফতরের প্রতিমন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, “এখন এলাকায় নতুন করে আর্সেনিকোসিস আক্রান্ত রোগী খুব বেশি পাওয়া যায় না। তবে এই বিষয়ে সাধারণ মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ চলছে। পূর্বস্থলীর দু’টি ব্লকে আর্সেনিক মুক্ত জল প্রকল্পও তৈরি হয়েছে।” তাঁর আশ্বাস, পূর্বস্থলী ১ এবং ২ ব্লকের যে কোনও এক জায়গায় সরকারি জল পরীক্ষাকেন্দ্র করার জন্য তিনি জনস্বাস্থ্য কারিগরি প্রকল্পের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কাছে আবেদন জানাবেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.