বামফ্রন্টের হাতে থাকা দু’টি কলেজের ছাত্র সংসদের ক্ষমতাও কেড়ে নিল টিএমসিপি। সেই সঙ্গে জেলার ১২টি কলেজের মধ্যে ১১টিতেই নিজেদের একাধিপত্য পজায় রাখল শাসক দলের এই ছাত্র সংগঠন। তবে তবে এসইউসি-র ছাত্র সংগঠন ডিএসও এ বারও নিস্তারিণী কলেজের ছাত্র সংসদের ক্ষমতা ধরে রাখতে পেরেছে। শুক্রবার সকাল থেকে টান টান উত্তেজনা মধ্যে পুরুলিয়ার সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজগুলির ছাত্র সংসদের নির্বাচনের শেষে সন্ধ্যায় কলেজগুলি থেকে এই ফল জানা দিয়েছে।
বস্তুত কলেজ নির্বাচনের লড়াইয়ে নামার আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় বলরামপুর কলেজ, বরাবাজারের বিক্রম টুডু কলেজ, নিতুড়িয়ার পঞ্চকোট মহাবিদ্যালয়, পুঞ্চার লৌলাড়া রামানন্দ সেন্টেনারি কলেজ জিতে গিয়েছিলেন টিএমসিপি-র প্রার্থীরা। রঘুনাথপুর কলেজ ও মানবাজারের মানভূম কলেজে বিরোধীরা কিছু প্রার্থী দিলেও বেশির ভাগ আসনে শুধু টিএমসিপি-র প্রার্থীরা ছিল। এর ফলে ওই দুই কলেজে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগেই জিতে যায় টিএমসিপি। অথাৎ ১২টির মধ্যে ছ’টি কলেজই নিজেদের দখলে নিয়ে আসে টিএমসিপি। এ দিন নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর দেখা যায়, গতবার এসএফআইয়ের জেতা কাশীপুরের মাইকেল মধুসূদন কলেজ ও বরাবাজারের বিক্রম টুডু কলেজে তারা এ বার পরাজিত হয়েছে। ওই দু’টি কলেজ তাদের হাত থেকে কেড়ে নিয়েছে টিএমসিপি। জেলার আরও চারটি কলেজে বিরোধীরা একটিও আসনে জিততে পারেনি।
এ দিন নির্বাচন ঘিরে কলেজগুলিতে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিল পুলিশ। নির্বাচন শুরু থেকে ফল গণনা পর্যন্ত কলেজ চত্বর কার্যত ঘিরে ছিল পুলিশ বাহিনী। জেলা পুলিশের পদস্থ কর্তারাও উপস্থিত ছিলেন কলেজগুলিতে। রঘুনাথপুর কলেজ, মানভূম কলেজ, লালপুর মহাত্মা গাঁধী কলেজ, সুইসার নেতাজী কলেজ, ঝালদার অচ্ছ্রুরাম মেমোরিয়াল কলেজের ছাত্র সংসদের সব আসনেই জিতেছে টিএমসিপি। ওই কলেজগুলিতে একটি আসনেও জিততে পারেনি বিরোধীরা। |
ত্রিমুখী লড়াই হয়েছে পুরুলিয়া শহরের জে কে কলেজে। সেখানে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ পেয়েছে ২৬টি আসন। এসএফআইয়ের দখলে গিয়েছে মাত্র একটি, আর ছাত্র পরিষদ জিতেছে ৯টিতে। কাশীপুরের মাইকেল মধুসূদন কলেজে টিএমসিপি পেয়েছে ১২টি, ৩টিতে জিতেছে ডিএসও ও একটি গিয়েছে এসএফআইয়ের ঝুলিতে। নিস্তারিণী কলেজে ২২টি আসনের মধ্যে ১৫টিতে জয়ী হয় ডিএসও। বাকি আসন গিয়েছে এসএফআইয়ের দখলে। প্রসঙ্গত এই কলেজে প্রার্থী দেয়নি টিএমসিপি। ওই সংগঠনের দাবি, ওই কলেজে প্রার্থী দিলে ভোট কাটাকাটিতে এসএফআই জিতে যেতে পারত। সে কারণেই তারা প্রার্থী দেয়নি।
ছাত্র সংসদ নির্বাচনে এই ফল প্রত্যাশিত ছিল বলে এ দিন দাবি করেছেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি গৌতম রায়। তবে বিরোধী এসএফআই এবং ডিএসও-র অভিযোগ মনোনয়নপত্র তোলার সময় থেকেই সন্ত্রাস সৃষ্টি করে এই ফল করেছে টিএমসিপি। তবে ডিএসও-র জেলা সভাপতি স্বদেশপ্রিয় মাহাতোর দাবি, “যে কৌশলে এসএফআই এতদিন কলেজগুলি দখলে রাখত, সেই একই পথ নিয়েছে টিএমসিপিও।” বিরোধীদের এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন গৌতমবাবু। তাঁর দাবি, “কলেজ নির্বাচনের আগেই বলেছিলাম বামফ্রন্টের মতোই ওদের গণসংগঠনের দিক থেকেও মানুষজন সরে গিয়েছেন। সাংগঠনিক দুর্বলতা ঢাকতে ওরা সন্ত্রাসের ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছে।”
জেলার মধ্যে অন্য কলেজে টিএমসিপি-র এই ফল প্রত্যাশিত হলেও জেলার রাজনৈতিক মহলের নজর ছিল বাঘমুণ্ডি বিধানসভার কংগ্রেসের দখলে থাকা ঝালদা ১ ও বাঘমুণ্ডি পঞ্চায়েত সমিতি এলাকার দু’টি কলেজের দিকে। ঝালদার অচ্ছ্রুরাম মেমোরিয়াল ও সুইসার নেতাজী কলেজের সব আসনেই জিতেছে টিএমসিপির প্রার্থীরা। বস্তুত তৃণমূল এই সময়ে বিশেষ নজর দিচ্ছে ঝালদা এলাকায়। নিজেদের সংগঠন বাড়াতে.সম্প্রতি দলের শীর্ষনেতা মুকুল রায় ঝালদায় সভা করেছেন। ঝালদা পুরসভার কংগ্রেসের চেয়ারম্যান প্রদীপ কর্মকার-সহ তিন কউন্সিলর যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। আর এই প্রেক্ষাপটে কংগ্রেসের গড় বলে পরিচিত ওই এলাকায় তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের এই সাফল্য রাজনৈতিক দিক দিয়ে অন্য মাত্রা পেয়েছে বলে দাবি টিএমসিপি নেতৃত্বের। তবে কংগ্রেসের দাবি মূল রাজনীতির সঙ্গে ছাত্র রাজনীতির অনেক ফারাক। কলেজ নির্বাচনের ফল দেখে এলাকার রাজনৈতিক সমীকরণ মাপা উচিত নয়।
এ দিনই নির্বাচন হওয়ার কথা পুরুলিয়া বিএড কলেজে। সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজসমূহের পরিদর্শক প্রিয়নাথ হালদার বলেন, “ওই কলেজের আটটি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন প্রার্থীরা।” বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, তারা কোনও রাজনৈতিক সংগঠনের নয়। |