কেন্দ্রীয় সহায়তায় হুগলিতে দু’টি প্রকল্পের কাজ শীঘ্রই শুরু হবে। ভদ্রেশ্বরে পরিস্রুত পানীয় জল এবং রিষড়ায় নিকাশি জওহরলাল নেহরু পরিকাঠামো উন্নয়ন মিশনে (জেএনএনইউআরএম) এই দুই প্রকল্পে অনুমোদিত হয়েছে ১৪০ কোটি টাকা। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট অফিসারদের সঙ্গে বৈঠক করেন পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। প্রকল্প দু’টি রূপায়িত হলে এই দুই পুরসভার প্রায় আড়াই লক্ষ বাসিন্দা প্রত্যক্ষ উপকৃত হবেন।
ভদ্রেশ্বরের জলের উৎস মূলত গভীর নলকূপ। এ রকম গোটা পঁচিশ নলকূপ ওই পুরসভায় থাকলেও সেগুলির কার্যকারিতা কমছে। বছর দেড়েক শ্রীরামপুর জলপ্রকল্প থেকে গঙ্গার শোধিত জল ভদ্রেশ্বরে অল্প আসছে। এ অবস্থায় গত বছর জেএনএনইউআরএম-এ ৮৮ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকার জলপ্রকল্প অনুমোদিত হয়।
প্রকল্পের কাজ আরও আগেই শুরুর কথা ছিল। কেন দেরি হচ্ছে? পুরসভার চেয়ারম্যান দীপক চক্রবর্তী বলেন, “কাজ শুরুর আগে কেএমডিএ-র প্রথাগত কিছু ব্যাপারে আছে।” কেএমডিএ-র বক্তব্য, “ডিসেম্বর মাসে দিল্লির বৈঠকে এই প্রকল্পের টাকা মঞ্জুর হয়েছে। শীঘ্রই প্রথম কিস্তির ২৫ শতাংশ চলে আসবে। এর পরেই কাজ শুরু হবে।” দীপকবাবু বলেন, “ওভারহেড জলাধারের জায়গার ব্যাপারে সামান্য কিছু আইনি ঝামেলা ছিল। সে সব মিটে গিয়েছে।” প্রয়োজনীয় পাঁচটি ওভারহেড ট্যাঙ্কের মধ্যে তিনটি ইতিমধ্যে তৈরি হয়ে গিয়েছে বলেও জানান দীপকবাবু।
প্রথম পর্যায়ে হবে গঙ্গার জল শোধন করার ‘ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট’-এর কাজ। এতে আঁটবে ৬০ লক্ষ গ্যালন জল। এই কাজ হতে মাস চারেক সময় লাগবে। এর পর প্রায় সাড়ে ৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের পুরসভার বিভিন্ন অংশে বসবে জল সরবরাহের সংযোগ। এর জন্য ফের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন করতে হবে। প্রকল্পের ভারপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার কমলেশ পোদ্দার বলেন, “এই পাইপ পাতার জন্যও লাগবে অন্তত ছয় মাস।” ভদ্রেশ্বর পুরসভার বাসিন্দা ১ লক্ষ ১৫ হাজারের মতো।
রিষড়ায় হবে নিকাশি প্রকল্প। প্রতি বর্ষায় জলে ভাসে প্রায় সওয়া এক লক্ষ লোকের এই পুরসভা। রেললাইনের পূর্ব দিকে ১ থেকে ১৫ নম্বর ওয়ার্ড। এই অঞ্চলের এন এস রোড, এন কে ব্যানার্জি রোড, রবীন্দ্রসরণি, বাঙ্গুর পার্ক, পি টি লাহা স্ট্রিট বর্ষার অনেকটা সময় জলমগ্ন হয়ে থাকে। একই অবস্থা রেললাইনের পশ্চিমে ১৬ নম্বর থেকে ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের অধিকাংশ অঞ্চলের। পুরসভার তৃণমূল চেয়ারম্যান শঙ্করপ্রসাদ সাউ বলেন, “রেললাইনের পূর্বাংশে নিকাশির প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। গোটা প্রকল্পের কাজ শেষ হতে বছর দুই লাগবে।”
রিষড়ার এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৫১ লক্ষ ৭ হাজার টাকা। এর ৩৫ শতাংশ দেবে কেন্দ্র। রাজ্য বাকি টাকার সংস্থান করত নিজস্ব তহবিল এবং ঋণ থেকে। কেএমডিএ-র চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার বলেন, “নয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ বার থেকে সংশ্লিষ্ট পুরসভাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করতে হবে।” কোথা থেকে পুরসভা এই টাকা পাবে? শঙ্করবাবুর বলেন, “প্রকল্পের জন্য ২ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা আমাদের বরাদ্দ করতে হবে। এটা পুরসভা উন্নয়ন তহবিল থেকে আমরা সহজ শর্তে ঋণ নেব।” ১৫ বছর মেয়াদি এই ঋণের সুদ বছরে ২ শতাংশ। ঠিকঠাক শোধ করলে এই হার কমে দাঁড়ায় দেড় শতাংশে।
এই ঋণ শোধের টাকাই বা আসবে কোথা থেকে? চেয়ারম্যান বলেন, “গত অর্থবর্ষে আমাদের আয় হয়েছিল ৫৫ লক্ষ টাকা। পুর-কর নির্ধারণ এবং আদায়ের কাজ বহুকাল ঠিকঠাক হয় না। আমরা সমীক্ষা করাচ্ছি। মাস ছয়েক লাগবে এই সমীক্ষায়।” তাঁর আশা, এরপরে পুরসভায় আয় অন্তত ২০ শতাংশ বাড়বে। |