অজিত ওয়াড়েকরদের ঐতিহাসিক সিরিজের প্রস্তুতি শিবিরে ছিলেন নেট বোলার, সচিন তেন্ডুলকরের গুরু রমাকান্ত আচরেকর তাঁকেই প্রথম ক্রিকেটের পাঠ পড়াবেন বলে ঠিক করেছিলেন। সেই মুম্বইয়ের সুরেশ শাস্ত্রীর ঠিকানা এখন ইডেন। লক্ষ্মী-মুরলীদের রঞ্জি যুদ্ধে তিনিও সামিল। তবে আম্পায়ারের ভূমিকায়।
১৯৭১-এ ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে ঐতিহাসিক সিরিজের প্রস্তুতি শিবিরে নেট বোলারদের নাম মনে করা বিষেন সিংহ বেদীর পক্ষে এখন অসম্ভব। তবু যখন শুনলেন তাঁদের একজন এখন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে দেশের একমাত্র ‘সেঞ্চুরিয়ন’ আম্পায়ার, তখন বেশ অবাক হয়ে গেলেন। বিস্মিত বেদী ফোনে বললেন, “নেট বোলার। সে টেস্ট আম্পায়ার! বেশ ইন্টারেস্টিং।”
একমাত্র সেঞ্চুরিয়ন কেন? কারণ, আর কোনও ভারতীয় একশো বা তার বেশি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ম্যাচে আম্পায়ারের ভূমিকা পালন করেননি। ইডেনে ১০১তম ম্যাচ সুরেশের।
ওয়াডেকররা সে বার ইংল্যান্ড সফরে যাওয়ার আগে ডেকে নেন মুম্বইয়ের এক স্কুল ছাত্রকে। তখন তাঁর বয়স ১৫। “কিংবদন্তি স্পিন-ত্রয়ীর সঙ্গে একই নেটে বল করাটা ছিল স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো। সুযোগটা পেয়ে বেশ অবাক লেগেছিল”, বৃহস্পতিবার ইডেনে দায়িত্ব পালন করে হোটেলে নিজের ঘরে ফিরে বলছিলেন ৫৮ বছর বয়সি সুরেশ, “তবে যে ভাবে প্রথম রঞ্জি ম্যাচ খেলেছিলাম, তা আরও অবাক করার মতো।”
মাত্র ১৬ বছর বয়সে জন্মভূমি রাজস্থানের হয়ে প্রথম রঞ্জি ম্যাচে নামার গল্পটা বলছিলেন সুরেশ। জরুরি তলব পেয়ে মধ্যপ্রদেশের এক প্রত্যন্ত গ্রাম বীরসিংহপুর স্টেশনে গিয়ে পড়েন মধ্যরাতে। ডিসেম্বরের কনকনে শীত। ফাঁকা স্টেশনে ওভার কোট ও টুপি পরা যে ভদ্রলোক তাঁর অপেক্ষায় ছিলেন, তিনি অধিনায়ক হনুমন্ত সিংহ। |
সুরেশ শাস্ত্রী: ভারতের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ন। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস। |
পরবর্তীকালে কপিল দেবের বিশ্বজয়ী দলের ম্যানেজার। “সেলিম দুরানি, সঞ্জয় জাগদালেরাও ছিলেন সেই টিমে। আসলে দলের কয়েকজন ক্রিকেটার পথ ভুলে অন্য কোথাও চলে যাওয়ায় আমার ডাক পড়ে। ওটা ছিল আমার ‘ম্যান্ডেটরি ডেবিউ’। টস করতে যাওয়ার সময় আমরা ঠিক ১১জনই ছিলাম।” তার পর থেকে ১৯৮৭ পর্যন্ত রাজস্থান দলের নিয়মিত সদস্য এই বাঁহাতি স্পিনার।
যখন ক্লাস সিক্সে পড়তেন, তখন মুম্বইয়ের পুরুষোত্তম শিল্ডে তাঁকে ইন্ডিয়া জিমখানার হয়ে খেলতে দেখেন রমাকান্ত আচরেকর। সচিনের গুরু তখনও কোচিং শুরু করেননি। ছিলেন সুরেশের বিপক্ষ টিম নিউ হিন্দ স্পোর্টিং ক্লাবে। “ম্যাচেই আমাকে দেখে পছন্দ হয়ে যায় ওঁর। স্কুলে গিয়ে প্রিন্সিপালকে আমায় কোচিং দেওয়ার প্রস্তাব দেন। সেই প্রথম উনি কাউকে ছাত্র হিসেবে নিলেন। তার পর তো রমাকান্তজি ইতিহাসের সৃষ্টি করেন,” বলছিলেন সুরেশ।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৫৩ ম্যাচে ৯৬৮ রান ও ১৫৫ উইকেট। ১৯৮৭-তে ইডেনে বাংলার বিরুদ্ধে শেষ রঞ্জি ম্যাচ খেলে অবসর নেন। তিন বছর পর আম্পায়ারিংয়ে আসা ক্রিকেটে থাকার ইচ্ছা নিয়ে। তাঁর মতে, “ক্রিকেট ছেড়ে থাকতে ভাল লাগছিল না। তাই আম্পায়ারিংয়ে আসা।” ২৩ বছরের আম্পায়ার জীবনে ভারত-পাক সহ ১৯টি ওয়ান ডে ও দু’টি শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ টেস্ট খেলিয়েছেন। ২০০৬ থেকে ২০০৯ ছিলেন আইসিসি-র আম্পায়ারদের প্যানেলে।
স্মৃতি রোমন্থন শেষ করে বললেন, “দেখতে দেখতে যে ২৩ বছর পেরিয়ে গিয়েছে, বুঝতেই পারিনি। কেরল-হায়দরাবাদ ম্যাচ দিয়ে প্রথম শ্রেণির আম্পায়ারিং শুরু। আবার সেই দুই দলের ম্যাচই শততম। এটা দারুণ ব্যাপার। আগের চেয়ে আম্পায়ারিং আরও উপভোগ করি আধুনিক প্রযুক্তি এসে যাওয়ায়। এতে নিজেকে উন্নত করার আরও সুযোগ পাই। এটাই এখন সবচেয়ে বড় পাওয়া।” |