টাকা পড়ে, পাট্টা পেলেও বাড়ি জোটেনি
য়াগ্রাম ব্লকের আম্বিশোল গ্রামের মঙ্গল দিগরের স্ত্রী ও চার সন্তান নিয়ে সংসার। বন দফতরের জমিতেই পুরুষানুক্রমে বসবাস। অনেক আবেদন-নিবেদনের পর ২ ডেসিমেল জমির পাট্টা মিলেছে। কিন্তু বাড়ি জোটেনি। অনেক কষ্টে খড়ের ছাউনি দেওয়া ভাঙাচোরা বাড়িতে থাকছেন।
মঙ্গল দিগরের মতোই একই অবস্থা সুখী ভক্তা, সুরেন্দ্র ভক্তা, কার্তিক দিগরদেরও। অনেক আবেদন নিবেদন করে ২-৪ ডেসিমেল জমির পাট্টা পেলেও বাড়ি তৈরির জন্য কোনও সরকারি সাহায্য মেলেনি। ফলে শীতে হোক বা বর্ষায় চরম কষ্ট করে ভাঙাচোরা ছিটেবেড়া বাড়িতেই বসবাস করছেন। শীতে ঠান্ডা বাতাস হু হু করে ঢোকে। বর্ষায় জলের ছাট।
অথচ, এই প্রকল্পে টাকা নেই এমন নয়। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১০-১১ আর্থিক বছরেই জঙ্গলের অধিকার পাওয়া অর্থাৎ বন দফতরের জমি পেয়েছেন যে সব উপভোক্তা তাঁদের সেই জমিতে বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার জন্য পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রায় ৬ কোটি টাকা পেয়েছিল ‘হোমস্টেড ইনসেনটিভ ইন্দিরা আবাস যোজনা’ প্রকল্পে। যাতে ১২৩০ জনের বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার কথা। প্রতিটি বাড়ির জন্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা করে। প্রকল্পের এক টাকাও খরচ করতে পারেনি প্রশাসন।
গরিব আদিবাসীরা যেখানে বসবাসের উপযোগী বাড়ি পাচ্ছেন না, বহু কষ্টে দিনযাপন করছেন, সেখানে প্রশাসনের কাছে কোটি কোটি টাকা পড়ে থাকছে। কেন? পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) পাপিয়া ঘোষ রায় চৌধুরীর কথায়, “এটা অনেক আগের টাকা। কেন খরচ হয়নি তা বলা কঠিন। তবে এ বার এই প্রকল্পে বাড়ি তৈরির জন্য পদক্ষেপ করা হচ্ছে। উপভোক্তার তালিকাও চাওয়া হয়েছে। উপভোক্তার তালিকা পাওয়া গেলেই বাড়ি তৈরির কাজ শুরু হয়ে যাবে।”
প্রশ্ন উঠেছে, এত কম টাকায় এখন কি বাড়ি তৈরি সম্ভব? তা যে সম্ভব নয় তা সরকারি নির্দেশিকাতেই প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। কারণ, বর্তমানে এই প্রকল্পে বাড়ি তৈরির জন্য ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। যদিও এই প্রকল্পে এখনও অর্থ পায়নি জেলা। পাবেই বা কী করে? আগের টাকার খরচের হিসাব না দিলে যে নতুন বরাদ্দ মেলে না। তাই পুরনো বরাদ্দ দ্রুত খরচে পদক্ষেপ করছে প্রশাসন। প্রশাসনিক কর্তাদের ব্যাখ্যা, যে সব উপভোক্তা ৪৮ হাজার ৫০০ টাকাতেই বাড়ি তৈরিতে রাজি হবেন, তাঁদেরই এই টাকা দেওয়া হবে। তাতে উপভোক্তারা নিজেদের কিছু টাকা লাগিয়ে ভাল বাড়ি করতে পারবেন। এ ছাড়া তো উপায়ও নেই। কারণ, পুরনো বরাদ্দ না খরচ হলে তো নতুন বরাদ্দ মিলবে না। সে ক্ষেত্রে তাঁরাই বঞ্চিত হবেন। সাধারণ মানুষ অবশ্য এ সব বোঝেন না। মঙ্গল দিগর, সুরেন্দ্র ভক্তাদের কথায়, “যতটা জমি দখলে ছিল ততটাই পাট্টা পাওয়ার কথা। তা তো দেয়নি। উল্টে ২-৩ ডেসিমেল করে পাট্টা দিয়েছে। বাড়ি তৈরিরও টাকা পাইনি। টাকা পড়ে রয়েছে, আর আমাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই!”
বনাধিকার আইনে পুরুষানুক্রমে জঙ্গলের জমি দখল করে বসবাসকারী মানুষকে সে জমির পাট্টা দেওয়ার কথা। তা দেওয়ার ক্ষেত্রেও প্রশাসন গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় গত কয়েক বছরে বন দফতরের জমি পাট্টা চেয়ে আবেদন জানিয়েছিলেন ৫৩ হাজার ৫৪৫ জন ব্যক্তি। তার মধ্যে ৪৩ হাজার ৭৫৯ জনের আবেদন খতিয়ে দেখেছে প্রশাসন। যার মধ্যে ৩৬ হাজার ৩৫২ জনেরই আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের যুক্তি, যাঁরা পাট্টা পাওয়ার উপযুক্ত নথি দেখাতে পারেননি তাঁদেরই আবেদন বাতিল করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৭৩৬৪ জনের আবেদন গ্রাহ্য হয়েছে। তাঁদের অবশ্য পাট্টা দেওয়া হয়েছে। পাট্টা দেওয়া জমির পরিমাণ ১৬২৫ একর।
গোটা ঘটনায় বেজায় ক্ষুব্ধ আদিবাসী বনবাসী অধিকার মঞ্চের নেত্রী ঝর্না আচার্য। তাঁর কথায়, “গরিব বনবাসীদের জন্য ভাবার কেউ নেই! বারেবারে আবেদন জানিয়েও পাট্টা মিলছে না। পাট্টা দিলেও অতি সামান্য জমি পাট্টা দেওয়া হচ্ছে। পাট্টা প্রাপকদের বাড়ি করার টাকা পড়ে থাকলেও তা দেওয়া হচ্ছে না। এটা কী উন্নয়ন!” প্রশাসনিক কর্তাদের কাছে অবশ্য এর উত্তর মেলেনি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.