দিনেদুপুরে গণধর্ষণ, প্রশ্নের মুখে শহরের নিরাপত্তা
কাজের দিনে মেদিনীপুর আদালত চত্বর ও তার আশপাশে ভিড় থাকেই। আদালতে বহু লোকের আনাগোনে তো আছেই। সেই সঙ্গে আশপাশে অনেক দোকান। সেখানে লোকজনের আসা-যাওয়া চলতে থাকে। অদূরে বেসরকারি স্কুল, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ। বাসযাত্রী প্রতীক্ষালয়ও রয়েছে।
সদর শহরের এমন ব্যস্ত এলাকা থেকে দুপুর বেলায় এক মহিলাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটল কী করে, সেই প্রশ্ন ভাবাচ্ছে মেদিনীপুরবাসীকে। শহরের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন বিভিন্ন মহল। মেদিনীপুর শহরে মাঝেমধ্যে চুরি-ছিনতাই হয়। খুনের ঘটনার নজিরও রয়েছে। তবে গণধর্ষণ সাম্প্রতিক অতীতে ঘটেনি। তা-ও আবার প্রকাশ্য দিবালোকে কোর্টের সামনে থেকে তরুণীকে তুলে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ।
পুলিশের অবশ্য বক্তব্য, উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। শহরে নজরদারি থাকে। প্রয়োজনে নজরদারি আরও বাড়ানো হবে। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “অভিযোগের পরই তদন্ত শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে।”
ব্যস্ত এই এলাকা থেকেই তরুণীকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ।
তবে পুলিশের এই বক্তব্যে উদ্বেগ চাপা থাকছে না। মেদিনীপুর শহরের কাউন্সিলর কৌস্তভ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “শহরের বুকে শেষ কবে এমন ঘটনা ঘটেছে, মনে পড়ছে না। মেদিনীপুর শহরে মাঝেমধ্যে চুরি- ছিনতাই হয়। তবে অপহরণ কিংবা অপহরণ করে শহর সংলগ্ন এলাকায় নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণের মতো সাম্প্রতিক অতীতে ঘটেনি।” তিনি বলেন, “পুলিশের উচিত, দ্রুত সব অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা। কড়া হাতে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা। না হলে দুষ্কৃতীরা উৎসাহিত হবে।” শহরে নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন মেদিনীপুর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মলয় রায়ও। তাঁর কথায়, “শহরের মধ্যে এমন ঘটনা ঘটলে বাসিন্দাদের উদ্বিগ্ন হওয়া স্বাভাবিক। পুলিশ উপযুক্ত পদক্ষেপ না করলে দুষ্কৃতীরা প্রশ্রয় পাবে। প্রয়োজনে শহরে নজরদারি আরও বাড়াতে হবে। যাতে শহরবাসী নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত না হন।”
রেলশহর খড়্গপুরে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এক স্কুলছাত্রী এ ঘটনার শিকার হন। অভিযোগের পর অবশ্য তৎপরতার সঙ্গে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। একে একে সব অভিযুক্ত ধরা পড়ে। ইতিমধ্যে তাদের সাজাও হয়েছে। মেদিনীপুরের ঘটনাতেও পুলিশের একই রকম তৎপরতা চাইছেন শহরবাসী। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, অভিযোগটি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশ সূত্রে খবর, তদন্তের উপর নজর রেখেছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ নিজেই।
ধৃত মঙ্গল দাস।
—নিজস্ব চিত্র।
প্রকাশ্য দিবালোকে চুরি- ছিনতাইয়ের ঘটনা অবশ্য মেদিনীপুর শহরে নতুন নয়। গেল নভেম্বরেই যেমন শহরের রবীন্দ্রনগর এলাকায় এমন এক ঘটনা ঘটে। বাড়ি ফেরার পথে এক মহিলার হার ছিনতাই হয়। ওই মহিলা যখন বাড়ি ফিরছিলেন, তখন মোটর বাইকে এক যুবক তাঁর পিছু নেয়। রবীন্দ্রনগরের কাছে এসে ওই যুবক গৃহবধূর গলার হার ছিনিয়ে নেয়। পরে অন্যত্র চম্পট দেয়। আগে বিধাননগর, শরৎপল্লি এলাকাতেও এমন ঘটনা ঘটেছে। কখনও সখনও শ্লীলতাহানির মতো অভিযোগ ওঠে। গত ডিসেম্বরে যেমন মেদিনীপুর কলেজ ক্যাম্পাসে এক ছাত্রীকে শ্লীলতাহানি করার চেষ্টার অভিযোগ ঘিরে শোরগোল পড়ে। ওই ছাত্রীই লিখিত ভাবে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে এই অভিযোগ জানান। অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত ছাত্রদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেন কর্তৃপক্ষ। অভিযুক্তদের সতর্ক করে দেওয়া হয়। ২০১২ সালের মে মাসে এক স্কুলছাত্রের রহস্যমৃত্যু হয়। বরিশাল কলোনী এলাকার বাড়িতে ঢুকে ওই ছাত্রকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করে পালিয়ে যায় দুস্কৃতীরা। ঘটনার পর পুলিশ কুকুর এনে তদন্ত হয়। রহস্যমৃত্যুর কিনারা অবশ্য এখনও হয়নি। তবে, মেদিনীপুর শহর থেকে মহিলাকে অপহরণ করে গণধর্ষণের মতো ঘটনার নজির সাম্প্রতিক অতীতে নেই। তাই নতুন করে উদ্বেগ দেখা দেওয়ার সূত্রপাত এখান থেকেই। হাঁসপুকুর এলাকার বাসিন্দা, গৃহবধূ সোমা পানিগ্রাহী বলছিলেন, “এমন ঘটনার কথা ভাবাই যায় না। শহরের নিরাপত্তার দিকে আরও নজর দেওয়া উচিত।” একই বক্তব্য কলেজ ছাত্রী দিপীকা দে, বৈশাখী দোলুইয়ের। বৈশাখীর কথায়, “এটা জঘন্যতম অপরাধ। দিনে-দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে। এটাই সকলকে বেশি ভাবাবে। অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।”
খড়্গপুরে গণধর্ষণের ঘটনার তদন্ত ‘কম সময়ের’ মধ্যে এগিয়েছে। দ্রুত ঘটনার কিনারা করে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করা গিয়েছে। মেদিনীপুরের ক্ষেত্রে তদন্ত কত দিনে এগোয়, সেটাই দেখার। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক অবশ্য আশ্বস্ত করছেন, “আমরা সব রকম চেষ্টা করব।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.