ভাগীরথীর পশ্চিমপাড়ের সম্বৎসর ভাঙনে নদীর পূর্বপাড়ে ক্রমাগত জমছে পলি। তৈরি হয়েছে চর। মাটি জমে বন্ধ বেলপুকুর সজলধারা জল প্রকল্প। আর এর ফলে কৃষ্ণনগর-২ ব্লকের লক্ষাধিক মানুষ ভুগছেন জলকষ্টে। জল তোলা নিয়ে সমস্যার আশঙ্কা রয়েছে কাশিয়াডাঙা জল প্রকল্পেরও। তাই আশঙ্কায় রয়েছেন নাকাশিপাড়া ব্লকের প্রায় লাখ দু’য়েক মানুষও।
নদিয়া জেলায় আর্সেনিকপ্রবণ তিনটি এলাকায় ভাগীরথীর পরিশ্রুত পানীয় জলের প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০০৫ সালে। তিন বছর পর, ২০০৮ সালে তৎকালীন বাম আমলে রাজ্যপাল এম কে নারায়নণ ভাগ্যবন্তপুর, কাশিয়াডাঙা ও বেলপুকুরে জল প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। খরচ হয়েছিল ২৪৫ কোটি টাকা। বেলপুকুর জল প্রকল্পের উপর নির্ভরশীল কৃষ্ণনগর-২ ব্লকের সাতটি পঞ্চায়েতের লাখ খানেক মানুষ। এ ছাড়াও বামুনপুকুর-মায়াপুরের লোকজনও এই প্রকল্প থেকে জল পেয়ে থাকেন।
মাসখানেক ধরে প্রকল্প এলাকায় অর্থাৎ ভাগীরথীর পূর্ব পাড়ে মাটি জমে চর তৈরি হয়েছে। কারণ, বর্ধমানের পূর্বস্থলীর সীমানায় নদীর পশ্চিম পাড় সম্বৎসর ভাঙছে পাড়। ভাঙা নদীর মাটি জমতে জমতে পূর্ব দিকে চর সৃষ্টি হয়েছে। এমনিতেই পৌষ মাসে নদীতে জল কম রয়েছে। তার উপর চরের জন্য প্রকল্প এলাকায় জল নেই বললেই চলে। জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতরের এক কর্মী জানালেন, জল উত্তোলন কেন্দ্রে কমপক্ষে এক ফুট গভীর অবধি জল থাকা আবশ্যিক। কিন্তু এই মুহূর্তে জলের গভীরতা রয়েছে সাকুল্যে ইঞ্চি চারেক। এই অবস্থায় জল তুললেই বালি উঠবে। তাই মঙ্গলবার থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে জল তোলা।
|
বেলপুকুরের ওই প্রকল্প থেকে প্রতিদিন ৪০ লাখ লিটার জল তোলা হত। আচমকা জল না পাওয়ায় আতান্তরে এলাকার বাসিন্দারা। বেলপুকুরের বাসিন্দা তরুণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভাগীরথীর জল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছি। এলাকায় কোনও গভীর নলকূপও নেই। বিশুদ্ধ পানীয় জল কোথায় মিলবে বুঝতে পারছি না।’’ মঙ্গলবার দুপুরে ধুবুলিয়ার বিধানপল্লি এলাকায় একটি নলকূপের সামনে দীর্ঘক্ষণ হত্যে দিয়ে খালি কলসি হাতে ফিরেছেন অর্পিতা পাল ও অমৃতা পাল। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘বাড়ির টিউবওয়েল খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে। স্নান-খাওয়া সব কিছুর জন্য ভাগীরথীর জলের উপর আমরা নির্ভরশীল। বলা নেই কওয়া নেই, জল বন্ধ। এখন বুঝতে পারছি না কোথা থেকে জল আনব।’’
জল-জট কাটাতে প্রশাসন কী উদ্যোগ নিচ্ছে?
দিন পনেরো আগে স্থানীয় বেলপুকুর গ্রাম পঞ্চায়েত একশো দিনের কাজের মাধ্যমে ওই চরের মাটি সরাতে উদ্যোগী হয়েছিল। দিন কয়েক কাজ চলার পর তা বন্ধ হয়ে যায়। কারণ? উপপ্রধান রাজকুমার ঘোষ বললেন, ‘‘ঠিক যে জায়গা থেকে পাইপের মাধ্যমে জল উঠছে সেটি পড়শি জেলা বর্ধমানের অর্ন্তগত। তাই আমরা মাটি কাটার কাজ চালাতে পারলাম না।’’
অন্য দিকে, কাশিয়াডাঙা জল প্রকল্পের জল উত্তোলন কেন্দ্রটি একটি দ্বীপের মধ্যে রয়েছে। ভাগীরথীর অন্য কোনও অংশ থেকে ওই দ্বীপে জল আসতে পারছে না। ফলে দ্বীপের সঞ্চিত জল শেষ হয়ে গেলে জল না মেলার শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন নাকাশিপাড়া পঞ্চায়েত সমিতির অধীন ১৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতের লাখ খানেক মানুষ। নাকাশিপাড়া পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তৃণমূলের দোস্ত সরকার বলেন, ‘‘ওই দ্বীপে যা জল আছে তা দিয়ে বড় জোর ফাল্গুন মাস অবধি কাজ চলবে। তারপর মানুষ সমস্যায় পড়বেন। আমরা বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েছি।’’ রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের প্রতিমন্ত্রী পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা বলেন, ‘‘বেলপুকুর জল প্রকল্পের সমস্যা সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে দিন কয়েক আগেই দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে ওই এলাকায় গিয়েছিলাম। ওই চরের মাটি ড্রেজিং করে তুলতে হবে। এ ব্যপারে বোর্ড ট্রাস্টের সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করি খুব শীঘ্রই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।” |