|
|
|
|
ডান্না দিঘি সাজাতে উদ্যোগী প্রশাসন
নিজস্ব সংবাদদাতা • পাত্রসায়র |
পাত্রসায়রের ডান্না দিঘির ভোল বদলানোর পরিকল্পনা নিয়েছে প্রশাসন। জলে টইটম্বুর দিঘিতে চলবে বোট। রঙ বাহারি গাছ গাছালিতে ভরে উঠবে দিঘির চারপাশের পাড়। পাশে গড়ে উঠবে চিলড্রেন্স পার্ক। থাকবে জলের ফোয়ারা। পাত্রসায়রের ডান্না দিঘির সংস্কার ও সৌন্দার্যায়নে এমনই একগুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়েছে প্রশাসন। শুরু হয়ে গিয়েছে ডান্না দিঘি সংস্কারের প্রথম পর্যায়ের কাজ।
পাত্রসায়র বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে, পাত্রসায়র-বিষ্ণুপুর বাইপাসের পাশেই প্রকাণ্ড এই দিঘি। বিউর বেতুড় পঞ্চায়েতের ডান্না মৌজায় অবস্থিত এই দিঘির আয়তন বর্তমানে প্রায় ৫৮ একর। এর মধ্যে জলাশয় ৩৩ একরের। বাকি ২৫ একরে রয়েছে দিঘির পাড়। দিঘির জলধারণ ক্ষমতা প্রায় ৫০ লক্ষ গ্যালন। দিঘিটি ব্যক্তি মালিকানাধীন। তবে দিঘির জল নানা কাজে ব্যবহার করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দৈনন্দিন কাজ ছাড়াও দিঘির জল দিয়ে জমি সেচ করেন কৃষিজীবীরা। |
|
এখন যেমন। ডান্নাদিঘির ছবিটি তুলেছেন দেবব্রত দাস। |
কিন্তু দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় দিঘির জলধারণ ক্ষমতা এখন কিছুটা কমে গিয়েছে। তাই সংস্কারের পাশাপাশি দিঘিটিকে ঘিরে উন্নয়নের দাবি তুলেছিলেন এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের সেই দাবি অবশেষে পূরণ হতে চলেছে। পাত্রসায়রের বিডিও অপূর্বকুমার বিশ্বাস বলেন, “প্রথমে ১০০ দিন কাজের প্রকল্পে মাটি খনন করে দিঘির পূর্ণাঙ্গ সংস্কার করা হবে। তারপর দিঘির চারপাশে গাছ লাগানো, শিশুদের খেলার পার্ক তৈরি, জলে নৌবিহারের ব্যবস্থা করা হবে। পার্কে জলের ফোয়ারা বসানোরও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।” তিনি জানান, আপাত ভাবে পঞ্চায়েত সমিতির তরফে কাজ শুরু করার জন্য ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।
বিডিও জানান, দিঘির আমূল সংস্কার ও সৌন্দর্যায়নের জন্য প্রায় তিন কোটি টাকা প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে। অনগ্রসর এলাকা উন্নয়ন তহবিল, বিধায়ক তহবিল থেকে এ ব্যাপারে অর্থ বরাদ্দ করা হবে বলে আশ্বাস মিলেছে। সাহায্য চেয়ে পর্যটন, উদ্যানপালন, মৎস্য ও কৃষি দফতরের কাছেও তাঁরা এ ব্যাপারে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, দিঘির পাড়ে একটি হলঘর, স্নানাগার তৈরি করা হবে। দিঘির জলে মৎস্য দফতর থেকে যৌথভাবে মাছ ছাড়া হবে। উদ্যান পালন দফতর থেকে হাঁস চাষের পরিকল্পনা রয়েছে। দিঘির ওই কাজের জন্য ইতিমধ্যে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, ব্লক কৃষি আধিকারিক, ব্লক মৎস্য আধিকারিক, সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ এবং দিঘির মালিক ও চাষিদের নিয়ে ১২ জনের একটি কমিটি গড়া হয়েছে। তাঁরা ওই কাজ দেখাশোনা করবেন।
তৃণমূল পরিচালিত পাত্রসায়র পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সুচাঁদ দাস বলেন, “এতবড় দিঘি এলাকার সম্পদ। তাই দিঘি সংস্কার করার পাশাপাশি সেখানে সৌন্দর্যায়নের দাবি দীর্ঘদিনের। এ জন্য দিঘির মালিক ও মাছ চাষিরাও সাহার্য্যের আশ্বাস দিয়েছেন। সকলের সহযোগিতায় আমরা দিঘিকে সাজিয়ে উন্নয়নের কাজ শুরু করছি।” স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক গুরুপদ মেটে বলেন, “বিধায়ক তহবিল থেকে প্রকল্পের জন্য যতটা সম্ভব অর্থ বরাদ্দ করব। আমাদের সরকার যে উন্নয়নের পক্ষে এই প্রকল্প হাতে নেওয়া তারই প্রমাণ।”
পাত্রসায়রে কোনও পার্ক নেই। তাই এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে একটি পার্কের দাবি করছিলেন। দিঘির পাড়ে সেই পার্ক গড়ে উঠলে স্বভাবতই স্থানীয় ছেলে-মেয়েরা খুশি হবে। দিঘিকে ঘিরে সৌন্দর্যায়নের খবরে তাই উচ্ছ্বসিত পাত্রসায়রের বাসিন্দা জহর সরকার, স্বপন দে, টোটন রজকরা। তাঁদের বক্তব্য, “আমরা চাই এলাকার সার্বিক উন্নতি হোক। দিঘিকে ঘিরে যে সব পরিকল্পনার কথা শুনছি তা বাস্তবায়িত হলে আমরা তো খুশি হবই। এই কাজ কবে শুরু ও শেষ হবে এখন সেটাই দেখার।” বিডিও বলেন, “অনেক বড় পরিকল্পনা। প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। তাই ধাপে ধাপে কাজ করা হবে। এ জন্য সময় লাগবে।” |
|
|
|
|
|