সম্পাদকীয় ১...
কেন
ম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট একটি রায়ে আশার আলো জাগাইয়াছিল। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ নম্বর ধারার বৈধতা লইয়া প্রশ্ন উঠিয়াছিল, তাহার উত্তরে সুপ্রিম কোর্ট বলিয়াছিল, ওই ধারা অসাংবিধানিক নহে। একই সঙ্গে আদালতের বক্তব্য ছিল যে, আইনের ঔচিত্য স্থির করা সংসদের কাজ, আইন বদলানোর প্রয়োজন রহিয়াছে কি না, তাহা বদলাইয়া কী রূপ ধারণ করিবে, সংসদ তাহা ভাবিয়া দেখিতে পারে। অর্থাত্‌ সুপ্রিম কোর্ট তাহা লইয়া কোনও নির্দেশ দিবে না। এই সংযম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি। নিজ এক্তিয়ারের বাহিরে গিয়া সংশোধনকারীর ভূমিকা লইয়া কোনও বিষয়ে মন্তব্য করা আদালতের কাজ নহে। সত্য বটে, আদালতের অতিসক্রিয়তার ফলে হয়তো আইনের কিংবা প্রশাসনের অনেক ফাঁক ধরা পড়িয়া যায়। এমন সক্রিয়তার পরিণামে সমাজ কিছু উপকারও পাইয়াছে। কিন্তু ফলাফল যাহাই হউক, মৌলিক প্রশ্ন থাকিয়াই যায়: আইনসভা বা শাসনবিভাগের করণীয় বিষয়ে বিচারবিভাগ কেন প্রবেশ করিবে? সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতির বেঞ্চের একটি রায়ে প্রশ্নটি নূতন করিয়া সামনে আসিয়াছে। শীর্ষ আদালত সরকারকে পরিবেশ রক্ষায় জাতীয় নিয়ামক গঠন করার নির্দেশ দিয়াছে। নিয়ামকের কাজ হইবে অরণ্যাঞ্চলে যে-সকল খনি বা অন্যান্য শিল্প পরিবেশগত ভারসাম্য ধ্বংস করিতে পারে, তাহার উপর নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ চালানো।
পরিবেশ রক্ষায় সরকারের ভূমিকা সর্বদা পরিবেশবান্ধব নয়। বরং ভারী শিল্প, খনি-খাদান ইত্যাদি বৃহত্‌ কারখানা বানাইতে গিয়া দেশের অরণ্যসম্পদ যে ভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হইয়া চলিয়াছে, তাহা নিবারণের কিংবা পূরণের কোনও উদ্যোগই সরকারি স্তরে সহসা লক্ষিত হয় না। দেশের বনাঞ্চল তথা বৃক্ষ-আচ্ছাদন যে দ্রুত নিশ্চিহ্ন হইতেছে এবং সরকারি ঔদাসীন্য কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে বন-ধ্বংসকারীদের সহিত সরকারি যোগসাজশেই যে তাহা ঘটিয়া চলিয়াছে, ইহাও সুপরিচিত অভিযোগ। কিন্তু আদালত এই সংক্রান্ত আইনের উল্লঙ্ঘনকারীর বিচার করিতে পারে, আইন অনুযায়ী তাহাকে শাস্তি দিতে পারে। কিন্তু নূতন আইন করা বা পুরানো আইন সংশোধন বা পরিমার্জন করা— এ-সকলই আইনবিভাগের কাজ। আবার, বনাঞ্চলে শিল্পনির্মাণ সংক্রান্ত কাজের নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়ামক নিয়োগের প্রয়োজন হইলে সেই সিদ্ধান্তও শাসনবিভাগই লইতে পারে। সর্বোচ্চ আদালত সরকারকে পরামর্শ দিতে পারে। কিন্তু, সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রাখিয়াও বলিতেই হয়, তাহার অধিক সক্রিয়তা বিহিত নয়।
সংশ্লিষ্ট নির্দেশটির কার্যকারিতা লইয়াও প্রশ্ন উঠিবে। শীর্ষ আদালতের বিচারপতিদের বক্তব্য, বনাঞ্চলে খনি-খাদান বা অন্য ভারী শিল্প নির্মাণের কী প্রভাব প্রকৃতি-পরিবেশের উপর পড়ে, তাহার পরিমাপ বা মূল্যায়নের সরকারি পদ্ধতি যথেষ্ট নয়। খুবই সম্ভব। কিন্তু ইহার প্রতিকার কি নূতন আরও একটি নিয়ামক-ব্যবস্থা চালু করা? পরিবেশ সংরক্ষণে ইতিমধ্যেই একটি আস্ত মন্ত্রক রহিয়াছে, রাজ্যে-রাজ্যে তাহার পরিপূরক দফতর, সচিব, আমলা, কর্মীবাহিনীও রহিয়াছে। পরিবেশ রক্ষায় আইন রহিয়াছে, তাহা বলবত্‌ করার পদ্ধতি-প্রকরণও রহিয়াছে। এ সকল যদি অভীষ্ট লক্ষ্য সাধনে পর্যাপ্ত না হয়, তবে কী নিশ্চয়তা আছে যে নূতন একটি নিয়ামক ও নজরদারি বন্দোবস্ত পুরোপুরি নিশ্ছিদ্র হইবে? চলতি আইন, তাহা কার্যকর করার পরিকাঠামো, একটি পূর্ণাঙ্গ পরিবেশ মন্ত্রক যদি প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ না করে, তবে তাহার ঘাটতিগুলি পূরণ করার উপরেই জোর দেওয়া উচিত। পরিবেশ নিয়ামকের মতো আরও একটি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান গড়িয়া তাহার হস্তে ক্ষমতা অর্পণ করিলে বড় জোর একটি সমান্তরাল সংস্থা তৈয়ার হইবে, যাহা সমগ্র কর্মসূচিতে বিভ্রান্তি বাড়াইবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.