|
|
|
|
রাষ্ট্রপতি ভবনে নাচতে দিল্লি গেলেন ঝালদার ছৌ শিল্পীরা
নিজস্ব সংবাদদাতা • পুরুলিয়া |
প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে নয়াদিল্লির রাজপথে এ বারও বাংলার ট্যাবলোতে থাকছে পুরুলিয়ার ছৌনাচ। ওই দলই রাইসিনা হিলসেও ছৌনাচ দেখাবে। আর সেই আনন্দেই মশগুল হয়ে নয়াদিল্লী যাওয়ার ট্রেনে চাপলেন ঝালদার ছৌ শিল্পীরা।
লালকেল্লার সামনের রাস্তায় ট্যাবলোর উপরে নাচের জন্য বিশেষ প্রস্তুতির দরকার। সে জন্য প্রজাতন্ত্র দিবসের আগেই ঝালদা ২ ব্লকের মাতকুমা গ্রাম থেকে নয়াদিল্লি রওনা দিলেন ১০ জন ছৌ শিল্পী। বুধবার পুরুলিয়া থেকে পুরুষোত্তম এক্সপ্রেসে তাঁরা রওনা হন। দলের ওস্তাদ যোধারাম কুমার জানান, তাঁরা আগেও নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠান করেছেন। চিনেও তাঁরা গিয়েছেন। শুধু ট্যাবলোতেই নয়, রাষ্ট্রপতি ভবনেও তাঁদের পালা দেখানোর কথা। তিনি বলেন, “শুনেছি রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে প্রণববাবু নিজের বাড়িতে দুর্গাপুজোর সময় চণ্ডীপাঠ করতেন। আমরা তাঁর কাছে মহিষাসুর মর্দিনী পালা নাচব। দৈনন্দিন অভাবের মাঝে সে কথাই সকলকে শিহরিত করে রেখেছে।” |
|
লক্ষ্য নয়াদিল্লি। পুরুলিয়া স্টেশনে সুজিত মাহাতোর তোলা ছবি। |
এ বার দুর্গার বাহন সিংহের আদলে ট্যাবলোটি সাজানো হবে। সেই ট্যাবলো সাজাতে ইতিমধ্যেই বাঘমুণ্ডি থেকে রওনা দিয়েছেন ছ’জনের দল। মাতকুমা গ্রামের এই শিল্পীরা পেশায় দিনমজুর হলেও নেশায় তাঁরা ছৌশিল্পী। তাঁদের মহিষাসুরমর্দিনী পালা দেখানোর কথা। সেখানেই তাঁরা ওই বিখ্যাত পালা তুলে ধরবেন।
তবে এই শিল্পীদের জীবনের আঁধার আজও কাটেনি। ট্যাবলোতে দুর্গার ভূমিকায় থাকছেন শঙ্কর কুমার। অল্প জমিতে তিনি চাষ করেন। তাঁর কথায়, “চাষের যা খরচ! চাষ করে আর সংসার চলে না। তাই দিনমজুরি করে সংসার চালাই। তবে দুর্গা সেজে নাচতে ভালই লাগে।” একই পেশা গণেশের ভূমিকায় যিনি নাচবেন সেই রাজু কুমারের ও লক্ষ্মীর চরিত্রের নর্তক সত্যবান কুমারের। তাঁদের কথায়, “দিনমজুরি করি, আর বছরের বাকি সময়ে নাচি।”
সরস্বতীর ভূমিকায় যিনি নাচবেন সেই দীনেশ কুমাররের কথায়, “দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। তারপর নাচ আর দিনমজুরি করেই চলছে।” দলের ওস্তাদ যোধারাম কুমারের কথায়, “এই ভাবেই কষ্ট করে দল টিঁকিয়ে রেখেছি। আমিও সেলাইয়ের কাজ করি। তবে ওই নাচেই আমাদের মুক্তি।” দলে রয়েছেন তিন জন বাদ্যশিল্পী শুকলু কালিন্দী, বরুণ কালিন্দী অশোক কালিন্দী। তাঁরা ঢোল, সানাই ও ধামসা বাজান। তাঁদেরও পেশা দিনমজুর। ট্রেনে ওঠার আগে সংসারের কথা বলতে গিয়ে আক্ষেপ ঝরে বরুণ, শুকলুদের গলায়। তবুও দেশের এক নম্বর নাগরিকের সামনে নাচার আশায় উজ্জ্বল ওদের মুখ। |
|
|
|
|
|