সম্পাদকীয় ২...
চক্রবত্‌
ক্রের মাহাত্ম্য অপরিসীম। কেবল যে দুঃখ এবং সুখই চক্রবত্‌ পরিবর্তিত হইয়া চলিতেছে, তাহা নহে। এই মহাপৃথিবীতে, ভাবিয়া দেখিলে, চক্রই মূল নিয়ন্ত্রক। ঋতুচক্র, কালচক্র তো বটেই, অর্থনীতির মন্দা-তেজির চক্র হইতে রাজনীতিক-অপরাধী-পুলিশের দুষ্টচক্রও বটে। পৃথিবী নিজের অক্ষের উপর প্রত্যহ চক্রবত্‌ ঘুরিতেছে, এবং বত্‌সরে এক বার প্রায়-চক্রপথেই সূর্যকে ঘুরিয়া আসিতেছে। কাজেই, কলিকাতায় যদি কার্জন পার্কের চতুর্দিকে একটি ট্রাম অর্ধ কিলোমিটার পরিধি জুড়িয়া চক্রবত্‌ ঘুরিতে থাকে, তাহাকে মহাজাগতিক আখ্যা দিতে ইচ্ছা করিতে পারে। ট্রাম কম্পানি অবশ্য ঐতিহ্যেই সন্তুষ্ট। দুই কামরার একটিতে প্রদর্শশালা হইবে, অন্যটিতে কিঞ্চিত্‌ জলযোগের ব্যবস্থা। অর্থাত্‌ একই সঙ্গে চিত্ত ও পিত্ত রক্ষার সুবন্দোবস্ত। আশা, যে পর্যটক ও কলিকাতাবাসীরা ইতিপূর্বে রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ ও নোবেল স্মারক ট্রাম এবং চরৈবেতি নামক হেরিটেজ সফরের ট্রামের উদ্যোগকে সম্পূর্ণ বিফল করিয়াছেন, তাঁহারাই এই দফায় সাফল্যের সুসমাচার বহিয়া আনিবেন। আশা বস্তুটি, স্পষ্টতই, চক্রপথে চলে না— ট্রাম কম্পানির ক্ষেত্রে তাহা শুধুই ঊর্ধ্বমুখী।
কলিকাতার ইতিহাসের সহিত ট্রামের সম্পর্ক অনস্বীকার্য। কেহ বলিতে পারেন, কর্তারা এমন দুর্মর আশাবাদী ও কল্পনাপ্রবণ না হইয়া কিঞ্চিত্‌ বাস্তববাদী হইলে সম্পর্কটি ভবিষ্যতেও গুরুত্বপূর্ণ থাকিত। দূষণহীন গণপরিবহণ হিসাবে ট্রামের গুরুত্ব গোটা দুনিয়ায় ক্রমবর্ধমান। ইউরোপের বহু দেশে শহরের কেন্দ্রস্থলে ট্রামই একমাত্র পরিবহণ। ভারতের আর কোনও শহরের যে সুবিধা নাই, কলিকাতার তাহা ছিল— এই শহরের প্রাণকেন্দ্রে ট্রাম লাইন পাতাই ছিল। গণপরিবহণ হিসাবে ট্রামের গুরুত্ব স্বীকার করিয়া যদি সত্যই তাহার আধুনিকীকরণে মন দেওয়া হইত, তবে কলিকাতা গোটা দেশের সম্মুখে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করিত। সবুজ গণপরিবহণের দৃষ্টান্ত। কিন্তু কর্তাদের সে দিকে মন নাই। ফলে, একের পর এক রাস্তা হইতে ট্রামলাইন উঠিয়া যাইতেছে। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার প্রবর্তনের পর কোনও ট্রামের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ হইয়াছে বলিলে প্রত্যয় হয় না। কলিকাতার রাজপথে ট্রাম এক মৃতপ্রায় প্রাগৈতিহাসিক প্রাণী। বিভিন্ন বর্ণের শাসকের সমান অবহেলার সাক্ষ্য সর্বশরীরে বহন করিয়া কোনও ক্রমে চলিতেছে।
ট্রাম লইয়া শাসকদের চিন্তা নাই, বলিলে ডাহা মিথ্যাভাষণ হইবে। চিন্তার সর্বশেষ প্রমাণ এই চক্র-ট্রাম। এই নবতম কল্পনাটি ভুঁইফোঁড় নহে, তাহা চিন্তার একটি ধারা অনুসারেই আসিয়াছে। সেই চিন্তাধারাটি হইল, ট্রামের কোনও ব্যবহারিক প্রয়োগ সম্ভব নহে, তাহাকে পালকি অথবা হাতে টানা পাখার ন্যায় বিবেচনা করাই বিধেয়। ট্রামে চাপিয়া যে সত্যই অফিস-কাছারিতে যাওয়া সম্ভব এবং বিধেয়, তাহা কর্তারা বিশ্বাস করেন না। অতএব, কোন অভিনব পন্থায় ট্রামগুলিকে ব্যবহার করা চলে, তাহাই মূল বিবেচ্য। তাহার উপর বর্তমান শাসকদের ফুর্তির দিকে একটু মন আছে, কিন্তু সে কথা থাক। তবে, কর্তারা গজানন বিনায়কের কথা স্মরণ করিতে পারেন। তিনি তাঁহার মায়ের চতুর্দিকে ঘুরিয়াই সমগ্র বিশ্ব ঘুরিয়া আসিবার দাবি করিয়াছিলেন, এবং স্বীকৃতিও পাইয়াছিলেন। কার্জন পার্কই কলিকাতার প্রাণকেন্দ্র, অতএব তাহার চতুর্দিকে বনবনাইলেই গোটা কলিকাতায় ট্রাম চালানো হইয়া যায়, এমন একটি যুক্তি ফাঁদিলে নেহাত মন্দ হয় না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.