|
|
|
|
ঘুমন্ত চিতাবাঘ খুনে অবশেষে ‘তত্পর’ পুলিশ, গ্রেফতার ২
নিজস্ব সংবাদদাতা • মালবাজার |
শেষ পর্যন্ত নড়েচড়ে বসল পুলিশ। ডুয়ার্সের ধুপঝোরার গ্রামে পূর্ণ বয়স্ক একটি চিতাবাঘকে কুপিয়ে মারার দায়ে গ্রেফতার করা হল দুই গ্রামবাসীকে। পুলিশ জানায় খোঁজ চলেছে আরও অন্তত চার জনের।
বন কর্তারা মনে করছেন, পুলিশের এই ‘ব্যতিক্রমী উদ্যোগে’ আখেরে লাভ হবে বন্যপ্রাণেরই। জলপাইগুড়ি বন বিভাগের বন্যপ্রাণ (২) ডিএফও সুমিতা ঘটক স্পষ্টই উচ্ছসিত। তিনি বলেন, “এর ফলে গ্রামে চিতাবাঘ, হাতি, হরিণ ঢুকলেই তাকে পিটিয়ে মারার সাহস দেখানোর আগে অন্তত দ্বিতীয়বার ভাববেন গ্রামবাসীরা।” এক পদস্থ বনকর্তার বলেন, “পুলিশের এই তত্পরতা একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।” ধৃতদের বিরুদ্ধে ‘বন্যপ্রাণ সুরক্ষা আইনে’ জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। মালবাজারের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক অরিন্দম সরকার বলেন, “ধৃত দু’জনকে জেরা করে জানার চেষ্টা হচ্ছে ঠিক কী কারণে তারা এমন কাণ্ড ঘটানোর সাহস পেল। অন্য অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে।”
দিন কয়েক আগে গরুমারা জাতীয় উদ্যান থেকে চিতাবাঘটি জয়ন্তী গ্রামে ঢুকে পনেছিল। তাকে উদ্ধার করে বনে ফেরাতে সময় মতোই গ্রামে পৌঁছেছিলেন বন কর্মীরা। ঘুম পাড়ানি গুলি ছুঁড়ে চিতাবাঘটিকে কাবুও করে ফেলেছিলেন তাঁরা। তারপর ঝিমিয়ে আসা বাঘটিতে যখন খাঁচায় ঢোকানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে তখনই জনা কয়েক গ্রামবাসী দা-বল্লম নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন তার উপরে। নিমেষে কুপিয়ে-খুঁচিয়ে মেরে ফেলা হয় অচৈতন্য শ্বাপদটিকে।
ওই ঘটনার পরে নির্বিকার গলাতেই অবশ্য দায় এড়িয়েছিল পুলিশ। তবে স্থানীয় পশুপ্রেমী সংগঠন ও বন দফতরের চাপে শেষ পর্যন্ত নড়েচড়ে বসে তারা। বুধবার রাতে ওই গ্রামে হানা দিয়ে গ্রেফতারও করা হয় বিদেশ ওঁরাও ও দিলীপ রায় নামে দুই অভিযুক্তকে। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে দিলীপই ওই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত। তবে, দিলীপের স্ত্রী রেখাদেবী এ দিন দাবি করেছেন, তাঁর স্বামী ঘটনার সময়ে গ্রামে ছিলেন না।
বৃহস্পতিবার ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায় চিতাবাঘ পিটিয়ে মারার প্রসঙ্গ তুলতেই মুখে কুলুপ আঁটছেন গ্রামবাসীরা। থমথমে গ্রামে নিজের পানের দোকানে বসে জনৈক দোকানি বলেন, “পুলিশ হঠাত্ এত তত্পর হল কেন বলুন তো! এর আগেও তো আশপাশের গ্রামে চিতাবাঘ পিটিয়ে মারার ঘটনা ঘটেছে। তখন তো পুলিশকে এমন নড়েচড়ে বসতে দেখা যায়নি।” ওই এলাকায় যে বন্যপ্রাণ শিকার নতুন নয়, ইঙ্গিত মিলেছে তারও। বন কর্মীদের অনুমান, চিতাবাঘটি মেরে তার লোম, দাঁত, নখ ছিনিয়ে নেওয়ার তালে ছিল গ্রামবাসীদের একাংশ। বমকর্মীদের তত্পরতায় সেটুকু অন্তত হয়নি। গ্রামবাসীদের অনেকেই এ দিন স্বীকার করেছেন, পুলিশি তত্পরতার ফলে ওই এলাকায় অন্তত এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়ানো যাবে। এ ব্যাপারে ওই গ্রামগুলিতে সচেতনতা শিবির করার কথাও বন দফতর ভাবছে বলে জানা গিয়েছে।
বৃহস্পতিবার অবশ্য ক্রান্তির উত্তর খালপাড়া এলাকার ফের চিতাবাঘের হামলার ঘটনা ঘটেছে। চা বাগানে শুকনো লতাপাতার খোঁজে যাওয়া তাপসী রায় নামে এক মহিলাকে আক্রমণ করে চিতাবাঘ। তাঁর হাতে-পায়ে আঁচড়ে দেয় প্রাণীটি। জখম মহিলাকে জলপাইগুড়ি জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
|
পুরনো খবর: চিতাবাঘকে কুপিয়ে মারল গ্রামবাসী, পুলিশ চুপ |
|
|
|
|
|