হস্টেলে ঠাঁই নেই, স্কুল ছেড়ে বাড়িতে বীণারা
ড়া চালিয়ে যাবে বলে বিয়ের পিঁড়ি থেকে উঠে এসেছিল বাঘমুণ্ডির বীণা কালিন্দী। নাবালিকা বিয়ের বিরুদ্ধে তার মতো কিছু মেয়ের লড়াইকে কুর্নিশ করেছে গোটা দেশ। অথচ সরকারি নিয়মের গেরোয় হস্টেল ছাড়তে হওয়ায় সে ক্লাস করতে না পেরে বাড়িতে বসে রয়েছে।
অযোধ্যা পাহাড়তলির ভুরসু গ্রামের সেই বীণা, বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে যাকে ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর’ করেছিল ইউনিসেফ। তাদের বাল্যবিবাহ সংক্রান্ত বইয়ের প্রচ্ছদ জুড়ে ছিল বীণারই ছবি। সে আবার হাইস্কুলের চত্বর ছেড়ে গ্রামেই ফিরে গিয়েছে। অপেক্ষা করছে, দয়া করে যদি কিছু ব্যবস্থা করে দেন জেলার কর্তাব্যক্তিরা।
শুধু বীণা নয়, একই ভাবে বাড়িতে বসে তার তিরিশ জন সহপাঠীও। তারা সকলেই অযোধ্যা পাহাড়ের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তাদের ‘অপরাধ’, অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ হয়ে পরের ক্লাসে ওঠা। কেননা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্তই স্কুলের হস্টেলে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। পড়া চালিয়ে যেতে মরিয়া বীণা এবং তার বন্ধুরা গত বছরের শেষ দিনে পুরুলিয়া জেলাশাসকের দ্বারস্থ হয়েছিল। নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়ে গিয়েছে ২ জানুয়ারি। জেলা প্রশাসনের কর্তারা অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু এখনও বীণারা স্কুলে ফিরতে পারেনি।
জেলাশাসকের দফতরের বাইরে সহপাঠীদের সঙ্গে বীণা (বাঁ দিক থেকে চতুর্থ)। ছবি: সুজিত মাহাতো
বীণা যখন নিজের বিয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল তখন সে ছিল শিশুশ্রমিক স্কুলের ছাত্রী। সেই স্কুলের গণ্ডী পেরিয়ে এখন সে বাঘমুণ্ডি গালর্স হাইস্কুলে পড়ে। সেখানে তফসিলি জনজাতির ছাত্রীরা যে হস্টেলে থাকে, সেই কস্তুরবা ছাত্রী-নিবাসে অষ্টম শ্রেণির পরে আর থাকার নিয়ম নেই। গত ৩১ ডিসেম্বর বাঘমুণ্ডি থেকে পুরুলিয়া শহরে গিয়ে বীণারা জেলাশাসককে নিজেদের সমস্যার কথা জানায়। বীণার কথায়, “আমাদের বাঘমুণ্ডির ভুরসু গ্রামের বাড়ি থেকে স্কুল তো কম দূর নয়। অতটা পথ যাতায়াত করে পড়াশোনা চালানো যাবে না। কিন্তু শুধু হস্টেলে থাকার সমস্যায় আমাদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে?”
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, কস্তুরবা ছাত্রী-নিবাস তফসিলি জনজাতির পড়ুয়াদের জন্যই সংরক্ষিত। ছাত্রী-নিবাসের সুপার চন্দ্রাণী বলের কথায়, “পাহাড়ের বিভিন্ন গ্রামের ওই মেয়েরা এত দিন এখানে থেকেই পড়াশোনা করত। কিন্তু এ বার তো তারা আর এখানে থেকে পড়াশোনা করতে পারবে না।” স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ইরা হাজরা বলেন, “ওই ছাত্রী-নিবাসে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রীরাই থাকতে পারে। বীণা-সহ ৩১ জন এত দিন সেখানেই ছিল। এখন ওরা অষ্টম শ্রেণি থেকে উত্তীর্ণ হওয়ায় মোট ৩১ জন ছাত্রী ভর্তি নিয়ে সমস্যায় পড়েছে।”
ছাত্রীদের পাল্টা প্রশ্ন, তারা এত দিন এখানে পড়াশোনা করেছে, স্কুলের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে। এখন যদি হস্টেলে থাকতে না দেওয়া হয়, তা হলে তারা যাবে কোথায়? অযোধ্যা পাহাড়ের চিরুগোড়া গ্রামের ঠাকুরমণি মুর্মু, সুমিতা বেসরা, উসুলডুংরি গ্রামের তরণী বেসরা, ভুঁইঘরা গ্রামের লক্ষীমণি মুর্মু, কুচলিরাখার লক্ষীমণি মুড়া অথবা হাতিনাদা গ্রামের রবনী হাঁসদারা বলছে, “আমাদের গ্রাম পাহাড়ের উপরে। জঙ্গলেই জীবিকা। অভিভাবকদের সামর্থ্য নেই যে অন্য কোথাও ভর্তি করায়। স্কুল থেকে দূরত্ব কমবেশি ১৫ থেকে ১৮ কিলোমিটার। বাস বা অন্য যানবাহন চলে না। জঙ্গলের রাস্তায় যখন-তখন হাতি রেরোয়। গ্রাম থেকে রোজ যাতায়াত করে পড়াশোনা করা সম্ভব নয়।”
জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, বীণারা যাতে বাঘমুণ্ডি গালর্স হাইস্কুলেই পড়তে পারে, তার জন্য সেখানে একটি নতুন ছাত্রী-নিবাস গড়া হবে। হস্টেল সূত্রে জানানো হয়েছে, জেলাশাসকের চিঠি হাতে পেলেই কয়েকটি অব্যবহৃত ঘর সাফসুতরো করে বীণাদের থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। জেলার মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো থেকে জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ সুষেণ মাঝি সকলেই বলছেন, সমস্যা সমাধানের চেষ্টা হচ্ছে। তবে যদি ধরেও নেওয়া যায়, বীণাদের থাকার ব্যবস্থা হবে এবং পনাশোনা বন্ধ হবে না, তাতেও অন্য একটি প্রশ্ন এড়ানো যাচ্ছে না।
বাঘমুণ্ডি ছাড়াও পুরুলিয়ার আরও ১৯টি ব্লকে শিশুশ্রমিক স্কুলের ছেলেমেয়েরা একই ভাবে বড় স্কুলে পড়তে গিয়েছে। তাদের হস্টেলে থাকার ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য। তারা কেউই বীণার মতো বিখ্যাত নয় যে তাদের জন্য প্রশাসন আলাদা করে ভাববে। তাদের কী হবে?
জেলা প্রশাসনের কর্তারা বলছেন, সমস্যাটা তাঁরা অনেক আগে থেকেই জানেন। কিন্তু তাঁদের কাছেও কোনও সদুত্তর নেই। সর্বশিক্ষা মিশনের জেলা প্রকল্প আধিকারিক উদয়ন ভৌমিক বলেন, “বীণাদের জন্য জেলাশাসক বিশেষ ব্যবস্থা করছেন। কিন্তু প্রকল্পটা কেন্দ্রীয় সরকারের। আমরা আর কী-ই বা করতে পারি?”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.