|
|
|
|
|
|
|
আপনার সাহায্যে... |
|
সারা শীতকাল শুধু গরম জল আর গরম খাবার |
বয়স্কদের পরামর্শ দিলেন পালমোনোলজিস্ট
ডা. ধীমান গঙ্গোপাধ্যায়।
কথা বললেন
রুমি গঙ্গোপাধ্যায়। |
প্র: সুচিত্রা সেনের ফুসফুসে সংক্রমণ। আগেও তো এই ধরনের সমস্যা নিয়ে উনি ভর্তি হয়েছিলেন। এ রকম বারবার কেন হচ্ছে?
উ: যে কোনও বয়স্ক মানুষেরই এমনটা হতে পারে। আসলে বৃদ্ধ বয়সে শরীরের রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থা ঠিক মতো কাজ না করায় চট করে ব্যাকটেরিয়া বাসা বেঁধে ফেলে ফুসফুসে। তাই বৃদ্ধরা প্রায়ই ফুসফুসের সংক্রমণে ভোগেন।
প্র: কাউকে কাউকে দেখি বেশি কাবু হয়ে পড়েন। এটা কি বয়স্ক মহিলাদের বেশি হয়?
উ: মহিলা-পুরুষ কোনও ব্যাপার নয়। তফাত যেটায় হয়, তা হল আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্য আগে কেমন ছিল। ধরুন অল্প বয়সে আপনি অ্যাথলেটিক ছিলেন। তবে বৃ্দ্ধ বয়সে আর পাঁচ জনের তুলনায় আপনি ভাল থাকবেন।
প্র: কিন্তু সবাই তো আর অ্যাথলেটিক থাকে না। তখন?
উ: সাবধানে থাকতে হবে। বয়সকালে জীবনযাপনের ক্ষেত্রে মাত্রাজ্ঞানটা একটু বেশি থাকা দরকার। ২৫ বছরের একটা ছেলে যা করতে পারবেন ৭৫ বছরের কেউ সেটা পারবেন না। যেমন অনেক নেমন্তন্ন বাড়িতে খোলা মাঠে খাওয়ার ব্যবস্থা থাকে। সেখান থেকে বয়স্কদের ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। পর দিন সকালে গা ম্যাজম্যাজ, গলা ব্যথা, কাশি থেকে সেটা নিউমোনিয়া পর্যন্ত গড়ালো।
প্র: কিন্তু এ রকম নেমন্তন্ন বাড়ি তো প্রায়ই থাকে?
উ: খোলা জায়গায় খাওয়ার ব্যবস্থা থাকলে বয়স্কদের সেখানে না যাওয়াই উচিত। বিশেষ করে শীতকালে।
প্র: কেন?
উ: শীতের ভারী বাতাসে ধুলো বেশি থাকে। যত বেশি ধুলো ঢুকবে তত বেশি ক্ষতি। রাস্তার ধুলো-ধোঁয়াটা এড়িয়ে চলতে হবে।
প্র: রাস্তায় বেরোলেই ফুসফুসের সমস্যা হবে?
উ: হতে পারে।
প্র: মাস্ক ব্যবহার করতে হবে?
উ: ডাক্তাররা যে ধরনের মাস্ক ব্যবহার করেন সেগুলো করতে পারলে ভাল।
প্র: কিন্তু সুচিত্রা সেন তো শুনেছি বাড়িতেই থাকতেন। তবে ওঁর কেন ইনফেকশন?
উ: আসলে এক এক জনের ধাত এক এক রকম। আর কোথা থেকে ঠান্ডা লাগে বুঝতেই পারলেন না। দেখবেন শীতের রাতে রাস্তায় আলো জ্বললেও কেমন আবছা লাগছে। ধুলোর জন্যই এমনটা হয়। রাস্তার এই ধরনের ধুলো-ধোয়া এমনকী বাড়ির ধূপের ধোঁয়াও এড়িয়ে চলবেন।
প্র: মশার ধূপ?
উ: ওই একই ব্যাপার। ছোট ছোট ফ্ল্যাটে এ ধরনের ধোঁয়া বেরোতে পারে না। এগুলো বৃদ্ধদের জন্য বিপজ্জনক।
প্র: তার মানে সন্ধে নামলেই দরজা জানলা সব বন্ধ করে ঘরে ঢুকে যেতে হবে?
উ: সে রকম নয়। বাইরে বেরোতেই পারেন। শুধু রাতে হিমটা যেন না লাগে। তবে সারা সন্ধে দরজা-জানলা বন্ধ রাখলেও রাতে শোওয়ার সময় পায়ের দিকে জানলা খোলা রাখবেন। নইলে ঘরের বায়ুচলাচলে সমস্যা হবে। সেটাও স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর।
প্র: কিন্তু তাতেও তো ঠান্ডা ঢুকবে?
উ: জানলা অল্প ফাঁক করে রাখবেন। ঠিকঠাক নিজেকে ঢেকে রাখলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। যদি দেখেন বাইরে কুয়াশা, তবে আর জানলা খোলা রাখবেন না। কী করলে ঠান্ডা লাগবে না সেটা নিজেকেই বুঝে নিতে হবে।
প্র: সোয়েটার বা মোজা পরে শুলে?
উ: আরাম লাগলে পরা যেতেই পারে। অসুবিধে নেই।
প্র: আর কী করলে ভাল থাকবেন বয়স্করা?
উ: সারা শীতকাল গরম জল আর গরম খাবার খাবেন। তা সে ভাত, ডাল, মাছের ঝোল যা-ই হোক না কেন।
প্র: কেন?
উ: ঠান্ডা খাবার গলা দিয়ে নামার সময় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। যার থেকেও ইনফেকশন হতে পারে। তাই যা খাবেন সব গরম গরম।
প্র: কিন্তু অনেক বয়স্ক মানুষকে দেখেছি আস্তে আস্তে খেতে। তখন তো খাবার এমনিতেই ঠান্ডা হয়ে যায়।
উ: সে রকম হলে মাঝখানে খাবারটা আবার গরম করে দিতে হবে। গরম খাবার গলা দিয়ে নামার সময় গলায় সেঁকও হয়। গলার পক্ষে ভাল। আর খাওয়ার সময় কথা বলবেন না।
প্র: কেন?
উ: মাঝে মাঝেই বয়স্করা বিষম খান। খাবার শ্বাসনালিতে ঢুকে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি থাকে। খাবারের টুকরো না বেরোলে অনেক রকম জটিলতা তৈরি হবে।
প্র: ঠান্ডা লাগাতে বারণ করছেন। গাড়িতে যাওয়ার সময় এসি চালানো যাবে না?
উ: অল্প করে চালাবেন। সুবিধে হল এতে বাইরের ধুলোর হাত থেকে রেহাই মিলবে। কিন্তু ঠান্ডা হাওয়া যেন সরাসরি মুখে না লাগে।
প্র: আর স্নান?
উ: ধোঁয়া ওঠা গরম জলে স্নান করবেন। ওতে স্টিম ইনহেলারের কাজ হবে।
প্র: ঠান্ডা বেশি পড়লে তো অনেকে স্নান করতে পারেন না। ওতে কোনও সমস্যা হবে না?
উ: না। স্নান না করলে কোনও সমস্যা নেই।
প্র: ঠান্ডা যদি লেগেই যায়? সকালে ঘুম থেকে উঠে মনে হল গলাটা কাটা কাটা লাগছে?
উ: ভাল রকম গরম পোশাক পরে শরীরকে গরম রাখতে হবে। গার্গল করবেন আর বারবার গরম জলে চুমুক দিন। আরাম পাবেন।
প্র: অ্যান্টিবায়োটিক লাগবে না?
উ: এগুলো ঠিক মতো করলে না-ও লাগতে পারে।
প্র: আর যদি না কমে?
উ: দিন দুয়েক করার পর যদি দেখেন কমছে না, উল্টে জ্বর-জ্বর লাগছে, কাশি কমছে না, কফের রং হলদে হয়ে গেছে, ডাক্তার দেখাতে হবে।
প্র: কাফ সিরাপ খাব না?
উ: নিজে থেকে কাফ সিরাপ খাবেন না। কোনটা আপনার কাশির জন্য কাজে লাগবে সেটা ডাক্তার বুঝবে। বরং তুলসী, মধু, বাসক পাতা আর লবঙ্গ দিয়ে তৈরি মিশ্রণ খেতে পারেন।
|
সাবধান থাকবেন কী ভাবে |
• যে কোনও ধরনের ধোঁয়া আর ধুলো এড়িয়ে চলবেন।
• হিম লাগানো চলবে না।
•
সারা শীতে গরম জল খাবেন।
• গরম খিচুড়ি, স্যুপের মতো সেমি সলিড খাবার গলার জন্য ভাল।
• ধোঁয়া ওঠা গরম জলে স্নান করুন।
•
গলা ব্যথা হলে বারবার গরম জল খান, গার্গল করুন।
•
কফের রং হলুদ হলে ডাক্তার দেখাবেন। |
|
|
|
|
|
|