|
|
|
|
শিল্প সংস্থার সমস্যা জানতে আলোচনা হলদিয়া পুরসভায়
নিজস্ব সংবাদদাতা • হলদিয়া |
‘শিল্পবান্ধব’ পুরসভার বার্তা দিতে শুক্রবার হলদিয়ার শিল্প সংস্থাগুলিকে নিয়ে বৈঠক করল হলদিয়া পুরসভা। এ দিন হলদিয়ার বিভিন্ন শিল্পসংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেন হলদিয়ার পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ মণ্ডল। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে বাম বোর্ডকে সরিয়ে হলদিয়া পুরসভায় তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর এই প্রথম শিল্পসংস্থার মুখোমুখি হল তারা।
গত দু’তিন বছরে বাম পরিচালিত হলদিয়া পুরসভার সঙ্গে শিল্পসংস্থাগুলির সম্পর্কের অবনতি হয়। ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরের বাজেট পেশের দিন তৎকালীন পুরপ্রধান সিপিএমের তমালিকা পণ্ডা শেঠ অভিযোগ করেন, শিল্প সংস্থাগুলি পুরসভার প্রাপ্য ‘হোল্ডিং কর’ ঠিকমতো দিচ্ছে না। কয়েকটি শিল্প সংস্থার নাম করে তাদের বকেয়া করের পরিমাণও উল্লেখ করেন তিনি। পুরসভা প্রতিবছর শিল্পসংস্থাগুলির কাছ থেকে ওই কর বাবদ প্রায় ১৬ কোটি টাকা পায়। কর বকেয়া রাখছিল হলদিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষও। উল্লেখ্য, এই কর আদায়ের পরিবর্তে শিল্পসংস্থাগুলিকে কিছু পরিষেবা দেয় পুরসভা। সেই পরিষেবাও ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছিল না বলে অভিযোগ করে শিল্পসংস্থাগুলি। পুরসভার সঙ্গে শিল্পসংস্থাগুলির সুসম্পর্ক ফেরাতেই এ দিনের বৈঠক। গত সেপ্টেম্বরে পুরবোর্ড গঠনের দিনই এই মর্মে বার্তা দিয়েছিলেম তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। |
|
পুরসভার হলে চলছে বৈঠক। —নিজস্ব চিত্র। |
হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকেই শুভেন্দুবাবু ‘কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি ফান্ড’-এর মাধ্যমে এলাকার কিছু উন্নয়নের জন্য শিল্পসংস্থাগুলির কাছে বারবার প্রস্তাব রাখেন। হলদিয়া পুরসভা ও সংলগ্ন এলাকায় হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের সঙ্গে যৌথভাবে ওই কাজগুলি করার প্রস্তাব ছিল। শুভেন্দুবাবু অভিযোগ ছিল, ওই ফান্ডের টাকা প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠ তাঁর নিজের এনজিও আই কেয়ার-এর জন্য ব্যবহার করতেন। শুভেন্দুবাবু ওই ফান্ডের টাকায় হওয়া উন্নয়নের সুফল সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেন। এ দিনের বৈঠকে সেই বিষয়েও বার্তা দেওয়া হয়। হলদিয়া পুরসভার তৃণমূল পুরবোর্ডের সঙ্গে হলদিয়া উন্নয়ন পষর্দের সুষ্ঠু সমন্বয়ের মাধ্যমে উন্নয়নের বার্তা শিল্পপতিদের সামনে তুলে ধরতে এ দিন বৈঠকে হাজির ছিলেন পর্ষদের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক পি উলাগানাথন।
এ দিন বৈঠকে হলদিয়ার মোট ৪৮টি শিল্পসংস্থাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তার মধ্যে হাজির ছিলেন ৩৩টি শিল্পসংস্থার প্রতিনিধিরা। পুরপ্রধান দেবপ্রসাদবাবু বলেন, “পুরসভার প্রাপ্য হোল্ডিং কর মিটিয়ে দেওয়ার জন্য আগেই শিল্পসংস্থাগুলিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ওই বিষয়ে এদিনের বৈঠকে কোনও আলোচনা হয়নি।” পুরসভার পক্ষ থেকে শিল্পপতিদের ৭ পাতার ‘ভিশন ডকুমেন্ট’ তুলে দেওয়া হয়। ওই ডকুমেন্টে ২০১৬ পর্যন্ত পুরসভার কর্ম পরিকল্পনা ও লক্ষ্যের কথা বলা হয়েছে। পুরপ্রধান বলেন, “পুরসভার পরিষেবাগত দিক থেকে শিল্পসংস্থাগুলির যে যে সমস্যা রয়েছে, তাঁদের কাছে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। আমরা এই সমস্যাগুলি কী ভাবে সমাধান করতে পারি বৈঠকে তা নিয়েও আলোচনা হয়। এ ব্যাপারে শিল্পসংস্থাগুলির থেকেও সহযোগিতা চাওয়া হয়। পারস্পরিক সৌহার্দ্য বজায় রেখে উন্নয়নের লক্ষে এই আলোচনা জরুরি ছিল। অতীতে এমনটা কখনও হয়নি।” হোল্ডিং কর সম্পর্কে তিনি বলেন, “এমন শিল্পসংস্থাও আছে, যারা গত ১০ বছর ধরে ওই কর দেয়নি। সংস্থাগুলির থেকে কর পেতে হলে তাদের প্রয়োজনীয় পরিষেবা দিয়ে সম্পর্কও ভাল করা জরুরি। ইতিমধ্যে তারা অনেকে বকেয়া কর দিতেও শুরু করেছে।”
বৈঠকে উপস্থিত আইওসি-র চিফ মেনটেনেন্স ম্যনেজার সুবীরকুমার ঘোড়াই বলেন, “আজকের আলোচনা আশাপ্রদ হয়েছে। পুরসভার সঙ্গে আমাদের এই সমন্বয় থাকাটা দরকার। আইওসি সংলগ্ন রাস্তা, প্রাচীর, পাইপলাইনের পাশে ও উপরে অনেকেই জবরদখল করে থাকছেন বা ব্যবসা করছেন। যা আমাদের সংস্থার সার্বিক নিরাপত্তাকে বিরাট প্রশ্নচিহ্নের সামনে দাঁড় করিয়েছে। আমরা বলেছি, ওই সব দখলদারদের সরিয়ে দেওয়া হোক।” বন্দরের ম্যানেজার (প্রশাসন) অমল দত্ত বলেন, “শিল্প সহায়ক উন্নয়নের পরিকল্পনা ও পরিকাঠামো উন্নয়নের কথা বলে এমন ইতিবাচক বৈঠক আগে কখনও হয়নি। উন্নয়ন পর্ষদের সঙ্গে যৌথভাবে আমরা বেশকিছু উন্নয়নের কাজ করেছি, ভবিষ্যতে আরও করব।” তাঁর আরও বক্তব্য, “আমাদের জমি ও রাস্তা জবরদখল হওয়া বন্ধ করতে হবে। বহু মূল্যবান গাছও চুরি হচ্ছে, তা ঠেকানোর জন্য আবেদন করেছি।” অন্য শিল্পসংস্থাগুলির পক্ষ থেকেও রাস্তা সংস্কার, পানীয় জলের ব্যবস্থা করা, নিকাশি ব্যবস্থার উন্নয়ন, পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতি-সহ একাধিক দাবি জানানো হয়। আগামী দু’মাসের মধ্যে পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরুর আশ্বাসও দেন পুরপ্রধান। পি উলাগানাথন বলেন, “আমরা পুরসভা ও হলদিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় রেখেই উন্নয়নের কাজ করছি। শিল্পসংস্থাগুলির সহায়ক কিছু প্রকল্পও নেওয়া হয়েছে। পর্ষদের পক্ষ থেকে ‘ল্যান্ড ব্যাঙ্ক’ও তৈরি করা হয়েছে। শিল্পসংস্থাগুলিকে জমি দেখে লগ্নি করার আহ্বানও জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৮টি শিল্পসংস্থা লগ্নি করতে আগ্রহ দেখিয়েছেন।”
এই বৈঠকে শহরের বাসিন্দাদের নতুন হলদিয়া উপহার দেওয়ার যে বীজ বোনা হল, সেই স্বপ্নপূরণ কতটা হয়, সেটাই দেখার। |
|
|
|
|
|