মালদহে ভাগীরথী নদীতে স্লুইস গেট-এর শিলান্যাস
ভাঙন-রোধে কেন্দ্র বঞ্চনা করেছে: মন্ত্রী
ছেলে পিকিকে খুন করার অভিযোগে এক মহিলা সাব ইন্সপেক্টর-সহ একাধিক পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের আর্জি জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন মালদহের জুবিলি রোডের বাসিন্দা সন্ধ্যা দাস। সেই আবেদনের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্ট সিআইডিকে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে ঘটনার ‘স্ট্যাটাস রিপোটর্’ হাইকোর্টে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এ দিন হাইকোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত এ নির্দেশ দেন। সন্ধ্যাদেবীর আইনজীবী সুস্মিতা সাহা দত্ত বলেন, “বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত সিআইডির তদন্তকারী অফিসারকে পিকি দাসের খুনের তদন্ত কোন পর্যায়ে রয়েছে এবং তদন্তের খুঁটিনাটি ৩১ জানুয়ারি কোর্টে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।”
সুস্মিতাদেবীর বলেন, “সিআইডি ১৪ মাস ধরে পিকি দাসের খুনের তদন্ত করছে। অথচ তদন্ত এগোচ্ছে না। ঘটনায় মূল অভিযুক্ত মহিলা সাব ইন্সপেক্টর শিপ্রা রায়-সহ কোনও পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিচ্ছে না। কাউকে গ্রেফতার করাও হয়নি।” তিনি জানান, ২৩ ডিসেম্বর কলকাতা হাইকোর্টে পিকি দাস খুনের তদন্ত সিবিআইকে দিয়ে করানোর আবেদন জানানো হয়। পাশাপাশি অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণ লোপাটের মামলা দায়ের হয়েছিল। এ দিন সন্ধ্যাদেবী বলেন, “আমার বিশ্বাস আমি সুবিচার পাব। যারা আমার ছেলেকে খুন করেছে তাদের শাস্তি চাই।”

সুবিচারের আশায় সন্ধ্যাদেবী। মালদহের জুবিলি রোডের বাড়িতে। —নিজস্ব চিত্র।
এ দিন জেলা পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যয় বলেন, “হাইকোর্ট কি নির্দেশ দিয়েছে জানি না। পিকি দাসের খুনের তদন্ত সিআইডি করছে।” পুলিশ সূত্রে খবর, পিকি দাস মালদহ কলেজ থেকে বাণিজ্যের স্নাতক ছিলেন। বাবা ছোটবেলায় বাড়ি থেকে বার হয়ে যাওয়ায় তাঁর মা পরিচারিকার কাজ করে সংসার চালান। সংসার চালাতে মা পাশে দাঁড়াতে পিকি ১০-২০ টাকার বিনিময়ে ইংরেজবাজার থানায় বিভিন্ন অভিযোগকারীর অভিযোগ লেখার কাজ করতেন। সে সুবাদে ইংরেজবাজার থানার পুলিশ অফিসার ও কর্মীদের সুসম্পর্ক ছিল। অভিযুক্ত সাব ইন্সপেক্টর শিপ্রা রায়ের সঙ্গে তার পরিচয় ছিল।
সন্ধ্যাদেবীর অভিযোগ, “শিপ্রা রায়কে আমার ছেলে দিদি বলে ডাকত। উনি ছেলেকে বিভিন্ন জায়গায় নিতেই যেতেন। কলকাতাও কয়েক বার সঙ্গে করে নিয়ে যায়। পিকি মারা যাওয়ার আগে শ্রিপা ওকে গ্যাংটকে নিয়ে গিয়েছিল। ওখানে ছেলে ওই মহিলা অফিসারের সঙ্গে তাঁর এক আত্মীয়কে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখে ফেলে। তারপর ফিরে এসে আর থানায় যেত না। এর কিছু দিনের মধ্যে আবাসন থেকে ওই মহিলা পিকির বিরুদ্ধে সোনার গয়না চুরির অভিযোগ করেন।” তিনি জানান, ওই সাব ইন্সপেক্টর ও ইংরেজবাজার থানার আইসি-সহ একাধিক অফিসার ছেলে থানায় তুলে নিয়ে প্রায় ১০-১২ দিন ধরে নির্যাতন করে। ২০১২-র ২৩ জুলাই বিকাল পাঁচটা নাগাদ আমাদের অনুপস্থিতিতে ওই মহিলা সাবইন্সপেক্টর ও ইংরেজবাজার থানার ৪ জন পুলিশ ছেলেকে থানায় তুলে নিয়ে যান। ছেলের খোঁজে থানা গেলেও আমাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। পরের দিন এক মুহুরির কাছ থেকে জানতে পারি আমার ছেলে মারা গিয়েছে। শিপ্রা রায়-সহ ইংরেজবাজার থানার কোন কোন পুলিশ অফিসার তার উপর শারিরিকও মানসিক অত্যাচার করেছে মারা যাওয়ার আগে পিকি দাস নিজের ডাইরে তা লিখে গিয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টে তা জমা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, অভিযোগ হওয়ার পরই তত্‌কালীন পুলিশ সুপার অভিযুক্ত শিপ্রা রায়কে ইংরেজবাজার থানা থেকে পুলিশ লাইনে ‘ক্লোজ’ করেন। কিছুদিন পর তাঁকে হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় বদলি করা হয়। শিপ্রাদেবী বলেন, “আমি সংবাদমাধ্যমের কাছে এই নিয়ে কিছু বলতে চাই না।” আর ইংরেজবাজার থানার আইসি বর্তমানে রানাঘাট থানার আই জহরজ্যোতি রায় বলেন, “যখন পিকি দাস মারা যায়, সেই সময় আমি ছুটিতে দিল্লিতে কাজে গিয়েছিলাম। সুতরাং আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়, ওই দিন কী ঘটেছিল।”
এই ঘটনায় জেলার রাজনৈতিক মহলও সন্ধ্যাদেবীর পাশে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় বিধায়ক রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী বলেন, “আমি চাই পিকি দাস খুনের সত্য উদঘাটন হোক। নিরীহ যুবক যেভাবে মারা গিয়েছে, তা বিচার হওয়া দরকার।” জেলা কংগ্রেস সভানেত্রী তথা সাংসদ মৌসম বেনজির নূর বলেন, “রাজ্য পুলিশেমানুষ আর ভরসা রাখতে পারছে না। পিকি দাসের খুনে যখন খোদ পুলিশই অভিযুক্ত, তখন তো পুলিশ অভিযুক্তকে আড়াল করবেই। আমরা চাই দোষী পুলিশ অফিসারদের কড়া শাস্তি হোক।” আর সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র বলেছেন, “নিরপেক্ষ ভাবে তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দিতে হবে।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.