ঘরেই ছিল ডাকাত!
বসিরহাটে অন্তত দু’টি ডাকাতির অভিযোগে তদন্তে নেমে চোখ কপালে উঠেছে পুলিশের। প্রথমটি ঘটেছিল গত বছর এপ্রিলে বসিরহাট থানার বদরতলা নৈহাটি এলাকায়। অন্যটি অক্টোবরে বড় জিরাফপুরের বিশ্বাসপাড়ায়। প্রথমটিতে ‘ডাকাতি’র শিকার স্বামী, যখন স্ত্রী বাড়িতে ছিলেন না। বিশ্বাসপাড়ায় ঠিক তার উল্টো।
দুই ঘটনায় খোঁজখবর করতে গিয়ে ব্যতিব্যস্ত খাকি উর্দিদের গোঁফের নীচে মুচকি হাসি ফুটেছে। ‘ও বাবা, দু’টোই তো জাল কেস স্যার!’ নিচুতলা বিগলিত হয়ে বলছে উত্তর ২৪ পরগনা পুলিশের উঁচুতলাকে।
বড় জিরাফপুরের বিশ্বাসপাড়ার বধূ পুলিশকে জানান, স্বামী বাড়িতে না-থাকার সুযোগে ডাকাতেরা এসে মুখ বেঁধে মারধর করে ১৪-১৫ ভরি সোনার গয়না ও নগদ ২ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়েছে। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, ডাকাতির সময় পাশের ঘরে বাড়ির অন্যেরা ছিলেন। তাঁরা টুঁ শব্দটিও পাননি। মহিলা পুলিশকে জানান, মুখ বেঁধে কাদায় ফেলে লুঠ করে ডাকাতেরা পালায়। মহিলাকে মুখ বাঁধা অবস্থায় কাদা থেকে উদ্ধার করা হলেও ঘরের ভিতরে কোনও কাদা পায়ের ছাপ পাওয়া যায়নি।
পুলিশের দাবি, শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে মহিলা স্বামীর কাছে কবুল করেন, ‘গয়নাগাটি-টাকাকড়ি বাপের বাড়িতে মায়ের কাছে রেখে এসেছি।’ তাঁর স্বামী পুলিশকে সব জানান। মহিলা বসিরহাট আদালতে বিচারকের কাছে ক্ষমাও চান।
নৈহাটির বিশ্বাসপাড়ায় আবার বাড়ির কর্তাই পুলিশকে জানান, সন্ধ্যায় যখন বাড়ি ফিরছিলেন, মোটরবাইকে জনাচারেক যুবক তাঁর পিছু নেয়। বাড়িতে ঢোকার মুখে তাঁর মাথায় রিভলভার ধরে তারা ভিতরে ঢুকে পড়ে। তখন তাঁর স্ত্রী বাড়ি ছিলেন না। তাঁকে মারধর করে সর্বস্ব নিয়ে ডাকাতেরা চম্পট দেয়। রাতে স্ত্রী ফিরলে তিনি সব জানান। এর পরে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু তদন্তে পুলিশ জানতে পারে ওই সময়ে এলাকার লোকজন মোটরবাইকে অপরিচিত কাউকে আসতে দেখেননি। টানা জেরায় গৃহকর্তার কথায় নানা অসঙ্গতি মেলায় সেই সন্দেহ আরও দানা বাঁধে।
পুলিশের দাবি, জেরায় কোণঠাসা ভদ্রলোক শেষমেশ স্ত্রীর কাছে স্বীকার করেন, সংসার চালাতে গিয়ে এবং অনেক টাকা পাওয়ার লোভে ক্রমাগত লটারি কাটতে-কাটতে বাজারে তাঁর অনেক দেনা হয়েছিল। তাই গল্প ফেঁদে বাড়ি থেকে ৪-৫ ভরি গয়না ও কয়েক হাজার টাকা সরিয়ে পাওনাদারদের কাছে গচ্ছিত রেখেছেন। আদালতে গিয়ে বিচারকের কাছে ভুল স্বীকার করে মামলা প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছে এই পরিবারটিও। বসিরহাট থানার আইসি প্রসেনজিত দাস বলেন, “পুলিশকে বিভ্রান্ত করার অপরাধে আইনাননুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |