বিহারে নীতীশ কুমার করেন। নয়াদিল্লিতে অরবিন্দ কেজরিওয়াল করবেন। জিটিএ ‘চিফ’ হিসেবে নিজের দ্বিতীয় ইনিংসে ‘জনতা দরবার’ বসানোর ঘোষণা করে ফেললেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গও।
গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) গঠনের পরেও দার্জিলিং পাহাড়ে নানা উন্নয়নের কাজকর্ম দীর্ঘ দিন স্তব্ধ হয়ে থাকায় পাহাড়বাসীদের অনেকেই ক্ষুব্ধ। সম্প্রতি পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আন্দোলনে নেমে গুরুঙ্গের তা বুঝতে কষ্ট হয়নি। বৃহস্পতিবার মোর্চা সভাপতি বলেন, “এখন থেকে প্রতি বৃহস্পতিবার আমি দার্জিলিং পাহাড়ের তিন মহকুমার দলীয় অফিসে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বসব। সারা দিন থাকব। সেই সময়ে যে কেউ এসে আমার সঙ্গে দেখা করে সমস্যা কথা বলতে পারবেন। আমি তা সমাধানের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব।”
জন-প্রতিনিধি হিসেবে জনতার কথা শোনার জন্য জনতা দরবারের রাস্তায় প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে হেঁটেছিলেন রাজীব গাঁধী। ২০০৫ সালে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হওয়া নীতীশ কুমারের আন্নে মার্গের বাড়িতে প্রতি মাসের প্রথম তিনটি সোমবার জনতা দরবার হয়। কোন সোমবার কোন কোন দফতরের কাজ নিয়ে কথা হবে তা সংবাদপত্র বা জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের মাধ্যমে জনতার কাছে পৌঁছে যায়। মুখ্যমন্ত্রীর খুব গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি না থাকলে নিয়ম করে এই জনতা দরবার বসে। সকাল ৭টা থেকে ১১টার মধ্যে এসে নাম নথিভুক্ত করাতে হয়। সকলকেই নিজের বক্তব্য লিখে আনতে হয়। প্রতি দফায় ২০ জন করে লাইন দিয়ে ভিতরে ঢুকতে হয়। যথাযথ নিরাপত্তা বলয়ের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদনপত্র পৌঁছে যায়। তা নিয়ে প্রয়োজন হলে মুখ্যমন্ত্রীও প্রশ্ন করেন। এরপর প্রয়োজনমত মুখ্যমন্ত্রী ওই আবেদনকারী বক্তব্য একই চত্বরে থাকা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী বা আধিকারিককে জানান। সেই প্রার্থীকেও প্রয়োজনমতো সেখানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
এ দিন এত খুঁটিনাটি পদ্ধতি মানা না হলেও মোর্চা সভাপতির সঙ্গে দেখা করতে দার্জিলিঙে ভিড় উপচে পড়ে। সেখানে কালিম্পং, কার্শিয়াং, সুকনা থেকেও অনেকে গিয়েছিলেন। দূর-দূরান্ত থেকে আসা বাসিন্দাদের কথা শুনেছেন গুরুঙ্গ। বলেছেন, “এখন থেকে দার্জিলিং সদর থেকে দূরের বাসিন্দাদের আমার কাছে আসতে হবে না। আমিই যাব। প্রতিটি মহকুমার দলীয় অফিসে সমস্যার কথা শুনব।”
জিটিএ চিফ জানিয়ে দেন, আগামী মার্চ মাস থেকে পাহাড়ে বড় মাপের নানা প্রকল্পের কাজ জোরকদমে শুরু হবে। পাহাড়ের তিন মহকুমা সদরের উপর থেকে চাপ কমাতে লাগোয়া এলাকায় উপনগরী গড়ার পরিকল্পনাও হাতে নেওয়া হয়েছে বলে গুরুঙ্গের দাবি। দার্জিলিং শহরের উপকণ্ঠে হ্যাপি ভ্যালি চা-বাগান এলাকায়, কার্শিয়াঙে মন্টেভিট চা বাগান লাগোয়া এলাকায় এবং কালিম্পং শহরের কাছে জিটিএ উপনগরীর গড়ার চিন্তাভাবনা করছে বলে গুরুঙ্গ জানান।
একই সঙ্গে সংগঠন ছেড়ে চলে যাওয়া নেতা-কর্মীদের ফেরাতেও মরিয়া গুরুঙ্গ। এ দিন সুকনা এলাকার শতাধিক বাসিন্দা তৃণমূল ছেড়ে ফের মোর্চায় যোগ দিয়েছেন বলে গুরুঙ্গ-অনুগামীরা দাবি করেছেন। তবে তৃণমূলের সমালোচনার রাস্তায় হাঁটেননি গুরুঙ্গ। বরং বারেবারেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করেছেন। আগামী ২০ জানুয়ারি মুখ্যমন্ত্রীর পাহাড়ে আসার কথা। শিলিগুড়ি ও দার্জিলিঙে একাধিক সরকারি অনুষ্ঠান রয়েছে তাঁর। গুরুঙ্গ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানাচ্ছি। শিলিগুড়ির অনুষ্ঠানে আমি নিজে হয়তো যেতে পারব না। তবে জিটিএ-র অন্য সদস্যদের কয়েকজনকে পাঠাব।” |