গুলাম নবির চার মেডিক্যাল খুঁজেই পাচ্ছে না রাজ্য
হিসেব মিলছে না। কিছুতেই হিসেব মিলছে না!
ফাইল হাতড়াচ্ছেন। ঘন ঘন বৈঠক করছেন। কিন্তু রাজ্যের স্বাস্থ্য-কর্তারা কেউই মেডিক্যাল কলেজের হিসেব মেলাতে পারছেন না। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদ পশ্চিমবঙ্গে নতুন যে চারটে মেডিক্যাল কলেজ তৈরির কথা ঘোষণা করে গেলেন, আতিপাতি খুঁজেও তার কোনও হদিস পাওয়া যাচ্ছে না! খোদ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফেও ধোঁয়াশা কাটানোর মতো স্পষ্ট কোনও ব্যাখ্যা মেলেনি।
সোমবার কলকাতায় এসে আজাদ ঘোষণা করেছিলেন, এ রাজ্যে আরও চারটে নতুন মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, শিগগিরই তার কাজ শুরু হবে। এ জন্য জমির সংস্থানের উপরেও তিনি জোর দেন। এতেই ঘোরতর বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে স্বাস্থ্য ভবনে। সকলের এক প্রশ্ন চারটে নতুন মেডিক্যাল কলেজ হবে কোথায়? কবে ঠিক হল? কে-ই বা ঠিক করল? সবচেয়ে বড় কথা, নতুন প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়াদের ডাক্তারির পাঠ দেবে কে?
বস্তুত মেডিক্যাল কলেজ মানে শুধু একটা বড় বাড়ি বা দামি কিছু সাজ-সরঞ্জাম নয়। সর্বাগ্রে প্রয়োজন যোগ্য শিক্ষক-চিকিৎসকের, এ রাজ্যে যার বিষম আকাল। এমনিতেই মালদহ, মুর্শিদাবাদ ও সাগর দত্ত মেডিক্যালে শিক্ষকের অভাব মেটাতে সরকার হিমসিম। সেখানে পরিষেবাও মার খাচ্ছে বিস্তর, উপরন্তু প্রতি পদে উঠছে পঠনপাঠনের মান নিয়ে আপসের অভিযোগ। এরই মধ্যে কার্শিয়াং ও ভাঙড়ে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে (পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ, সংক্ষেপে পিপিপি) মেডিক্যাল কলেজ গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। ডিসেম্বরের মধ্যে বেসরকারি সংস্থার টেন্ডার জমা পড়ে যাওয়ার কথা। সেখানে শিক্ষক জোগানো হবে কোথা থেকে, তা ভেবে এখনই কর্তাদের ঘুম ছুটেছে।
এমতাবস্থায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মুখে আরও চার-চারটে মেডিক্যাল কলেজ তৈরির ঘোষণা শুনে ওঁরা বাস্তবিকই অগাধ জলে। রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “আমাদের তো মাথাতেই আসছে না, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কোন হিসেবে এমন পরিসংখ্যান দিলেন!” নিয়ম অনুযায়ী, মেডিক্যাল কলেজ গড়তে গেলে শুধু দিল্লির অনুমোদন যথেষ্ট নয়। স্বাস্থ্যের বিষয়টি যে হেতু যৌথ তালিকায়, তাই সংশ্লিষ্ট রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের সবুজ সঙ্কেতও জরুরি। অথচ এ ক্ষেত্রে তেমন কোনও প্রস্তাব কেন্দ্রের তরফে রাজ্যের কাছে আসেনি বলে নবান্ন-সূত্রের দাবি। স্বাস্থ্য ভবনের কর্তারাও বলছেন, কার্শিয়াং-ভাঙড় ছাড়া তাঁদের মাথায় আপাতত নতুন মেডিক্যাল কলেজের পরিকল্পনা নেই। “কয়েকটা জেলা হাসপাতালকে মেডিক্যাল কলেজ স্তরে উন্নীত করার কথা হয়েছিল। তা নিয়ে কেন্দ্রীয় প্রস্তাবের ভিত্তিতে আমরা চিঠি দিয়েছিলাম। উত্তর আসেনি। সুতরাং সেই প্রকল্পের কথা নিশ্চয় উনি বলেননি।” মন্তব্য সুশান্তবাবুর।
অধিকর্তা যে প্রকল্পের কথা বলছেন, সেটা ঠিক কী?
স্বাস্থ্য ভবনের খবর: বিভিন্ন রাজ্যের বেশ কিছু জেলা হাসপাতালকে মেডিক্যাল কলেজ স্তরে উন্নীত করার প্রস্তাব কেন্দ্রীয় সরকার দিয়েছিল গত অগস্টে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার রামপুরহাট, কোচবিহার ও পুরুলিয়া জেলা হাসপাতালকে চিহ্নিত করে দিল্লিতে চিঠি পাঠিয়েছে, যার জবাব আসেনি। একাধিক বার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও দিল্লি বিষয়টি সম্পর্কে নিজেদের অবস্থান জানায়নি বলে রাজ্যের স্বাস্থ্য-কর্তাদের অভিযোগ। এ হেন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আচমকা চার-চারটে মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন শুধু নয়, তার জন্য জমি খোঁজার কথাও বলে যাওয়ায় ওঁদের প্রশ্ন: জমি-জটের কারণে যেখানে এইমস প্রকল্প বাতিল করা হচ্ছে, সেখানে নতুন মেডিক্যাল কলেজের জমি খোঁজার প্রসঙ্গ উঠছে কী ভাবে? কারও কারও মতে, কলকাতায় এসে হাত উপুড় করে আসলে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা হয়েছে।
কেন্দ্রের কী বক্তব্য?
সোমবার চার মেডিক্যাল কলেজের কথা ঘোষণার পরে গুলাম নবিকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছিলেন, “আমার মন্ত্রকের অফিসারদের কাছে এর বিস্তারিত তথ্য রয়েছে।” যদিও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কর্তারা বিশদ কিছু জানাতে পারেননি। দিল্লিতে যোগাযোগ করা হলে মন্ত্রকের এক বিশেষ সচিব বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ সরকারও আমাদের কাছে জানতে চাইছে। হয়তো কিছু ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। জানুয়ারির শেষে দু’পক্ষে কথা বলে সব মিটিয়ে নেওয়া হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.