একই কলেজ। একই ঘটনা। শুধু অভিযোগকারী ও অভিযুক্ত বদলে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ি কলেজের ছাত্র সংসদের নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র পেশ করার দিনে যে মারপিটের ঘটনা ঘটেছে তাতে এমনই মনে করছেন কলেজের ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের অনেকেই। এ দিন এসএফআইয়ের সদস্য-সদস্যারা মনোনয়ন পত্র তুলতে গেলে তাঁদের মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে। তৃণমূল তা অস্বীকার করেছে। শেষ পর্যন্ত এসএফআই কোনও মনোনয়ন পত্র তুলতে পারেনি। এসএফআইয়ের পক্ষ থেকে ঘটনার প্রতিবাদে হিলকার্ট রোড অবরোধ করা হলে অন্তত ২৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে অবশ্য সকলে ব্যক্তিগত জামিনে ছাড়া পান। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগমোহন বলেন, “অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কলেজ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।” অভিযোগ শুনেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেছেন, “আমি বিশদে খোঁজ নিয়ে দেখব।”
কলেজের পড়ুয়াদের অনেকেই জানান, বাম আমলে একাধিক ছাত্র সংসদ ভোটের সময়ে মনোনয়ন তুলতে গিয়ে মারধর খেয়ে পিছুটা হটেছিলেন তৃণমূল মনোভাবাপন্ন ছাত্রছাত্রীরা। তা নিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগও হয়েছে। তৃণমূল জমানায় সেই গোলমেলে পরিস্থিতির যে হেরফের হয়নি তা স্পষ্ট হয়েছে বলে ওই ছাত্রছাত্রীরা অনেকেই মনে করেন। এমনকী, কলেজে গোলমালের খবর পেয়ে হাজির কয়েকজন অভিভাবকদের অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। |
শিলিগুড়ি কলেজে মারধরে জড়িয়ে পড়েছেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা
সভাপতি নির্ণয় রায়। (ডান দিকে) বৃহস্পতিবার। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক। |
শিলিগুড়ি কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচন ২৭ জানুয়ারি। এ দিন মনোনয়ন তোলার প্রথম দিন ছিল। ৯ ও ১০ জানুয়ারি মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করা হয়। সেই অনুযায়ী এ দিন দুপুর ১২টায় মনোনয়ন জমা দিতে আসেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যরা। এর পরে ১টা নাগাদ এসএফআই সদস্যরা মনোনয়ন তুলতে এলে তাঁদের তৃণমূল ছাত্র পরিষদ সমর্থকেরা গেটের বাইরেই আটকে দেন বলে অভিযোগ। তাঁরা জোর করে ঢুকতে গেলে তাঁদের ব্যাপক মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। তৃণমূল ছাত্র পরিষদ জেলা সভাপতি নির্ণয় রায়ের নেতৃত্বে হামলায় ৬ জন আহত হয়েছেন বলে জানান এসএফআইয়ের দার্জিলিং জেলা সম্পাদক সৌরভ দাস। হামলায় তিনিও আহত হন। তিনি বলেন, “আমার পুলিশকে অনুরোধ জানিয়েছিলাম উপস্থিত থাকার জন্য। কিন্তু পুলিশকে ঘটনার সময় দেখা যায়নি। ইচ্ছে করেই এটা করা হয়েছে।” এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন অশোকবাবুও।
নির্ণয়বাবুর দাবি, “এ দিন কোনও গোলমালের ঘটনা ঘটেনি। এসএফআই বহিরাগতদের নিয়ে মনোনয়ন জমা দেওয়ার চেষ্টা করছিল। তাতেই ছাত্রছাত্রীরা বাধা দেয়। তারপরে এসএফআই মারধরের নাটক করে ও চলে যায়। আগের মতো দাদাগিরি করতে না পেরেই এসএফআই ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছে।”
এ দিনের ঘটনার নিন্দার পাশাপাশি তাঁদের ছাত্রদেরও মনোনয়নপত্র তুলতে বাধা দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন দার্জিলিং জেলা লোকসভা কংগ্রেসের সভাপতি অভিজিত্ রায়চৌধুরী। তিনি অভিযোগ করেন, আমাদের ছাত্ররা সময় মত পৌঁছে গেলেও তাঁদের ইচ্ছা করে মনোনয়নপত্র দেয়নি।” এই অভিযোগে শিলিগুড়ি কলেজের অধ্যক্ষ মলয় করঞ্জাইয়ের বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান ছাত্র পরিষদের সদস্যরা। মলয়বাবু বলেন, “মিথ্যা অভিযোগে আমার বাড়ি ঘেরাও করা হয়েছে। নিন্দনীয় ঘটনা। আমি নিজে সকলকে মনোনয়নপত্র দিয়েছি।”
এ দিন আহত এসএফআই সমর্থকদের দেখতে হাসপাতালে যান জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক অশোক ভট্টাচার্য এবং সিপিএমের জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার। সিপিএমের তরফে জানানো হয়েছে, এসএফআইয়ের ছাত্র নিগ্রহ এবং স্কুল পরিদশর্কের কার্যালয়ে শিক্ষক নিগ্রহের প্রতিবাদে শুক্রবার শহরে প্রতিবাদ মিছিল করবে বামফ্রন্ট। |